সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে আসছে বিস্ফোরক। হাত বদল হয়ে শক্তিশালী এসব বিস্ফোরক চলে যাচ্ছে জঙ্গিদের কাছে। আর নাশকতার কাজে জঙ্গিরা ব্যবহার করছে এসব বিস্ফোরক। সিলেটে গত সোমবার রাতে বিস্ফোরকের এমন একটি চালান র্যাবের হাতে আটকের পর এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
জানা যায়, সিলেট বিভাগের তিনদিকই হচ্ছে ভারত বেষ্টিত। এর মধ্যে সিলেট জেলার জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট এবং সুনামগঞ্জের ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার সীমান্তের ওপারে ভারতের বেশ কয়েকটি কয়লা ও চুনাপাথর খনি রয়েছে। এসব খনি থেকে কয়লা ও পাথর উত্তোলনে শক্তিশালী বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়। বিস্ফোরণের মাধ্যমে কয়লা ও চুনাপাথর ভেঙে পরে সেগুলো উপরে তুলে আনা হয়।
সূত্র জানায়, এসব বিস্ফোরকের মধ্যে হাই এক্সপ্লোসিভ পাওয়ার জেল ও ইলেকট্রিক ডেটোনেটর কয়লা ও পাথর খনি থেকে চোরাই পথে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। একাজে সিলেট ও সুনামগঞ্জের একাধিক চক্র সক্রিয় রয়েছে। এসব বিস্ফোরক দেশের ভেতর ঢুকে কয়েকবার হাত বদল হয়ে চলে যায় জঙ্গি ও নাশকতাকারী চক্রের হাতে। পরে সেগুলো কাজে লাগিয়ে তৈরি করা হয় আরো শক্তিশালী বিস্ফোরক। যা জঙ্গি ও সন্ত্রাসী চক্র তাদের নাশকতার কাজে ব্যবহার করে থাকে।
সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে আসা বিস্ফোরকের এরকম একটি চালান গত সোমবার রাতে জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত ইউনিয়নের চতুল বাজার এলাকায় ধরা পড়ে র্যাবের অভিযানে। ওই চালানে ছিল ৩০টি হাই এক্সপ্লোসিভ পাওয়ার জেল ও ৩০টি ইলেকট্রিক ডেটোনেটর।
মঙ্গলবার র্যাব-৯ এর সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক লে. কর্ণেল আলী হায়দার আজাদ আহমেদ জানান, বিস্ফোরকের এই চালানটি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের লাটুম্বাই কয়লা খনি থেকে এসেছে। কয়লা খনির কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাধ্যমে সীমান্তের দুর্গম এলাকা দিয়ে কয়েকবার হাত বদল হয়ে এই বিস্ফোরকগুলো বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এই বিস্ফোরকগুলো এতোই শক্তিশালী যে, এগুলো দিয়ে তিনতলা অন্তত তিনটি ভবন উড়িয়ে দেয়া সম্ভব।
ওই র্যাব কর্মকর্তা আরও জানান, সিলেটের দক্ষিণ সুরমার আতিয়া মহলে জঙ্গি আস্তানায় যেসব বিস্ফোরক পাওয়া গেছে তার সঙ্গে জৈন্তাপুর থেকে উদ্ধারকৃত বিস্ফোরকের হুবহু মিল রয়েছে। এতে ধারণা করা হচ্ছে-ভারত থেকে আসা বিস্ফোরকগুলো জঙ্গিদের হাতে যাচ্ছে। সিলেট ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীরা তাদের নাশকতার কাজে এসব বিস্ফোরক ব্যবহার করছে বলে ধারণা করছেন এই র্যাব কর্মকর্তা।
র্যাব-৯ অধিনায়ক জানান, গত এপ্রিল মাসে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার সীমান্ত দিয়ে আসা বিস্ফোরকের আরও একটি চালান আটক করা হয়েছিল। ওই চালানের বিস্ফোরকগুলোও ভারতের কয়লা খনি থেকে এসেছিল। তাই ধারণা করা হচ্ছে সিলেটের যেসব সীমান্তের ওপারে ভারতের কয়লা ও চুনাপাথর খনি রয়েছে সেসব সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে বিস্ফোরক আসতে পারে।
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, সীমান্ত দিয়ে যাতে কোন বিস্ফোরক ঢুকতে না পারে সেজন্য এখন থেকে র্যাবের নজরদারি আরও বাড়ানো হবে। এছাড়া বিস্ফোরক চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত পুরো গ্রুপকে আটক করতে র্যাবের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।