দেশের পুঁজিবাজারে বর্তমানে ৩৫টি মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড তালিকাভুক্ত রয়েছে। বিনিয়োগকৃত সম্পদের বাজারমূল্যের ভিত্তিতে গতকাল ফান্ডগুলোর নিট সম্পদমূল্য (এনএভি) ছিল ৬ হাজার ৩০৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। বিপরীতে ফান্ডগুলোর বাজার মূলধন ৪ হাজার ৫৫৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। ইউনিটগুলোর বাজারমূল্য ও সম্পদমূল্যের (পি/এনএভি) অনুপাত শূন্য দশমিক ৭২। অর্থাত্ স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর ইউনিট গড়ে সম্পদমূল্যের ২৭ দশমিক ৭ শতাংশ কমে হাতবদল হচ্ছে। সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্সেস লিমিটেডের এক পর্যালোচনা প্রতিবেদনে সম্প্রতি এ চিত্র উঠে এসেছে।
গেল সপ্তাহ পর্যন্ত ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) হালনাগাদ উপাত্ত নিয়ে প্রস্তুত প্রতিবেদনটিতে দেখা যায়, তালিকাভুক্ত মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর তহবিল ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে মোট নয়টি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি (এএমসি)। কারো ব্যবস্থাপনাধীন তহবিলের বাজারমূল্যই সেগুলোর সম্পদমূল্য স্পর্শ করতে পারেনি। আলাদাভাবে মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে, একমাত্র প্রাইম ফিন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটগুলোর বাজারদর এর চলতি সম্পদমূল্যের ওপরে আছে।
গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিনিয়োগকৃত সম্পদের বাজারমূল্যের ভিত্তিতে মেয়াদি ৩৫ মিউচুয়াল ফান্ডের বর্তমান সম্পদমূল্য ৬ হাজার ৩০৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা, যেখানে এসব সম্পদের ক্রয়মূল্য ৫ হাজার ৮২৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা। বিনিয়োগকৃত সম্পদের বর্তমান মূল্য ক্রয়মূল্য থেকে ৮ দশমিক ২২ শতাংশ বেশি (এনএভি রিটার্ন)। আইসিবি এএমসিএল, স্ট্র্যাটেজিক ইকুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড (এসইএমএল) ও সিএপিএম ছাড়া সব সম্পদ ব্যবস্থাপকই ইতিবাচক এনএভি রিটার্ন দেখিয়েছে। এ তালিকায় সবার ওপরে দেশের প্রথম বেসরকারি এএমসি এইমস অব বাংলাদেশ লিমিটেড, ৬৬ দশমিক ৪ শতাংশ। এরপর যথাক্রমে ভিআইপিবি এএমসি ২২ শতাংশ, এল আর গ্লোবাল বাংলাদেশ এএমসি ১২ দশমিক ৪, এশিয়ান টাইগার ক্যাপিটাল পার্টনার্স এএমসি ১০ দশমিক ৭, ভ্যানগার্ড এএমএল ৮ দশমিক ৮, রেস এএমসি ৮ দশমিক ৫ ও আইসিবি এএমসিএলের মাইনাস ১৬ দশমিক ১ এবং সিএপিএমের মাইনাস দশমিক ৭ শতাংশ রিটার্ন উল্লেখযোগ্য।
সম্পদমূল্যের বিপরীতে বাজারে সবচেয়ে কম দামে কেনাবেচা হচ্ছে রেসের ব্যবস্থাপনাধীন ফান্ডগুলোর ইউনিট। তাদের ১০টি মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের গড় পি/এনএভি অনুপাত দশমিক ৬১, যা ইন্ডাস্ট্রিতে সর্বনিম্ন। বিপরীতে পি/এনএভি অনুপাত সবচেয়ে বেশি যথাক্রমে সিএপিএম, এসইএমএল, এশিয়ান টাইগার্স, ভিআইপিবি, আইসিবি এএমসিএল, এইমস, ভ্যানগার্ড ও এল আর গ্লোবালের ব্যবস্থাপনাধীন ফান্ডগুলোর।
ডিসকাউন্টে মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট হাতবদল হওয়া প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ও ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ফিন্যান্সের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মুসা বলেন, বিশ্বজুড়ে সাধারণত সম্পদমূল্যের চেয়ে ৫-১০ শতাংশ কমে মেয়াদি মিউচুয়াল হাতবদল হয়। আমাদের বাজারে এ হার অর্ধেকে নেমে এসেছিল। বাজার পরিস্থিতি ভালো হতে শুরু করায় ব্যবধানটি কমে আসছে। ইউনিটমূল্যে ডিসকাউন্ট বা প্রিমিয়ামকে সম্পদ ব্যবস্থাপকের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থারও একটি প্রতিফলন বলে মনে করেন তিনি।
২০১৬ সালে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স বেড়েছিল ৮ দশমিক ৮ শতাংশ, যেখানে মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর সম্পদমূল্য (চলতি বাজারমূল্যে) বেড়েছিল ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০১৭ সালের প্রথম সাত মাসে এ প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক শূন্য ২ শতাংশে, যেখানে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ১৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে। ১ জানুয়ারি থেকে গত সপ্তাহ পর্যন্ত এনএভি প্রবৃদ্ধিতে সবার উপরে রয়েছে ভিআইপিবি এএমসি। তাদের দুটি তহবিলের সম্পদমূল্য বেড়েছে ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ। টানা অন্তত চার বছর ধরে তারা এনএভি প্রবৃদ্ধিতে শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে।
গত সাত মাসে এনএভি প্রবৃদ্ধিতে এর পরপরই রয়েছে যথাক্রমে আইসিবি এএমসিএল, এশিয়ান টাইগার্স, এইমস, রেস, ভ্যানগার্ড, এল আর গ্লোবাল, এসইএমএল ও সিএপিএম।
২০১৬ সালে এনএভি প্রবৃদ্ধিতে সবার ওপরে ছিল যথাক্রমে ভিআইপিবি, এইমস, এশিয়ান টাইগার্স, আইসিবি এএমসিএল, রেস, এল আর গ্লোবাল, এসইএমএল ও ভ্যানগার্ড।