রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতের মনোভাবের প্রতিবাদে ভারত জুড়ে চলছে বিক্ষোভ

Slider সারাবিশ্ব

82625_eee

 

 

 

 

 

রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতের অনমনীয় মনোভাবের প্রতিবাদে ভারত জুড়ে চলছে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা। মুসলিম সংগঠনের ডাকে এইসব প্রতিবাদ সভায় যোগ হিচ্ছেন ভারতের বামপন্থী দলগুলো এবং কংগ্রেস। সোমবার জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার জেইদ রাদ-আল হুসেইন রোহিঙ্গাদের বিষয়ে ভারতের অবস্থানের তীব্র সমালোচনা করেছেন।  সম্প্রতি ভারতের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু  ৪০ হাজার রোহিঙ্গাকে দেশ থেকে বের করে দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানানোর পরই চারদিকে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মিয়ানমার সফরে গিয়ে যেভাবে রোহিঙ্গাদের গনহত্যার বিষয়ে কোনোরকম মন্তব্য না করে এটাকে সন্তাসের সঙ্গে যুক্ত করে মায়ানমার সরকারের সঙ্গে একমত হওয়ায় ভারতের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে বিষ্ময় প্রকাশ করা হযেছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মানবিক দৃষ্টিতে দেখার আহ্বান জানানোর পরও সরকার কোনোরকম মনোভাবের পরিবর্তন ঘটায়নি। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের বিবৃতিতে সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মায়ানমার সরকারের প্রতি শুধু মাত্র সংযত হওয়ার মৃদু আবেদন জানানো হয়েছে। ভারতের অনমনীয় মনোভাবের প্রতিবাদে কেরল থেকে শুরু করে জম্মু কাশ্মীর, দিল্লি থেকে পশ্চিমবঙ্গে গত কয়েক দিনে বিভিন্ন মুসলিম সংগঠনের ডাকে প্রতিবাদ মিছিল ও বিক্ষোভে মিয়ানমার সরকারের প্রতি গণহত্যা বন্ধের দাবি জানানোর পাশাপাশি সুচির নোবেল শান্তি পুরস্কার কেড়ে নেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। একইভাবে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতের মনোভাবের পরিবর্তন দাবি করে ভারতে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের উপযুক্ত পুনর্বাসন ও শরণার্থী হিসেবে নথিভুক্ত করার দাািব জানানো হয়েছে। গত সোমবার  ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লীগের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মিয়ানমার সরকার ও তার সেনাবাহিনীর অমানবিক ও বর্বর আচরণকে কোনো সম্প্রদায় অথবা দেশ মেনে নিতে পারে না। এই ঘটনা মানবতার ইতিহাসের সব নৃশংসতাকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। একইসঙ্গে লীগের পক্ষ থেকে বৌদ্ধদের ধর্মীয় গুরু দালাই লামার প্রতি এক আবেদনে রোহিঙ্গাদের ওপর হিংসা বন্ধ করতে মিয়ানমার সরকারের উপর তার প্রভাব বিস্তারের আবেদন জানানো হযেছে। গত রোববার হায়দ্রাবাদ সহ বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ মিছিল থেকে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জাতসংঘের দ্রুত হস্তক্ষেপ চাওয়ার পাশাপাশি ভারতের মনোভাব পরিবর্তনেরও আরজি জানানো হয়েছে। সোমবার কলকাতায় সুচির কুশপুতুল নিয়ে ১০টি মুসলিম সংগঠনের উদ্যোগে আযোজিত প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে। প্রায় ৪০ হাজার মানুষ এই বিক্ষোভে শামিল হয়েছিলেন। সর্বভারতীয় সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশন, ইন্ডিয়ান পপুলার ফ্রন্ট, জামায়াতে ইসলামি, মোজাদ্দেদিয়া অনাথ ফাউন্ডেশন, জমিয়তে ওলামায়ে বাংলা প্রভৃতি সংগঠনের নেতা ও সমর্থকরা এই মিছিল ও প্রতিবাদ সভায় যোগ দিয়েছিলেন। ধর্মতলায় অনুষ্ঠিত এই প্রতিবাদ সভায় সিপিআইএম ও কংগ্রেসও যোগ দিয়েছিল। ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকি এদির হুঁশিযারি দিয়ে বলেছেন, আমরা ধৈর্য্য ধরে রয়েছি। এখনও মিয়ানমার সরকারকে সময় দিচ্ছি । ইচ্ছে করলে আমরা কলকাতার মিয়ানমার দূতাবাসের ইট খুলে নিয়ে আসতে পারি। ডুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ কামরুজ্জামান মোদীর রোহিঙ্গা নীতির তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, ভারতের মানুষ মানবিকতার নীতিতে বিশ্বাস রাখেন। মোদী ভারতের গরীব জনতার বিপন্ন মানুষকে আশ্রয় দেবার সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছেন। নিজের দেশে হত্যার শিকার হওযা সত্ত্বেও ভারত সরকার রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের নীতি গ্রহন করেছে। এটা কোানোভাবেই চলতে পারে না বলে তিনি হুঁশিয়ারি দিযেছেন। প্রতিবাদ সভায় সিপিআই্এম’র সুজন চক্রার্তী বলেছেন, নরেন্দ্র মোদী যদি রোহিঙ্গাদের পুশব্যাক নীতিতে অবিচল থাকেন তবে তাকেও মানুষ পুশব্যাক করবেন।  তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, যে মানুষ উদ্বাস্তু, বিপদে পড়েছে, তাকে বাঁচাতে না পরলে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া উচিত। কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী বলেছেন, ভগবান বুদ্ধের অহিংসা নীতিতে বিশ্বাসী দেশ কীবাবে রোহিঙ্গাদের উপর এই নির্যাতন করছে তা ভেবে অবাক হচ্ছি। তিনি আরও বলেছেন, ভারতের ইতিহাস বলছে এই দেশ চিরকাল বিতাড়িত লাছিত মানুষকে আশ্রয় দিয়ে এসেছে। তাহলে এখন কীভাবে রোহিঙ্গাদের ফেলে দেয়া সম্ভব ? এদিন পার্ক সার্কাস থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত দীর্ঘ ৫ কিলোমিটার পথে ধিক্কার মিছিল থেকে বারে উচ্চারিত হয়েছে মিয়ানমার সরকারের বর্বরতার বিরুদ্ধে ধিক্কার। সুচির নীরব থাকার প্রতিবাদেও মানুষ সোচ্চার ছিলেন। এদিনের মিছিলে গ্রামবাংলা থেকে ছাত্র যুবরা মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *