লাইসেন্স আছে ১২ কোম্পানির উৎপাদনে নেই একটিও

Slider জাতীয়

base_1503172690-10

পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট উৎপাদনে এ পর্যন্ত ১২টি ওষুধ কোম্পানিকে লাইসেন্স দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। ১৭টি ব্র্যান্ডের ট্যাবলেট উৎপাদনের জন্য লাইসেন্স নিলেও বর্তমানে এর একটিও উৎপাদন করছে না কোম্পানিগুলো। ফলে দেশে চলমান বন্যায় পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটের বিপুল চাহিদা সত্ত্বেও নেই পর্যাপ্ত সরবরাহ।

বন্যায় অনেক অঞ্চলে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে নানা ধরনের পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বানভাসি মানুষ। অনেকে বাজার ঘুরেও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটের কোনো খোঁজ পাচ্ছে না। কিছু এলাকায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।

বন্যাদুর্গত দিনাজপুর সদরের কালীতলা এলাকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা আবদুল খালেক। কয়েক দিন ধরে জেলার অনেক ওষুধের দোকান ঘুরেও কোনো পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সংগ্রহ করতে পারেননি। পরে তিনি ঢাকায় বসবাসরত ছেলে আফিফ অভির সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট পাঠাতে বলেন। কিন্তু অভিও রাজধানীর বিভিন্ন ফার্মেসিতে খোঁজ করে ট্যাবলেটটি পাননি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু ঢাকা কিংবা দিনাজপুর নয়, দেশের কোথাও ওষুধের দোকানে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট নেই। রাজধানীর পুরান ঢাকার মিটফোর্ড, বাবুবাজার ও ইসলামপুর এলাকার পাইকারি ওষুধ ব্যবসায়ী জানান, আগে বাজারে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট হ্যালোট্যাবের সরবরাহ ছিল। খুবই স্বল্পমূল্যে এ ট্যাবলেট বিক্রি হতো। প্রতি ১০০টি ট্যাবলেটের মূল্য ছিল মাত্র ৩৫ টাকা। কিন্তু বাজারে দীর্ঘদিন ধরে ট্যাবলেটটির কোনো সরবরাহ নেই।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১৭টি ব্র্যান্ডের হ্যালোজেন (জেনেরিক) পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট উৎপাদনের জন্য ১২টি কোম্পানিকে লাইসেন্স দেয়া হয়েছিল। কোম্পানিগুলো হলো— সরকারি ওষুধ কোম্পানি এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল), বেসরকারি সোনিয়ার ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড, অ্যামিকো ফার্মা, এসট্রা বায়োফার্মাসিউটিক্যালস, টেকনো ড্রাগ, ইনসেপ্টা, ইন্দোবাংলা, ইনোভা, গ্লোব ফার্মা, ওরিয়ন ফার্মা, রিলায়েন্স ফার্মা ও সুপ্রিম ফার্মা। কিন্তু এর মধ্যে কোনো প্রতিষ্ঠানই ওষুধটি উৎপাদন করছে না।

জানা যায়, মানহীন ওষুধ তৈরি করায় এরই মধ্যে ইন্দোবাংলা ও টেকনো ড্রাগের উৎপাদন লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। বাজারে পানি বিশুদ্ধকরণে সোনিয়ার ল্যাবরেটরিজের হ্যালোট্যাব ব্যাপক ব্যবহার হতো। কিন্তু তারাও উৎপাদনে নেই চার বছর ধরে।

জানতে চাইলে সোনিয়ার ল্যাবরেটরিজের রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স কর্মকর্তা হাসমত আলী বণিক বার্তাকে বলেন, কাঁচামাল সংকটের কারণে ২০১৩ সাল থেকে তাদের কোম্পানি হ্যালোট্যাব ট্যাবলেট উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। বাজারে চাহিদা কম থাকায় এ ওষুধ উৎপাদনে কোম্পানির আগ্রহও কম বলে জানান তিনি।

বাজারে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট না পাওয়ায় বন্যাদুর্গত এলাকার অনেকে দূষিত পানি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দিনাজপুর, রংপুর, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, বগুড়া, গাইবান্ধা, রংপুর, কুড়িগ্রাম জেলায় সাধারণ মানুষ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট খুঁজে পাচ্ছে না। মেডিকেল টিমের মাধ্যমে কিছু লোক পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট পেয়ে থাকলেও বাজারে ট্যাবলেট সরবরাহ না থাকায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বন্যাদুর্গত মানুষদের। বিশুদ্ধ পানির অভাবে ডায়রিয়া, চর্মরোগসহ বিভিন্ন ধরনের পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তারা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ২২টি জেলায় ১০ থেকে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ৮৫৪ জন। তবে দেশের বিভিন্ন জেলার সিভিল সার্জনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পানি নেমে যাওয়ার পর পরই চর্ম ও ডায়রিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব অনেক বেড়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, বন্যায় আক্রান্তদের চিকিত্সাসেবা প্রদানের জন্য জেলার প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে মোট ২২টি জেলায় ১ হাজার ৮২৪টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। তাদের মাধ্যমে ট্যাবলেট দেয়া হচ্ছে। বাজারে অপসো স্যালাইন কোম্পানি ক্লোটেক নামে এক ধরনের পানি বিশুদ্ধকরণ তরল ওষুধ তৈরি করছে। প্রতি পাঁচ লিটারে ১৬ ফোঁটা তরল ওষুধ দিয়ে পানি বিশুদ্ধ করা যায়।

পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ না থাকার ব্যাপারে জানতে চাইলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক রুহুল আমিন বলেন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সোনিয়ার ল্যাবরেটরিজ কোম্পানি তৈরি করত। আরো কয়েকটি কোম্পানির ওষুধটি তৈরি করার কথা। কিন্তু বাজারে ট্যাবলেটটির চাহিদা খুবই কম হওয়ায় কোম্পানিগুলো এটি তৈরিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তবে চাহিদা বেড়ে গেলে কোম্পানিগুলোকে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট উৎপাদনে আগ্রহী করে তোলা হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ২০০৪ সালের পর দেশে বন্যা তেমন হয়নি। এছাড়া মানুষের স্যানিটেশন ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবহার অনেকটা বেড়েছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বেড়ে যাওয়ায় অধিকাংশ মানুষ পানি ফুটিয়ে পান করছে। তবে সম্প্রতি পাঁচ কোটি পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটের চাহিদা ইডিসিএলকে দেয়া হয়েছে। শিগগিরই তারা চাহিদা অনুযায়ী ট্যাবলেটটি সরবরাহ দেবে বলে আশা করছি।

তিনি জানান, বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া ট্যাবলেট তারা বিভিন্ন জেলায় আগেই পাঠিয়েছেন। সেখান থেকে নতুন করে চাহিদা দেয়া হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *