নাটোরের সিংড়া উপজেলায় দুই স্কুলছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। আজ রোববার চৌগ্রাম ইউনিয়নের হুলহুলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ইমন হোসেন (১৩) ও নিশাত হোসেন (১৩) হুলহুলিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল। ওই দুই ছাত্রের সহপাঠী ও এলাকাবাসী বলছে, ওই দুজন কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করেছে।
ইমন তাজপুর ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের আমিন হোসেন এবং নিশাত হোসেন চৌগ্রাম ইউনিয়নের হুলহুলিয়া গ্রামের মৃত বকুল প্রামাণিকের ছেলে।
সিংড়া থানা, হুলহুলিয়া উচ্চবিদ্যালয় এবং এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ইমন ও নিশাত ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। তারা আজ বেলা পৌনে ১১টার দিকে বিদ্যালয়ের নির্ধারিত পোশাক না পরে বিদ্যালয়ে গিয়ে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করতে চাইলে শিক্ষক ইয়াকুব আলী তাদের প্রধান শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে ক্লাসে ঢুকতে বলেন। প্রধান শিক্ষকের কাছে না গিয়ে তারা বিদ্যালয় থেকে বের হয়ে যায়। এর আগে তারা আত্মহত্যা করবে বলে সহপাঠীদের জানায়। কিন্তু তাদের কথায় কেউ গুরুত্ব দেয়নি। বেলা ১১টার দিকে বিদ্যালয়ে খবর আসে, ওই দুই ছাত্র পাশের একটি পুকুরপাড়ে কীটনাশক পান করে অচেতন অবস্থায় পড়ে রয়েছে। খবর পেয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী তাদের উদ্ধার করে সিংড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। ভর্তির পরপরই ইমনের মৃত্যু হয়। নিশাতকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে নিশাতও মারা যায়।
হুলহুলিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল বারিক বলেন, ‘শুনেছি ইমন ও নিশাত নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে বিদ্যালয়ে এসেছিল। শ্রেণিশিক্ষক তাদের আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছিলেন। তবে তারা আমার সঙ্গে দেখা করেনি।’
বিদ্যালয়ের সহকারী লাইব্রেরিয়ান তৌফিক পরশ বলেন, তিনি জানতে পেরেছেন, ইমন ও নিশাত বিদ্যালয়ে এসে সহপাঠীদের জানায়, তারা দুজন একসঙ্গে আত্মহত্যা করবে। তাদের কথায় কেউ গুরুত্ব দেয়নি। সবাই ভেবেছে তারা মজা করছে। কিছুক্ষণ পর তাদের মৃত্যুর খবর পেয়ে সহপাঠীরা কান্নায় ভেঙে পড়ে।
ইমনের বাবা আমীর আলী বলেন, তাঁর ছেলে এমন কাজ করতে পারে, তা তিনি ভাবতেও পারছেন না। তিনি মৃত্যুর কারণ খুঁজে বের করার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানান।
সিংড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক রাশেদ আলী বলেন, তাদের অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। একজন তাৎক্ষণিক মারা যায়। অন্যজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়ায় পাঠানো হয়েছিল। মৃত্যুর কারণ ময়নাতদন্ত না করে নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে প্রাথমিকভাবে তাঁরা ধারণা করছেন, বিষক্রিয়ায় তাদের মৃত্যু হয়েছে।
আজ বিকেলে সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। একজনের লাশ উদ্ধার করে নাটোর সদর হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। অপরজনের লাশ বগুড়ায় রয়েছে। এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি।