সাড়ে তিন ঘণ্টা সাঁতরে টেকনাফে ১১ রোহিঙ্গা

Slider চট্টগ্রাম

b50fcaf40bf90ca346e1771936d144e5-59ded0c9007ae

 

 

 

 

মোহাম্মদ রিয়াজের (১৩) বাড়ি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বুচিডং শহরের পুইমালি গ্রামে। পুইমালিসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রাম গত ঈদুল আজহার পর থেকেই অবরুদ্ধ করে রাখে সেনাবাহিনী। এক সপ্তাহ আগে সেনাসদস্যরা গ্রামে ঢুকে রিয়াজের বাবাসহ অনেককে আটক করে পাহাড়ের পাদদেশে নিয়ে যায়। সেখানে বিনা খাবারে চার দিন বেঁধে রেখে নির্যাতন করা হয়। পরিবার নিয়ে গ্রাম ছেড়ে পালানোর শর্ত দিয়ে পাঁচ দিনের মাথায় তাঁদের ছেড়ে দেয়।

রিয়াজের পরিবার রাতের আঁধারে প্যারাবনের ভেতর দিয়ে কোনোক্রমে মংডুর ফাতংজা গ্রামে পৌঁছায়। এসে দেখতে পায়, আগে থেকেই সেখানে জড়ো হয়েছে তিন হাজারের মতো রোহিঙ্গা। খাবারের অভাবে হাহাকার চলছে। আবার নৌকা না পেয়ে বাংলাদেশে পাড়ি দিতে পারছে না। এ অবস্থায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী সাঁতরে বাংলাদেশে আসার সিদ্ধান্ত নেয় রিয়াজ।

কিশোর রিয়াজ বলে, ‘আমি গতকাল বুধবার সকাল ৭টার সময় শরীরের সঙ্গে তেলের জারিকেন বেঁধে সাঁতার কাটা শুরু করি। বহু কষ্টে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ জেটির কাছাকাছি চলে আসি। তখন কোস্টগার্ড সদস্যরা আমাকে উদ্ধার করে।’

প্রায় ২ কিলোমিটার সাঁতরে মিয়ানমার থেকে রিয়াজসহ ১১ জন রোহিঙ্গা কিশোর ও তরুণ গতকাল একই সঙ্গে টেকনাফে পৌঁছায়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ জেটিসংলগ্ন নাফ নদী থেকে তাদের উদ্ধার করে কোস্টগার্ড।

অন্য ১০ জন হলেন বুচিডংয়ের পেরাংপুরুর কামাল হোসেন (২৭), আনছার উল্লাহ (১৫), সিং ডংয়ের ফয়েজ উল্লাহ (১৭), ইসমাইলপাড়ার হামিদ হোসেন (১৭), হামজ্জাপাড়ার সৈয়দ হোসেন (৩০), তেরংপাড়ার আবদুল মতলব (৩০), হাইরমোরা পাড়ার মোহাম্মদ উল্লাহ (২৬), হাজুরীপাড়ার মোহাম্মদ আলম (১৮), পুইমালির ইমাম হোসেন (১৮) ও রমজান আলী (৩০)।

উদ্ধার হওয়া কামাল হোসেনের গ্রামে সেনাবাহিনী হানা দেয় ঈদুল আজহার ১৩ দিন পর। এ সময় কামালের পঙ্গু বাবাসহ অনেকে বাড়িতে ছিলেন। সেনাসদস্যরা সবাইকে ঘরের ভেতরে রেখে তালা মেরে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনে পুড়ে সবাই মারা যান। কামাল কর্মসূত্রে মংডু শহরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।

কোস্টগার্ডের শাহপরীর দ্বীপ স্টেশন কমান্ডার লে জাফর ইমাম সজীব বলেন, উদ্ধার হওয়া ১১ রোহিঙ্গাকে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়। বিজিবি প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে গতকাল দুপুরে তাদের সেনাবাহিনীর মাধ্যমে অস্থায়ী ক্যাম্পে পাঠিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *