রোহিঙ্গা শিবিরে ছড়িয়ে পড়তে পারে কলেরা

Slider সারাবিশ্ব

 

রোহিঙ্গা শিবিরে ছড়িয়ে পড়তে পারে কলেরা

বাংলাদেশের অস্থায়ী রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোয় মহামারী আকারে কলেরা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। শিবিরগুলোয় নিরাপদ পানির সরবরাহ ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশের সুবিধা না থাকায় এ আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। এসব শিবিরে বর্তমানে ৪ লাখ ৩৫ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী অবস্থান করছেন। খবর এএফপি।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ থেকে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সীমান্ত এলাকার ৬৮টি শিবির ও বস্তিতে অবস্থান করছে। দেশটিতে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসা শুরুর এক মাসের মধ্যেই পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্ শরণার্থী এলাকা হয়ে উঠেছে অঞ্চলটি। ডব্লিউএইচওর ভাষ্য অনুযায়ী, এসব শিবির ও বস্তিতে নিরাপদ সুপেয় পানির সরবরাহ ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার মতো পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় খাদ্য ও ওষুধেরও অভাব রয়েছে যথেষ্ট। ফলে শিবিরগুলোয় মহামারী আকারে কলেরা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে গতকাল প্রকাশিত ডব্লিউএইচওর বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শিবিরগুলোয় পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি অনেক বেশি। বিশেষ করে এখানে কলেরার প্রকোপ দেখা দেয়ার মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। এ কারণেই বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন সবাই। এ বিষয়ে নানা পদক্ষেপ নেয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি এখনো বেশ মারাত্মক ও চ্যালেঞ্জিং।’

ডব্লিউএইচও জানায়, বেশ কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল সেন্টার বর্তমানে শরণার্থী শিবিরগুলোয় স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও এক মাসের মধ্যে সাড়ে চার হাজার রোহিঙ্গাকে ডায়রিয়ার চিকিত্সা দিয়েছে। এছাড়া ৮০ হাজার শিশুকে দেয়া হয়েছে হাম ও পোলিওর টিকা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সর্বশেষ শরণার্থীর ঢল নামার পর থেকে বাংলাদেশে এসে মারা গেছে কমপক্ষে ১০ জন রোহিঙ্গা। এদের অধিকাংশই রাখাইনে বুলেট কিংবা বিস্ফোরণের আঘাতে আহত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিলেন।

অন্যদিকে মিসবাহ উদ্দিন আহমেদ নামে উখিয়ায় কর্মরত এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান, গত সপ্তাহে এক চ্যারিটি ক্লিনিকে চিকিত্সাধীন অবস্থায় মারা যান দুই রোহিঙ্গা বৃদ্ধ। এরা বার্ধক্যজনিত জটিলতা ও গ্যাস্ট্রোএনটারাইটিসে ভুগছিলেন।

পুলিশ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত দুজন রোহিঙ্গা নারীর শরীরে এইচআইভির ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। ৫০ ও ৬০ বছর বয়স্ক ওই দুই নারীকে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশের ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিজ রিসার্চের (আইসিডিডিআর,বি) গবেষকরা এরই মধ্যে কয়েকটি শিবির পরিদর্শন ও সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে এসেছেন বলে মিসবাহ উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন। শিবিরগুলোয় আইসিডিডিআর,বির দুটি ফিল্ড স্টেশন স্থাপন করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে গত সপ্তাহেই রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোয় মারাত্মক জনস্বাস্থ্য বিপর্যয়ের আশঙ্কা করে আরেকটি বিবৃতি দিয়েছিল চিকিত্সাসেবা সহায়তা সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ)। ক্যাম্পগুলোয় নোংরা পানি ও মলমূত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকার কারণে এ বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছিল সংস্থাটি।

সে সময় শিবিরের পূর্ণবয়স্ক শরণার্থীদের মধ্যে অনেকেই দেহে পানিশূন্যতায় প্রাণ হারাতে পারেন বলে ব্যাপক হারে মানবিক সহায়তা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছিল এমএসএফ। অন্যদিকে মিসবাহ উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, বর্তমানে এ পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটছে। সরকারি ও স্থানীয় উদ্যোগে শিবিরগুলোয় কয়েকশ শৌচাগার ও টিউবওয়েল স্থাপনের কাজ চলছে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বর্তমানে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করছে। এ মুহূর্তে স্বাস্থ্য সংকট দূর করার ক্ষেত্রে স্যানিটারি সুবিধা স্থাপনকেই সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে সেনাবাহিনী।

জাতিসংঘের গতকালের হিসাব অনুযায়ী, গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সংঘাত শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশটি থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে ৪ লাখ ৩৬ হাজারেরও বেশি শরণার্থী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *