বাংলাদেশে নতুন করে প্রবেশ করেছে ১৮০০০ রোহিঙ্গা

Slider সারাবিশ্ব

81123_roiy

 

 

 

 

 

মিয়ানমারের রাখাইনে এবারের সহিংসতায় গত এক সপ্তাহে কমপক্ষে ১৮ হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে বাংলাদেশে। গত বছর অক্টোবরের পর তাদের এ সংখ্যা এখন ৮৭ হাজার। বর্তমানে বাংলাদেশের জন্য এটা অত্যন্ত জটিল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বার্তা সংস্থা এপি’কে এসব কথা বলেছেন কক্সবাজার জেলার প্রশাসক মোহাম্মদ আলী হোসেন। এ ছাড়া অভিবাসন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনও (আইওএম) একই কথা বলেছে। তারা বলেছে, মিয়ানমারের সহিংসতা থেকে পালিয়েছেন কমপক্ষে ১৮ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম। সীমান্ত অতিক্রম করে তারা প্রবেশ করেছেন বাংলাদেশে। তাদের কয়েক শত আটকা পড়ে আছেন নো-ম্যানস ল্যান্ডে। তিনি বলেছেন, কক্সবাজারে তারা যেসব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন তার সবটাই এরই মধ্যে জানানো হয়েছে সরকারকে। আইওএমের মুখপাত্র সংযুক্তা সাহানি অবস্থান করছেন মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে। তিনিই বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের সর্বশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছেন। মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপ ও আন্তর্জাতিক অধিকারকর্মীরা বলছেন, রোহিঙ্গা উগ্রপন্থিদের হামলার জবাবে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী প্রতিশোধ নিচ্ছে। তারা গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিচ্ছে। গুলি করে হত্যা করছে সাধারণ মানুষকে। অন্যদিকে অগ্নিসংযোগ সহ সহিংসতার জন্য রোহিঙ্গা উগ্রপন্থিদের দায়ী করছে মিয়ানমার সরকার। এ সহিংসতায় রোববার পর্যন্ত সরকারি হিসাবে নিহতের সংখ্যা ৯৬। তবে বাস্তবে এ সংখ্যা আরো বেশি। মিয়ানমারে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার বসবাস। তারা বাস করেন রাখাইন প্রদেশে। কিন্তু বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে এসব রোহিঙ্গা ভয়াবহ নিষ্পেষণের শিকার হচ্ছে। গত সপ্তাহে রোহিঙ্গা উগ্রপন্থিরা পরিকল্পিতভাবে বেশ কিছু পুলিশ পোস্টে হামলা চালায়। তার জবাবে প্রতিশোধ নিচ্ছে সরকারের বিভিন্ন বাহিনী। ওদিকে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে যেসব ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে তা দেখে গা শিউরে উঠছে বিবেকবান মানুষের, যদিও এসব ছবি বা ভিডিও কখন ধারণ করা বা এর যথার্থতা কি সে বিষয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কোনো নিরপেক্ষ মিডিয়া থেকে এসব ছবি বা ভিডিওর বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় নি। তাতে দেখা যায়, নারীদের নগ্ন করে প্রহার করা হচ্ছে। কুপিয়ে কেটে ফেলা হচ্ছে হাত-পা। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, গলা কাটতে। অন্য একটিতে দেখা যায়, ডোবা থেকে মৃত এক যুবকের দেহ গলায় রশি বেঁধে টেনে তোলা হচ্ছে উপরে। ফেসবুকে কয়েকদিন ধরেই ঘুরছে একটি মেয়ে শিশুর মৃতদেহ। সে পানিতে ডুবে মরে গেছে। তা নিয়ে তোলপাড় চলছে সামাজিক মিডিয়ায়। এমন পরিস্থিতিতে আইওএমের সংযুক্তা সাহানি বলেছেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট এখন আর বাংলাদেশ বা মিয়ানমারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটা এখন আন্তর্জাতিক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওদিকে পুলিশ কর্মকর্তা মিয়া উদ্দিন বলেছেন, বঙ্গোপসাগরে শাহ পরীর দ্বীপ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছিল রোহিঙ্গা বোঝাই একটি নৌকা। কিন্তু নাফ নদীতে তা ডুবে গেছে। এতে কমপক্ষে চারজন মারা গেছেন। ওই নৌকায় এ সময় কতজন রোহিঙ্গা ছিলেন তা জানা যায় নি। মিয়া উদ্দিন আরো বলেন, তিনি চারটি মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন। সম্ভবত আরো অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন। তার ভাষায়- তাদের সন্ধানে আমাদের অনুসন্ধান চলছে। আমরা জানি না ওই নৌকায় কতজন ছিলেন। ওদিকে বুধবারও বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডস ফিরিয়ে ফেরত পাঠিয়েছে ১৭১ রোহিঙ্গাকে। দু’দিনে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে তাদেরকে আটক করা হয়েছিল। এ কথা জানিয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের পরিচালক কর্নেল এসএম আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, বর্ডার গার্ডরা এসব মানুষকে পুশব্যাক করার আগে খাদ্য ও ওষুধপত্র দিয়েছে। ফেরত পাঠানোর পর তাদের পরিণতি কি হয়েছে তা পরিষ্কার নয়। উল্লেখ্য, রোহিঙ্গা মুসলিমদের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিসেবে বৈধতা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে মিয়ানমার। দীর্ঘ দিন যাবত এসব রোহিঙ্গা নাগরিকত্ব সহ সব রকম অধিকার থেকে বঞ্চিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *