গ্রামগুলো এখন বিরানভূমি

Slider বিচিত্র

 

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুর কাছে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া একটি গ্রাম। গতকাল তোলা ছবি l রয়টার্সমিয়ানমারের সহিংসতাপ্রবণ রাখাইনের মংডু শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার উত্তরে প্রসারিত প্রধান সড়ক বরাবর শান্ত-কোলাহলহীন কিছু গ্রাম। কদিন আগেও এখানে ছিল হাজারো মানুষের বসবাস; ছিল ব্যস্ততা, প্রাণচাঞ্চল্যে ভরা। এগুলো এখন একেকটা বিরানভূমি। ছাই-ভস্মে পরিণত হওয়া বাড়িঘর, ফসলি খেত যেন শুধুই অতীতের সাক্ষী।

জনমানবশূন্য গ্রামগুলোর বাড়িঘরের ধ্বংসাবশেষ ও পুড়ে যাওয়া খেতের এখানে-সেখানে বিক্ষিপ্ত চড়ে বেড়াচ্ছে গরুর দল। দেখা গেল ক্ষুধার্ত কুকুরও। ছোট ছাগলের ওপর চড়াও হয়ে সেগুলোকেই খাবার বানাচ্ছে কুকুরগুলো। জ্বালিয়ে দেওয়া মসজিদ, বাজার, স্কুল ভবনগুলো রোহিঙ্গা মুসলিম নারী-পুরুষ আর তাঁদের সন্তানদের পদচারণায় মুখর ছিল বোঝাই যাচ্ছে। সেগুলোও এখন নীরব, খাঁ-খাঁ করছে।

উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে প্রবেশের ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ থাকা সত্ত্বেও চলতি সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকে এখানকার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অংশের খানিকটা ঘুরে দেখতে সক্ষম হয়েছেন বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সাংবাদিক। জাতিসংঘের কথায়, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই রাজ্যে জাতিগত নির্মূল অভিযান চালিয়েছে।

রয়টার্সের সাংবাদিক মংডুর উত্তরে যেসব স্থান পরিদর্শন করেছেন, সেখানকার কাছাকাছি এক এলাকার বাসিন্দা সৈয়দ ইসলাম (৩২)। বাংলাদেশের এক আশ্রয়শিবিরে শরণার্থী হয়ে আসা সৈয়দ টেলিফোনে বলছিলেন, ‘গ্রামে থাকলে সেনাবাহিনী ও পুলিশ আমাদের মেরে ফেলবে, আমরা সেই ভয় পাচ্ছিলাম। তাই প্রাণ বাঁচাতে সেখান থেকে পালিয়ে এসেছি।’ তাঁর গ্রামের কিছু বাসিন্দা রয়টার্সকে বলেন, গত বছরের শেষ নাগাদ সেনাবাহিনীর চালানো আগেকার অভিযানে তাঁদের গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।

রাখাইনের ইউ শে কায়া গ্রামে আটকে পড়া এক শিক্ষক টেলিফোনে বলেন, এখানে ৮০০ পরিবারের মধ্যে এখনো ১০০ পরিবার রয়ে গেছে। তাদের সঙ্গে ইঁদুর-বিড়াল খেলা খেলছে সেনারা। সেনারা ভোরে গ্রামে আসে; গ্রামবাসী তখন বন-জঙ্গলে পালায়। এই শিক্ষক আরও বলেন, ‘আমাদের কাছে খাবার নেই। কী করব? জঙ্গলের লতাপাতা ও সেখানকার পানিই আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *