সব বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বাড়ছে

Slider অর্থ ও বাণিজ্য টপ নিউজ

base_1503256561-dd

২০১৬ সালের ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি ৪০টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল মোট ২৩ হাজার ৫৭ কোটি টাকা। গত ছয় মাসে বেসরকারি প্রায় সব ব্যাংকেরই খেলাপি ঋণ বেড়েছে। ফলে চলতি বছরের জুন শেষে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজার ৭২৮ কোটি টাকা। অর্থাত্ ছয় মাসের ব্যবধানে এ খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৮ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা বা ৩৭ দশমিক ৬০ শতাংশ। এ সময়ে বেসরকারি পুরনো ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি খেলাপি ঋণ বেড়েছে নতুন ব্যাংকগুলোরও।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ২ হাজার ২৪৩ কোটি টাকা। চলতি বছরের জুন শেষে তা বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা। এ হিসাবে গত ছয় মাসে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৬ শতাংশ।

বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংকের ২০১৬ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা। চলতি বছরের জুনে তা ২ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। অর্থাত্ গত ছয় মাসে ন্যাশনাল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ হাজার ১০১ কোটি টাকা বা ৮২ শতাংশ।

গত ছয় মাসে ৭৮৮ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ বেড়েছে পূবালী ব্যাংকের। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি খাতের ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ১ হাজার ৪৪ কোটি টাকা। চলতি বছরের জুনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৩২ কোটি টাকায়।

কেয়া গ্রুপের ঋণের কারণেই পূবালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে বলে জানান ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল হালিম চৌধুরী। তিনি বলেন, কেয়া গ্রুপের কর্ণধার আবদুল খালেক পাঠানের প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে পূবালী ব্যাংকের প্রায় ৬০০ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে। বড় অংকের ওই ঋণ খেলাপি হয়ে যাওয়ায় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে। তবে কেয়া গ্রুপের ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয়েছে। এছাড়া ঋণের বিপরীতে পর্যাপ্ত জামানত থাকায় ঋণটি নিয়ে ব্যাংকের খুব বেশি উদ্বেগ নেই।

গত ছয় মাসে ৫৪৮ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ বেড়েছে বেসরকারি আইএফআইসি ব্যাংকের। গত ডিসেম্বরে ব্যাংকটির ৬৮১ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ থাকলেও চলতি বছরের জুন শেষে তা ১ হাজার ২২৯ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এ হিসাবে গত ছয় মাসে আইএফআইসি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৮০ শতাংশ। ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের ৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ বর্তমানে খেলাপি।

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ৫৪৭ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ বেড়েছে এবি ব্যাংকের। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির ৬৬৬ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ থাকলেও জুন শেষে তা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ২১৩ কোটি টাকা। ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের ৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ বর্তমানে খেলাপি।

বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের খেলাপি ঋণ চলতি বছরের জুন শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬১২ কোটি টাকায়। গত বছরের ডিসেম্বরে ২৩৮ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ ছিল ব্যাংকটির। ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের ৫ দশমিক ১১ শতাংশ বর্তমানে খেলাপি।

পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠন করা ঋণগুলো খেলাপি হয়ে যাওয়ায় মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে বলে জানান ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান আনিস এ খান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, দেশের অধিকাংশ বেসরকারি ব্যাংকের পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠন করা ঋণ খেলাপি হয়ে যাচ্ছে। ফলে সামগ্রিকভাবে ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে। তবে নতুন করে বিতরণকৃত ঋণ খেলাপি হওয়ার হার কম।

চলতি বছর খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির তালিকায় ওপরের দিকে রয়েছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি)। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। চলতি বছরের জুনে এসে তা ১ হাজার ৬৯৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। অর্থাত্ এ সময়ে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪২৭ কোটি টাকা।

বেসরকারি খাতের অন্যান্য ব্যাংকের মধ্যে গত ছয় মাসে এক্সিম ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৬৩ কোটি, প্রিমিয়ার ব্যাংকের ২৯৬ কোটি, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের ২৮১ কোটি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ২৫১ কোটি, ঢাকা ব্যাংকের ২৩০ কোটি, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ২০১ কোটি, প্রাইম ব্যাংকের ১৯৭ কোটি, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ১২৬ কোটি, ইস্টার্ন ব্যাংকের ১৫২ কোটি ও ব্র্যাক ব্যাংকের ৮১ কোটি টাকা। এছাড়া যমুনা ব্যাংকের ১৪০ কোটি, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ১৭৬ কোটি, উত্তরা ব্যাংকের ১৩৪ কোটি ও ওয়ান ব্যাংকের ১১৯ কোটি টাকাও গত ছয় মাসে নতুন করে খেলাপি হয়েছে।

নতুন ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণও গত ছয় মাসে বেড়েছে। গত ডিসেম্বরে নতুন নয় ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২৭৩ কোটি টাকা। ছয় মাসের ব্যবধানে চলতি বছরের জুনে তা বেড়ে হয়েছে ৭১৩ কোটি টাকা। এ হিসাবে ৪৪০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ বেড়েছে নতুন ব্যাংকগুলোয়।

গত ছয় মাসে নতুন ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ বেড়েছে দ্য ফারমার্স ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের। জুন শেষে দ্য ফারমার্স ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০৬ কোটি টাকা। এছাড়া জুন শেষে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৯১ কোটি, এনআরবি গ্লোবালের ৬৩ কোটি, মেঘনা ব্যাংকের ৫৫ কোটি ও এনআরবি ব্যাংকের ৩১ কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, ছয় মাসের ব্যবধানে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১১ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা। চলতি বছরের জুন শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৪ হাজার ১৪৮ কোটি টাকায়, যা ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ। গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৬২ হাজার ১৭২ কোটি টাকা, যা ওই সময়ে বিতরণকৃত ঋণের ৯ দশমিক ২৩ শতাংশ। এর বাইরে মন্দমানের খেলাপি হয়ে যাওয়ায় অবলোপন করা হয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ। সব মিলে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *