আইনি জটিলতায় রমেক হিমঘরে ৪ বছর ধরে ৪ লাশ

Slider টপ নিউজ

68156_ong

 

 রংপুর:   রংপুর মেডিকেল  কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে ৪ বছর ধরে পড়ে থাকা নিপা রানীসহ চার লাশের তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ায় হাসপাতালসহ প্রশাসন মহলে সর্বত্রই ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। আইনগত জটিলতার কারণে বছরকে বছর ধরে লাশ পড়ে থাকায় এখন সেটি কংকালে পরিণত হয়েছে। যা দেখে চেনার উপায়ও নেই।
এদিকে রমেক হাসপাতালে মৃত নিপা রানীর ফাইল কোথায় তা কেউ খুঁজে পাচ্ছে না। হাসপাতালের পরিচালক ওয়ার্ড মাস্টারকে দায়ী করলেও ওয়ার্ড মাস্টার হাসপাতালের প্রশাসনকে দায়ী করছে। এনিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে চলছে পাল্টা পাল্টি অভিযোগ। সরজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার বামনিয়া এলাকার অক্ষয় কুমারের মেয়ে নিপা রানী।
নিপা পার্শ্ববর্তী বোরাগাড়ি গ্রামের জহুরুল ইসলামের ছেলে হুমায়ুন কবীর রাজুর প্র্রেমে পড়ে গত ২০১৩ সালে প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে বিয়ে করে। এ বিয়ের বিষয়টি মেনে নেননি নিপার বাবা অক্ষয় কুমার। তিনি এ ঘটনায় রাজুকে আসামি করে অপহরণ মামলা করেন। পুলিশ রাজুকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠালে নিপার বাবা জোর করে মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে যান। এরই মধ্যে জামিনে মুক্তি পায় রাজু। ওদিকে নিপার পিতা তার মেয়ের ওপর শুরু করে নির্যাতন। একপর্যায়ে নিপা বিষ পান করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। প্রেমিকার মৃত্যু খবর শুনে রাজুও বিষ পান করে আত্মহত্যা করে। শুরু হয় নিপার লাশ নিয়ে টানাটানি। হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের কারণে দ্বন্দ্ব লেগে যায়। লাশের দুইজন দাবিদার হওয়ায় আইনগত জটিলতা সৃষ্টি হয়। মেয়ের লাশ নিয়ে সৎকার করতে চেয়েছেন হিন্দু সমপ্রদায়ের বাবা, অপরদিকে পুত্রবধূর লাশ নিয়ে দাফন করতে চেয়েছেন মুসলিম শ্বশুর। নিপা রানীর বাবা অক্ষয় কুমার তার মেয়ের লাশ দাবি করে আদালতে মামলা করেন। অন্যদিকে তার স্বামী রাজুর বাবা জহুরুল ইসলামও পুত্র বধূর লাশ দাবি করেন। ফলে মামলার নিষপত্তি না হওয়া পর্যন্ত লাশ কার জিম্মায় দেয়া হবে তা নির্ধারণ করা যাচ্ছে না বলে জানান আদালত। সেই থেকে নিপার লাশ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেথ হাউজে রাখা হয়। এ মামলা এখন হাইকোর্টে বিচারাধীন। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার মাহমুদ হাসান। তিনি বলেন, নীপার বাবা ও রাজুর বাবা দুজনেই লাশ দাবি করছেন। আদালতের সিদ্ধান্ত ছাড়া কাউকেই লাশ দেয়া যাবে না। এদিকে ডেড হাউজের সব ফ্রিজ নষ্ট থাকায় লাশগুলো কংকাল হয়ে গেছে। এখন লাশগুলো শনাক্ত করার উপায় নেই। ওদিকে আরো দেখা যায়, হাসপাতালের ডেথ হাউজ দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে রাখা ৩টি বেওয়ারিশ লাশের মধ্যে একজন নারী ও দুই জন পুরুষ। এর মধ্যে গত ৩০শে এপ্রিল ২০১৫ সালে এক ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি হয়। ৩রা মে ২০১৫ ইং তারিখে তিনি মারা যান। ওই ব্যক্তির কোনো নাম ঠিকানা না থাকায় হাসপাতালের ডেড হাউজে তার লাশ রেখে দেয় হাসপাতাল কতৃপক্ষ।
২০১৫ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর এক নারী হাসপাতালে ভর্তি হন এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার লাশও বেওয়ারিশ হিসেবে ডেথ হাউজে রেখে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অন্য লাশটি কবে থেকে ডেথ হাউজে পড়ে আছে তার দিন তারিখ সাল কিছুই বলতে পারেনি হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টারসহ সর্দ্দার অফিস। ছেলের পিতা জহুরুল ইসলাম জানান, নীলফামারী আদালতে নিপা এফিডেভিট করে মুসলিম হয়ে তার ছেলেকে বিয়ে করে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস তারা দুইজনই মারা গেছে। তিনি তার পুত্রবধূর লাশ দ্রুত দাফনের অনুমতি চান। ডোমার উপজেলার বামনিয়া ইউনিয়নের ওয়ার্ড সদস্য খুরশিদ আলম তিতাস ও গোদাগাড়ী ইউপি সদস্য রাশেদুজ্জামান জানান, আইনি জটিলতায় প্রায় ৪ বছর লাশ হিমঘরে পড়ে থাকাটা দুঃখজনক। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মউদুদ হোসেন জানান, এ মাসেই এখানে যোগদান করেছেন। লাশগুলো কেন দীর্ঘ দিন ধরে পড়ে আছে সে ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না। কাগজ পত্র দেখে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *