বগুড়ায় বন্যায় ৫০০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি

Slider জাতীয়
বগুড়ায় বন্যায় ৫০০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি


বন্যায় বগুড়ার ১২টি উপজেলার মধ্যে ১০টি উপজেলার ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলার ৩৯ হাজার হেক্টর ফসলের ক্ষতি সাধিত হয়েছে।

যার আর্থিক ক্ষতির পরিমান প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।জানা যায়, বগুড়া জেলায় যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে প্রথমে জুন মাসে বন্যা দেখা দেয়। বন্যার পানি কমে যাওয়ার পর পরই জুলাইয়ের শেষের দিকে এসে আবারও বন্যা দেখা দেয়। প্রথম দফা বন্যায় তেমন ক্ষতি না হলেও দ্বিতীয় দফা বন্যায় জেলার কৃষিজমির ফসলের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে।

বগুড়া জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, ধুনট, শাজাহানপুর, শেরপুর, শিবগঞ্জ, নন্দীগ্রাম, কাহালু, আদমদিঘি বগুড়া সদর উপজেলায় বন্যা দেখা দেয়। বন্যার পাশাপাশি নদ নদীতে পানি বৃদ্ধি ও ভারি বর্ষণে জেলার ১০ উপজেলার নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে যায়। ভারি বর্ষণে তলিয়ে যায় গাবতলী ও দুপচাঁচিয়া উপজেলার ফসলও। সেই হিসাবে জেলার ১২টি উপজেলাতেই ক্ষতিসাধিত হয়েছে।

তলিয়ে যাওয়া এলাকায় আমনের ক্ষতি হয়েছে বেশি। জেলায় ৩৯ হাজার ১৭০ হেক্টর ফসলের ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এর মধ্যে আউশ ধান রয়েছে ১ হাজার ৬৬৫ হেক্টর, রোপা আমন রয়েছে ৩৬ হাজার ৫৭০ হেক্টর, আমন বীজতলা রয়েছে ৮৫ হেক্টর, কলা ৪০ হেক্টর, শাক সবজি ৮১০ হেক্টর। তবে বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সারিয়াকান্দিতে ৮ হাজার ২১৫ হেক্টর জমির ফসল। সোনাতলায় ক্ষতি হয়েছে ৭ হাজার ১৭৫ হেক্টর। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে জেলায় বন্যার আগে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৭২০ হেক্টরের জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর বিপরীতে প্রতি হেক্টরে ৩ মেট্রিক টন করে ফলন টার্গেট ধরা হয় প্রায় ৫ লাখ ৩৬ হাজার ১৬০ মেট্রিক টন। কিন্তু বন্যা ও বর্ষণে জেলার আমন ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কাজ করা হচ্ছে। বন্যার পানি কমে যাওয়ার সাথে সাথে জেলার সারিয়াকান্দি, ধুনট, কাহালু ও সোনাতলা উপজেলার ৫০০ আমন চাষিকে বিনামূল্যে বীজ ও চারা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের সহযোগিতা করার জন্য পর্যায়ক্রমে চারা প্রদান করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার ইকবাল কবির জানান, বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষি প্রদান এলাকার প্রধান ধান আমনে লোকসান গুণতে হবে। তিনি জানান, সারিয়াকান্দি উপজেলার সিংহভাগ আমন চাষি লোকসান গুনবেন। বন্যার আগে বেশিরভাগ চাষিরা আমন চাষ করে ফেলে। কিন্তু বন্যায় সব চাষাবাদ এবং জমির সবজি তলিয়ে পচে গেছে। নতুন করে আবার চাষ শুরু করতে হবে।

সারিয়াকান্দির দিঘলকান্দির বানভাসিরা জানান, যমুনা নদীর পানি হঠাৎ করে বৃদ্ধি পেয়ে কোন সময় দেয়নি। চোখের সামনে বেশকিছু ঘরবাড়ি বেসে গেছে। ফসলের ক্ষেতে প্রায় এক মাস ধরে পানি জমে আছে। সেই জমির আমন চাষ আর সম্ভব না। এখন শীতকালিন ফসল চাষ করতে হবে।

বগুড়া জেলা ত্রান ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা শাহারুল ইসলাম মো: আবু হেনা জানিয়েছেন, জেলার ৬২ টি ইউনিয়নে পানি উঠেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ গ্রাম রয়েছে ১ হাজার ৭১টি। ক্ষতিগ্রস্থ লোকসংখ্যায় প্রায় ২ লাখ ৭১ হাজার ২৮৬ জন। এছাড়া ১১৩ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ২টি মাদ্রাসা বন্যাকবলিত হয়। বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রান সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *