আজ নবমীতে বিদায়ের সুর বাজবে

Slider ফুলজান বিবির বাংলা

52f0e4488b012-06

ঢাকা: কুমারী পূজা উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার রামকৃষ্ণ মিশনে ভক্তদের ঢল নেমেছিল। ঢাকা রামকৃষ্ণ মিশনের ভেতরে যত মানুষ ছিল, তার প্রায় দ্বিগুণ ছিল বাইরে। মন্দিরে প্রবেশ করতে না পেরে বাইরে দাঁড়িয়েই তাঁরা কুমারী পূজার মন্ত্র শোনেন এবং দেবীর উদ্দেশে প্রণাম করেন।

ভেতরে নতুন পোশাকে অগণিত পুণ্যার্থীর উপস্থিতি। বিরামহীন ঢাকঢোল বাজছিল। আর থেমে থেমে ঘণ্টা আর কাঁসার শব্দ। নানা বয়সের নারীর ভক্তি ধরা উলুধ্বনি। এরই মাঝে পিতার কোলে চড়ে মণ্ডপে অধিষ্ঠিত হলেন ‘কুমারী মা’। মণ্ডপে ‘কুমারী মা’ আসতেই ‘জয় কুমারী মায় কি জয়, জয় মহামায় কি জয়, জয় শ্রীশ্রী দুর্গা মায় কি জয়’ ধ্বনিতে মুখর হয়ে উঠল রাজধানীর গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মিশন মন্দির ও মঠ প্রাঙ্গণ। হাজারো লোকের ভিড়ে এমনই জয়ধ্বনি দিয়ে ভক্তরা বরণ করে নিল এ বছরের ‘কুমারী দেবী’ রূপকথা চক্রবর্তীকে। শাস্ত্রানুযায়ী এবারের কুমারী দেবীর নাম ‘মালিনী’।

সনাতন ধর্মমতে ‘পৃথিবীর সকল নারী ভগবতীর (দেবী দুর্গার) প্রতীক। তিনি সকল প্রাণীর মধ্যে মাতৃরূপে থাকেন, তাই তাকেই প্রণাম।’ এই বিশ্বাসে গতকাল শারদীয় দুর্গোৎসবের তৃতীয় দিন মহাষ্টমীতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা রামকৃষ্ণ মিশনে কুমারী নারীকে দেবীদুর্গার প্রতীক মনে করে পূজা করেছেন। ভক্তরা বিশ্বাস করেন, এই কুমারী এক হাতে অভয় দেবেন এবং অন্য হাতে ভক্তের মনোবাসনা পূর্ণ করে বর দেবেন।

রাজধানীর বনশ্রীর বাসিন্দা বিদ্যুৎ চক্রবর্তী-লিপি চক্রবর্তীর মেয়ে রূপকথা। লাল টকটকে বেনারসি শাড়ি পরে আসা ‘কুমারী মা’র চোখে-মুখে ছিল কিছুটা ভীতি আর আনন্দ। পূজার পর সে বলে, ‘আমি চাই, এ জগতে সবাই যেন অনেক সুখে-শান্তিতে থাকে।’

কুমারী পূজার মাহাত্ম্য সম্পর্কে ঢাকা রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্রুবেশানন্দ মহারাজ বলেন, ‘দেবীর কুমারী প্রতীকে আরাধনা মূলত মাতৃরূপে অবস্থিতা সর্বব্যাপী ঈশ্বরেরই মাতৃভাবে আরাধনা।’

পুরো এলাকা তখন জনারণ্য। সকাল থেকেই নিরাপত্তা রক্ষায় সেখানে বিপুলসংখ্যক র‍্যাব, পুলিশ, আনসারের পাশাপাশি অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। দর্শনার্থী ও পূজারিদের ব্যাপক ভিড়ে টিকাটুলী, ইত্তেফাক মোড়সহ ওই এলাকা মুখর হয়ে ওঠে।

রাজধানীর অন্যান্য মন্দির ও মণ্ডপে বিপুল উৎসাহ, আনন্দ ও ধর্মীয় আচার মেনে মহাষ্টমীর পূজা শেষ হয়েছে। এসব মন্দির ও মণ্ডপে মূল প্রতিমায় পূজা অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যা গড়াতেই শুরু হলো বৃষ্টি। কোথাও ঝিরঝিরে তো কোথাও আবার হালকা। তবে উৎসবমুখী ভক্তদের কাছে তা পাত্তা পায়নি।

গতকাল ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিদর্শন করেন ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা, মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল, আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শেখ পাশা হাবিব উদ্দিন প্রমুখ। শাস্ত্রানুযায়ী, অষ্টমী তিথি হলো দুর্গোৎসবের সেই মুহূর্ত, যখন অকল্যাণের প্রতীক মহিষাসুর বধ কাণ্ড চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়।

 আজ শুক্রবার মহানবমী পালন করবেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। কারণ, আর মাত্র এক দিন পরেই মর্ত্য ছেড়ে কৈলাসে স্বামীগৃহে ফিরে যাবেন দুর্গতিনাশিনী দেবীদুর্গা। আর পেছনে ফেলে যাবেন ভক্তদের চার দিনের আনন্দ-উল্লাস আর বিজয়ার দিনের অশ্রু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *