দর্শকের প্রথম প্রত্যাশা একটি সুন্দর গল্প

Slider বিনোদন ও মিডিয়া

02c989790c547b7068ddb1727d242fba-59d71aa427910

 

 

 

 

গানের অনুষ্ঠান দিয়ে শুরু করা যাক। গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাত ১১টায় পারিহার উপস্থাপনায় বৈশাখী টিভিতে প্রচারিত হলো সরাসরি গানের অনুষ্ঠান ‘সময় কাটুক গানে গানে’। অনুষ্ঠানে এবারের শিল্পী ছিলেন বাদশা বুলবুল ও দেবলীনা সুর। নবমী পূজার রাতে অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হওয়ায় শিল্পীদ্বয় অনুষ্ঠান শুরু করেছেন পূজার গান দিয়ে।

এরপর পালাক্রমে তাঁরা দুজন প্রায় দুই ঘণ্টা গান শুনিয়েছেন। বাদশা বুলবুল গানের জগতে পরিচিত একটি নাম। তিনি মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন চ্যানেলে সরাসরি প্রচারিত গানের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। এ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শিল্পীর জনপ্রিয় গান করেছেন তিনি, সে তুলনায় বরং নিজের গানই করেছেন কম। শুরুর দিকে মান্না দে ও কিশোর কুমারের জনপ্রিয় বেশ কটি গান করেন। যেমন মান্নার গাওয়া ‘আমায় একটু জায়গা দাও’, ‘ললিতা গো ওকে আজ চলে যেতে বল না’; কিশোর কুমারের ‘আমার পূজার ফুল’ ইত্যাদি। তাঁর কণ্ঠ ও সুরজ্ঞান প্রশংসনীয়। তবে পরিবেশনার ক্ষেত্রে মান্না দে ও কিশোর কুমারের স্টাইলটি অনুসরণ করতে গিয়ে কখনো কখনো যেন কিছুটা কৃত্রিম মনে হয়েছে। আর প্রথম গান ‘আমায় একটু জায়গা দাও’-এ ‘অনাহূত’ শব্দটি তিনি বারবার উচ্চারণ করেছেন ‘অনাহত’, তাঁর কাছে এমন ত্রুটি বা অসতর্কতা দর্শক আশা করে না।

অন্যদিকে শিল্পী দেবলীনা সুরও পরিবেশন করেছেন অধিকাংশই অন্যের জনপ্রিয় গান। তিনি শুরু করেছেন ‘যেখানে সে দয়াল আমার বসে আছে সিংহাসনে’ দিয়ে, তারপর একে একে পরিবেশন করেছেন ‘মধুমালতী ডাকে আয়’, ‘তোমায় হৃদ মাঝারে রাখব ছেড়ে দেব না’ ইত্যাদি। তাঁর কণ্ঠ মিষ্টি, কিন্তু সব গানে সুরের সব বাঁকগুলো যেন স্পর্শ করতে পারছিল না। আর উচ্চারণেও কিছুটা ত্রুটি লক্ষ করা গেছে। যেমন, ‘রাকব’, ‘ছেরে’ ইত্যাদি। তিনি গান পরিবেশনার পাশাপাশি গানের অনুষ্ঠান উপস্থাপনাও করেন, কাজেই এসব ক্ষেত্রে তাঁর আরও অধিক সতর্কতা দর্শক প্রত্যাশা করে।

পারিহার উপস্থাপনার আন্তরিকতা আমরা আগেও প্রশংসা করেছি, এবারও প্রশংসা করছি। সেই সঙ্গে এটি যেন একঘেয়েমিতে পর্যবসিত না হয়, ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে তাঁর সতর্কতা আশা করছি।

এবার আসি টেলিছবি ও নাটক প্রসঙ্গে। ২৯ সেপ্টেম্বর বেলা তিনটায় হিমু আকরামের পরিচালনায় চ্যানেল আইতে প্রচারিত হলো টেলিছবি কঙ্কাবতীর চিঠি

টেলিছবিটির কাহিনি সংক্ষেপে এ রকম, প্রতারণাই নেশাখোর আফরান নিশোর পেশা। তিনি সুন্দর চিঠির মাধ্যমে প্রেমের ফাঁদ পেতে মেয়েদের সঙ্গে প্রতারণা করেন। বুলা নামের একটি সরল-সহজ মেয়ে পা দেয় তাঁর এ প্রেমের প্রতারণার ফাঁদে। একপর্যায়ে নিশো জানান, তাঁর বাবার জরুরি বাইপাস অপারেশনের জন্য তিন লাখ টাকা দরকার। বুলা মায়ের অপারেশনের জন্য রাখা টাকা থেকে দুই লাখ টাকা ধার দেয় নিশোকে। কথা হয়, দুদিন পর ব্যাংক খুললেই নিশো টাকাটা দিয়ে দেবেন বুলাকে। এরপর লাপাত্তা হয়ে যান নিশো। বুলা কী করবে, কোনো কূলকিনারা পায় না। শেষে বান্ধবী রুপার দেখানো পথে পা বাড়ায় বুলা। অন্যের সাহচর্যে রাত কাটিয়ে ব্যাগভর্তি টাকা নিয়ে ঘরে ফেরে।

এককথায় বলা যায়, টেলিছবিটির কাহিনিতে যথেষ্ট বাস্তবতা আছে। আজকাল মুঠোফোন, ফেসবুক, ইন্টারনেটের কারণে প্রেম যেমন হয়েছে ঠুনকো ও সস্তা, তেমনি বেড়ে গেছে প্রেমের নামে প্রতারণা। তবে কঙ্কাবতীর চিঠি টেলিছবিটিতে প্রেম ও প্রতারণার যে ফাঁদটি দেখানো হয়েছে, তা বর্তমান যুগের সঙ্গে ঠিক সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হয়নি। আর বুলার মতো একটি আদর্শ মেয়ের এত তাড়াতাড়ি বিপথে পা বাড়ানোর ব্যাপারটিও কিছুটা সাজানো মনে হয়েছে। তবে অভিনয়, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা পরিচ্ছন্ন ও আকর্ষণীয় ছিল বলা যায়।

২৮ সেপ্টেম্বর রাত ৮টা ১৫ মিনিটে প্রবীর রায় চৌধুরীর রচনা ও পরিচালনায় আরটিভিতে প্রচারিত হলো সাপ্তাহিক নাটক সমাপ্ত গল্পের অসমাপ্ত অধ্যায়

নাটকের গল্পটি সংক্ষেপে এ রকম, আফরান নিশো ও শবনম ফারিয়া প্রেমিকযুগল। রেস্টুরেন্টে হঠাৎ একদিন শবনমের সামনেই একটি মেয়ে নিশোকে ঘনিষ্ঠভাবে সম্বোধন করে, হাত ধরে, দেখে শবনম রাগ করে বেরিয়ে যান। তারপর মেয়েটি শবনমকে ফোন করে ফেসবুকে নিশোর সঙ্গে তার মেলামেশার ঘনিষ্ঠ ছবিও পাঠায়। নিশো বলেন, এটা ফেক, ষড়যন্ত্র। কিন্তু সেটা প্রমাণ করতে পারেন না তিনি। এরপর শবনমের অন্যত্র বিয়ে হতে যায় আর নিশোর বদলি হয় চট্টগ্রামে। এরপর শবনমের বান্ধবীর কথায় অস্থির নিশো স্টেশন থেকে দৌড়ে আসেন বিয়ের আসরের জন্য প্রস্তুত শবনমের কাছে। তারপর শবনম জানান, এসব তাঁরই সাজানো। নিশো বলেন, তাঁকে কখনো ক্ষমা করবেন না। তারপর বেরিয়ে এসে রাস্তায় টোকাই দিয়ে প্ল্যাকার্ড দেখান ‘উইল ইউ বি মাইন’। আর সঙ্গে সঙ্গে শবনম ঘর থেকে ছুটতে ছুটতে এসে নিশোর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

এককথায় বলা যায়, নাটকের গল্পটি অত্যন্ত দুর্বল ও সামঞ্জস্যহীন। ঘটনার সঙ্গে সংলাপের কোনো মিল নেই, কোনো যৌক্তিকতা নেই, যে কারণে গল্পের কোনো বিশ্বাসযোগ্যতাও নেই। নাট্যকার ও নির্মাতাকে বুঝতে হবে, টিভি নাটকে দর্শকের প্রথম প্রত্যাশা, একটি সুন্দর গল্প, যা এ নাটকে অনুপস্থিত। মাঝে আবহ সংগীত হিসেবে গানটির ব্যবহার ভালো হয়েছে। তবে সেটিও দীর্ঘ সময় ধরে শোনানোয় দর্শকের নাটকের কথা প্রায় ভুলে যাওয়ার অবস্থা। নাটকের নামকরণটি আরও অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও অতিনাটকীয়। শুধু ‘অসমাপ্ত অধ্যায়’ দিলেও হয়তো কিছুটা সামঞ্জস্যপূর্ণ হতো। কিন্তু ‘সমাপ্ত গল্পের’ বলে কী বোঝানো হয়েছে, কিছুই বোঝা গেল না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *