রায়ে সরকারের ‘আমিত্ব’ শেষ

Slider জাতীয়

bd-pratidin-1-2017-08-10-07

বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেছেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি সরকারের ‘আমিত্ব’ ভাবের একটা বিষয় তুলে ধরেছেন। অর্থাৎ সরকার প্রধান, সংসদ নেতা এবং দলীয় নেতা একজনই থাকেন।

ষোড়শ সংশোধনীতেও সেই আমিত্ব ভাব রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল। যেটা দ্বারা সরকার বারবার বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করতে চেয়েছে। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের মধ্য দিয়ে ‘আমিত্ব’-কে বাদ দেওয়া হয়েছে। গতকাল বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত ‘রাজনৈতিক-সামাজিক অবক্ষয়, কল্যাণ রাষ্ট্র এবং ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এসব বলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। শাহদীন মালিক বলেন, এই দেশটা আমাদের সবার। স্বাধীনতার পর এদেশের সংবিধান শুরু হয়েছে আমরা দিয়ে। যদি ষোড়শ সংশোধনীতে ‘আমি’ রাখা হয়, তাহলে আইয়ুব খানের জমানায় ফিরে যাওয়া হবে। কারণ সে সময় তিনি পাকিস্তানের সংবিধান শুরু করেছিলেন ‘আমি’ দিয়ে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের আইনসভাকে সার্বভৌম বলার ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা আছে। কিন্তু আমাদের দেশের জাতীয় সংসদ সার্বভৌম নয়। জনগণ সার্বভৌম। এ দেশের সংসদের ক্ষমতা সংবিধানে সীমিত করা আছে। আর সংসদের কোনো কিছু সংবিধানের বাইরে না। তিনি বলেন, এদেশে বারবার বিনা নোটিসে সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে, যা অশ্রদ্ধার শামিল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্বল্প সময় নিয়ে সংশোধনীর কাজ করা হয়েছে। কেবল সুরঞ্জিত বাবুর সংবিধান সংশোধন কমিটি একটু সময় নিয়েছিল। সেটার একটা খসড়া প্রতিবেদন তৈরি করে তিনি ২৫ জুন বড় অফিসে গিয়েছিলেন (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে), সেখানে সেটা বাদ দেওয়া হয়। পরের দিন ২৬ জুন ওই প্রতিবেদনের উল্টো প্রতিবেদন তৈরি করে সংবিধান সংশোধন করা হয়। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি’র সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, সরকার প্রধানের পক্ষ থেকে মন্ত্রীদের বলা হয়েছে রায়ের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করার জন্য। এটা বিচার বিভাগের সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা, হুমকি দেওয়া। কতটা ভয়াবহ কথা যা চিন্তাই করা যায় না। এটি ইমম্যাচিউরড গভর্নমেন্ট। মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বিচার বিভাগ নিয়ে সরকারের যে অবস্থান তাতে মনে হচ্ছে আমরা একটা বিপজ্জনক প্রবণতার মধ্যে যাচ্ছি। যদি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা না থাকে তাহলে গণতন্ত্র থাকার সুযোগ নেই। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের জন্য বিচারপতিদেরকে সর্বমহল থেকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত।   সাবেক এমপি ও নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এস এম আকরাম বলেন, আমি খুব কাছ থেকে দলের স্বৈরতন্ত্র দেখেছি। কীভাবে দল ও সরকার চলে তাও দেখেছি। এদেশে দলের প্রধানের বিপক্ষে এমপি কিংবা কর্মী কেউই কোনো মত দিতে পারেন না। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কার্যকর রাখতে হবে। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় ১৬ কোটি মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এ রায় নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু এখন মন্ত্রী-এমপিদের যে বিতর্কের ধারা তাতে সুস্থ মনে হচ্ছে না। ড. আসিফ নজরুল বলেন, বিশ্বের অখ্যাত মাত্র দুটি দেশে নাউরু ও সামওয়াতে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদে রাখা হয়েছে। শ্রীলঙ্কায় ছিল সেটি বাতিলের জন্য প্রক্রিয়া চলছে। সরকার ৭২-এর সংবিধানের কথা বলে ষোড়শ সংশোধনী করেছে আদালতের গলা টিপার জন্য।

আলোচনায় আরও বক্তৃতা করেন জেএসডি’র সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নাগরিক ঐক্যের সদস্য জাহিদুর রহমান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *