ইলিশে ইলিশে সয়লাব বাজারগুলো

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি সারাদেশ

85461_ils

 

 

 

 

 

 

 

 

বরিশাল: ৩০শে সেপ্টেম্বর। ইলিশ ধরার শেষ দিন। ট্রলারের পর ট্রলার ভিড়ছে বরিশাল মৎস্য ঘাটে। শতশত মন ইলিশ নামছে ঘাটে। দামও সর্বনি¤œ পর্যায়ে। হুমড়ি খেয়ে পড়ছে মানুষ। রিকসাচালক থেকে উচ্চ বিত্ত। কেউ আসছেন গাড়িতে কেউবা সাইকেল চালিয়ে। যার যেরকম পুঁজি, তা দিয়ে কিনছেন ইলিশ। কেননা আজকের পর আর বাজারে মিলবে না অতি সুস্বাদু এই মাছ।

আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে ইলিশ ধরা পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ ও বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা। তাই ব্যবসায়ীরাও ইলিশ ছাড়ছেন বাজারে। আজ বরিশালের মানুষ যেন হুমড়ি খেয়ে পড়ে পোর্ট রোর্ডের মৎস্য ঘাটে। সবার হাতে ইলিশ। কোনটার দাম ২০০ টাকা কেজি, ৫০০ গ্রামের উপরে ৪০০ টাকা, আর ১ কেজি সাইজের ৫০০- ৬০০ টাকা। কিনছেও দেদারছে।  মিজানুর রহমান নামের এক ভদ্রলোক ২২টি ইলিশ কিনেছেন। তিনি জানান, ফ্রিজে রেখে খাবেন। বলা যায় না আবার কবে ইলিশ কিনতে পরবেন। রিকসা চালক কোব্বাত মোল্লাও কিনেছেন এক হালি। দাম ২৫০ টাকা। খুব খুশি। ছেলেমেয়েদের নিয়ে খাবেন। আবার আনোয়ার হোসেন নামের এক ভ্রদলোক ২০টি বড় সাইজের ইলিশ কিনেছেন। ঢাকা পাঠাবেন। মেয়ের বাড়ি। সূত্র মতে, গত কয়েক দিন ধরেই বরিশাল নগরীর পোর্ট রোডের অবতরণ কেন্দ্রে প্রচুর ইলিশ মাছ আসতে শুরু করেছে। জেলেরা সাগর ও নদী থেকে মাছ শিকার করে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এ মোকামে হাজির হচ্ছেন। আর এখানকার পাইকারী বিক্রেতারা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করেন ইলিশ।

মোকাম মালিকরা বলেছেন, ১লা অক্টোবর থেকে ২২শে অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ ধরা পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ ও বিক্রি নিষেধ। তাই শুক্রবারই এখান থেকে অন্য জেলাতে ইলিশ সরবরাহের কার্যক্রম শেষ হয়েছে। শনিবার শুধু এখানকার লোকাল বাজারে ইলিশ সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে এখানকার পাইকারীদারদের অবতরণ কেন্দ্রে উপস্থিতি কমে গেছে। একারণে সস্তায় ইলিশ কিনতে সরাসরি ক্রেতারাই অবতরণ কেন্দ্রে আজ শনিবার সকাল থেকেই ভিড় জামাচ্ছেন। আর মধ্যসত্ত্বভোগীদের তৎপরতা এড়িয়ে তাজা মাছের স্বাদ নিতে অবতরণ কেন্দ্রে ছুটে আসা সব শ্রেনী পেশার মানুষরা ইলিশ কিনছেনও বেশ কম দামে। সেখানাকার মেসার্স ইয়ার উদ্দিন সিকদার আড়ৎ’র মালিক মো. কবির হোসেন জানান, গত কয়েক দিনের মতোই আজ একই দরে মাছ বেচা বিক্রি হচ্ছে। তবে খুচড়া ক্রেতারা সস্তি পাচ্ছেন। কারণ আজ অবতরণ কেন্দ্রে পাইকারী ক্রেতা কম। ফলে সরাসরি খুচড়া ক্রেতারা ডাকে মাছ কিনতে পারছেন। তিনি আরো বলেন, আজ শনিবার ৪-৫ শত গ্রাম (ভ্যালকা) ইলিশ মনপ্রতি ১৪ থেকে ১৫ হাজার, এলসি (সাড়ে ৬-সাড়ে ৮ শত গ্রাম) সাইজের ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা, বড় সাইজ (৯ শত থেকে ১ কেজি) ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা আর এর উপরের সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৪ হাজার টাকায়। অবতরণ কেন্দ্রে আসা ক্রেতা শিক্ষক মো. আলমগীর হোসেন জানান, এতোদিন শুধু শুনেছি প্রচুর ইলিশ উঠছে। কিন্তু লোকাল বাজারে ঘুরে দেখেছি তুলনামূলক দাম কিছুটা কমেছে। মধ্যসত্তভোগীরা মোকাম থেকে কমদামে ইলিশ কিনে তার আমাদের কাছ থেকে বেশী দরে বিক্রি করেছে। যার প্রমাণ আজ মোকামে এসে দেখলাম। তিনি বলেন, এখান থেকে আজ ৫শত গ্রাম সাইজের ৫ কেজি ইলিশ কিনেছি মাত্র ১৮শত টাকায়। যা লোকাল বাজারে দাম ২৫শত টাকা। আগামীকাল থেকে নিষেধাজ্ঞা থাকায় লোকল বাজারের বিক্রেতারা আজ আর মোকামে তেমন একটা দেখা যায় নি।

বরিশাল মৎস্য আড়ৎদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক নীরব হোসেন টুটুল জানান, বর্তমান সরকারের দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপের কারণে বরাবরের মতো এ মৌসুমে ভাল মাছ পেয়েছি আমরা। আজ মোকামে লোকাল বাজারের বিক্রেতাদের উপস্থিতি কম থাকায় খুচড়া ক্রেতাদের ভিড় বেশী। তিনি আরো বলেন, আগামীকাল থেকে শুরু হওয়া ২২ দিন ব্যাপী ইলিশ ধরা পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ ও বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে। সরকারের এই পদক্ষেপকে বরাবরই আমরা সহযোগিতা করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে আমাদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে মোকাম মালিক ও পাইকারীদার এবং জেলেদের সর্তক করা হয়েছে। বরিশাল জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস জানান, আজ রাত ১২টার পর থেকেই ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম হওয়ায় ২২ দিন সারা দেশে ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ বা বিক্রয় নিষিদ্ধ। সরকারের এই আদেশ অমান্য করে ইলিশ মাছ আহরণ ও বিক্রি করলে এক বছর থেকে সর্বোচ্চ দুই বছরের সশ্রম কারাদ- বা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দ- দেয়া হবে। সরকারি এ নিষেধাজ্ঞা পালনে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *