শততম ম্যাচের অপেক্ষায়…

Slider খেলা

76165287448f3404a73293cb288f186a-59dde17cd5539

 

 

 

 

ক্যারিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচটি খেলেছিলেন ২০০৩ এশিয়া কাপে। মালয়েশিয়ায় পাকিস্তানের বিপক্ষে। সেই পাকিস্তানের বিপক্ষেই আরেকটি এশিয়া কাপে আজ খেলতে নামবেন নিজের শততম ম্যাচ। রাসেল মাহমুদ জিমি এখন দাঁড়িয়ে ইতিহাসের দোরগোড়ায়।

অথচ জিমি কিনা এটা জানতেনই না! জানার পর তাই তাঁর চোখে-মুখে বিস্ময়, ‘তাই নাকি! শততম ম্যাচ! কে খেলবে, আমি? এটা তো জানিই না!’
বাংলাদেশের হকি ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। জাতীয় দলের হয়ে খেলছেন প্রায় চৌদ্দ বছর। এশিয়া কাপ, এশিয়ান গেমস, এএইচএফ কাপ, এসএ গেমসসহ অন্যান্য টুর্নামেন্ট মিলিয়ে ৯৯টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ফেলেছেন। বাংলাদেশের হকিতে এর আগে এত বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেননি আর কেউ। শততম ম্যাচে খেলতে নামবেন অধিনায়কত্বের বাহুবন্ধনী পরে। ব্যাপারটা ভাবতেই রোমাঞ্চ ছুঁয়ে গেল তাঁকে, ‘আমি ভীষণ রোমাঞ্চিত। শততম ম্যাচটিতে আমি অধিনায়ক, এর চেয়ে আনন্দের কিছু হতে পারে না।’
আন্তর্জাতিক হকিতে জিমির অভিষেকটা ছিল দুঃস্বপ্নের মতো। পাকিস্তানের বিপক্ষে সেই ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছিল ৮-০ গোলে। বাংলাদেশের জন্য চরম হতাশার সেই টুর্নামেন্ট। ভারতের কাছে ১০-০, চীনের কাছে ৮-০, মালয়েশিয়ার কাছে ৫-০ এবং হংকংয়ের কাছে ৪-৩ গোলে হেরে আট দলের মধ্যে হতে হয়েছিল অষ্টম।
এরপর মেঘে মেঘে অনেক বেলা গড়িয়েছে। শততম ম্যাচের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে তিনবারের এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানকে হারানোরও স্বপ্ন দেখেন জাতীয় দলের স্ট্রাইকার, ‘সবারই আশা থাকে এমন ম্যাচে কিছু একটা করে দেখানোর। যেহেতু মঞ্চটা তৈরি, আমিও শতভাগ উজাড় করে দিয়ে খেলতে চাই। জয় দিয়ে শুরু করতে পারলে এটা আমার জন্য স্মৃতিময় ম্যাচ হয়ে থাকবে।’
হকিটা জিমির রক্তে। বাবা আবদুর রাজ্জাক জাতীয় দলের সাবেক খেলোয়াড়। সোনা মিয়া নামেই যাঁকে বেশি চেনে বাংলাদেশের হকি। জাতীয় দলে জিমির অভিষেকের সময় বাংলাদেশ দলের কোচও তাঁর বাবা। ছোটবেলায় ফুটবলার হওয়ার একটা স্বপ্ন ছিল। যদিও বিকেএসপিতে ভর্তি হলেন হকিতেই। জাতীয় দলে প্রথম ডাক পাওয়াও ওই সময়েই, ‘আমি তখন বিকেএসপিতে পড়ি। আজাদ স্পোর্টিংয়ের খেলোয়াড় হয়েও ক্লাব কাপের ফাইনালে কর্মকর্তাদের অনুরোধে আবাহনীর হয়ে খেলেছিলাম। ওই ম্যাচে মোহামেডানের কাছে আবাহনী ১-০ গোলে হেরেছিল। কিন্তু আমার খেলা দেখে সবাই মুগ্ধ হয়েছিল। এরপরই লিগে বড় ক্লাবগুলোতে খেলার প্রস্তাব পাই। ওই বছরই ঘরোয়া হকিতে আমার পারফরম্যান্স দেখে নির্বাচকেরা জাতীয় দলে সুযোগ দেন।’
এতগুলো ম্যাচের মধ্যে স্মরণীয় হয়ে আছে কোনটি? নির্দিষ্ট কোনো ম্যাচকে সেরার ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখতে চাইলেন না জিমি, ‘স্মরণীয় ম্যাচ বেশ কটি। ২০০৭ এশিয়া কাপে তিনটি ম্যাচে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছিলাম। ওই তিনটি ম্যাচই আমার কাছে সেরা। এরপর ভারতে ওয়ার্ল্ড লিগেও চীনের সঙ্গে খুব ভালো খেলেছিলাম। স্মরণীয় ম্যাচের মধ্যে এটিও থাকবে।’
জিমির জন্য সত্যিই অন্য রকম ছিল ২০০৭ এশিয়া কাপ। ভারতের চেন্নাইয়ে ওই টুর্নামেন্টে ১১ দলের মধ্যে বাংলাদেশ সপ্তম হয়েছিল। জিতেছিল তিনটি ম্যাচ। তিনটিতেই ম্যাচ-সেরা জিমি। থাইল্যান্ডের বিপক্ষে ১৩-০ গোলের জয়ে জিমি করেছিলেন ৪ গোল। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩-২ গোলের জয়ে এক গোল। আর হংকংয়ের বিপক্ষে করেছিলেন দুই গোল, যেটিতে বাংলাদেশ জেতে ৩-১ গোলে।
অনেক ভালো লাগা স্মৃতির মধ্যে কাঁটা হয়ে আছে ২০১৩ এশিয়া কাপে ওমানের বিপক্ষে হারটা, ‘অনেক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ওমানের কাছে হেরেছি। সর্বশেষ এশিয়া কাপে ওদের কাছে হেরেই ছয় নম্বর হতে পারিনি। ওই ম্যাচে আমার পারফরম্যান্স নিয়ে পরে অনেকেই সমালোচনা করেছিলেন। আমিসহ আরও কয়েকজন খেলোয়াড় নিষিদ্ধ হয়েছিলাম। সেসব কথা মনে হলে এখনো কষ্ট লাগে।’
সাফল্য যেমন আছে, তেমনি আছে বিতর্কও। জিমির ক্যারিয়ারজুড়েই বিতর্ক যেন ছায়াসঙ্গী। এই এশিয়া কাপের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যাওয়ার সময়ও জিমিকে দলে রাখেনি ফেডারেশন। তবে অনেক নাটকীয়তার পর দলে তো ঢুকেছেনই, ফিরে পেয়েছেন অধিনায়কত্বও। এমন বড় একটা টুর্নামেন্টে খেলতে নামার আগে সেসব নিয়ে আর ভাবতে চান না জিমি, ‘এগুলো নিয়ে কখনো চিন্তা করি না। নিজের পারফরম্যান্স নিয়েই ভাবি। যত দিন পারফরম্যান্স থাকবে, খেলতে পারব। যেদিন থাকবে না, সেদিন নিজে থেকেই চলে যাব।’
জিমির স্টিকে এখনো যে কারুকাজ, তাতে সেই দিনটি আসতে অনেক দেরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *