রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য ১৩০০ শিক্ষাকেন্দ্র করবে ইউনিসেফ

Slider টপ নিউজ

রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য ১৩০০ শিক্ষাকেন্দ্র করবে ইউনিসেফ

মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষাদানে ১ হাজার ৩০০টির বেশি শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছে জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। অন্যদিকে  ইন্টারন্যাশনাল কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ (আইসিজি) জানিয়েছে, রোহিঙ্গা শিবিরে কলেরা ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে সংস্থাটির নিজস্ব মজুদ থেকে নয় লাখ টিকা দেয়া হবে।

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির ও অস্থায়ী বসতিগুলোয় বর্তমানে মোট ১৮২টি শিক্ষাকেন্দ্র পরিচালনা করছে ইউনিসেফ। এসব শিক্ষাকেন্দ্রে লেখাপড়া করছে মোট ১৫ হাজার রোহিঙ্গা শিশু। নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী বছরের মধ্যে রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য পরিচালিত মোট শিক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ৫০০টিতে উন্নীত করবে ইউনিসেফ। এসব শিক্ষাকেন্দ্রে মোট দুই লাখ রোহিঙ্গা শিশুকে লেখাপড়া শেখানোর পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থাটির।

এ বিষয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউনিসেফ প্রতিনিধি এডওয়ার্ড বেইগবিডার বলেন, চলমান সংকটে অনেক দুর্ভোগ পার করে আসা এসব শিশুর জন্য নিরাপদ ও সুষ্ঠু বিকাশের মতো পরিবেশে শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি। শুধু তাদের দরকারি স্বাভাবিক প্রেক্ষাপট তৈরি নয়, বরং একই সঙ্গে সুষ্ঠু ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার সুযোগ দেয়ার জন্যই এটি এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।

শিক্ষাকেন্দ্রগুলোয় চার-ছয় বছর বয়সী শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক এবং ৬-১৪ বছর বয়সীদের জন্য মৌলিক অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দেয়া হবে। প্রতিটি শিক্ষাকেন্দ্রে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করা হবে শিফটের ভিত্তিতে, যেখানে প্রতি শিফটে ৩৫ জন করে শিশুকে শিক্ষা দেয়া হবে।

এসব শিক্ষাকেন্দ্রে শিশুদের ইংরেজি, গণিত, বার্মিজ, বিজ্ঞান, কলা ও সংগীত শিক্ষা দেয়া হবে। এছাড়া তাদের মানসিক কাউন্সেলিংয়ের পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং জীবনের সংকটময় মুহূর্তের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়া ও ইতিবাচক মানসিকতা বজায় রাখার দিকগুলো সম্পর্কেও জ্ঞান দেয়া হবে।

এদিকে আইসিজির নিজস্ব ওয়েবসাইটে জানানো হয়, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা ও তাদের আশ্রয়দাতা জনগোষ্ঠীর মধ্যে দেখা দেয়া কলেরা মহামারীর ঝুঁকি প্রতিরোধে নয় লাখ ডোজ টিকা বিতরণ করা হবে। নিজস্ব মজুদ থেকে এসব ওরাল কলেরা ভ্যাকসিন (ওসিভি) বিতরণ করবে আইসিজি।

এর আগে গত সপ্তাহে বুধবার বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আইসিজির কাছে এসব টিকার জন্য আবেদন জানানো হয়। এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), ইউনিসেফ, মেডিসিনস স্যান ফ্রন্টিয়ার্স (এমএসএফ) ও আন্তর্জাতিক রেড ক্রসকে সঙ্গে নিয়ে গঠিত এক যৌথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এসব টিকা ছাড়করণের অনুমোদন দিয়ে দেয়া হয়।

আইসিজির অংশীদার সংস্থাগুলো জিএভিআই— দ্য ভ্যাক্সিন অ্যালায়েন্সের সহযোগিতায় দুই সপ্তাহের মধ্যে এসব ওসিভি বিতরণ করবে। এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘প্রতিরোধযোগ্য কলেরা মহামারী এড়ানোয় এটি একটি পূর্বসতর্কতামূলক পদক্ষেপ। জরুরি অনুরোধে দ্রুত সাড়া দিয়ে আমাদের অংশীদারদের এ সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসার উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। বর্তমানে আমরা এসব টিকা গ্রহণ ও ব্যবহারের অপেক্ষায় রয়েছি।’

গত ২৫ আগস্ট সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অত্যাচার থেকে পালিয়ে পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এদের অর্ধেকই শিশু। অঝোর বর্ষণের কারণে বিভিন্ন শিবির ও অস্থায়ী বসতিতে গাদাগাদি করে বসবাসরত এসব রোহিঙ্গার জন্য সুপেয় পানি ও নিরাপদ স্যানিটারি ব্যবস্থা স্থাপন করা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে নানা স্বাস্থ্য সংকট দেখা দেয়ার পাশাপাশি কলেরার মতো পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশে ডব্লিউএইচওর প্রতিনিধি ডা. নবরত্নস্বামী পারানিয়েথরন বলেন, মহামারীর প্রাদুর্ভাব ঠেকানোর উদ্দেশ্যে আমরা আগে থেকে সরবরাহ নিয়ে প্রস্তুত থাকার পাশাপাশি ব্যাধি পরিস্থিতি ও পানির মান পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যেতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে নাজুক পরিস্থিতিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে কলেরা থেকে নিরাপদ রাখা যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *