জনগণের সেবার জন্যই রাজনীতি করি

Slider ফুলজান বিবির বাংলা

67874_f2

 

ঢাকা; প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা ঘূর্ণিঝড় ‘মোরায়’ ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, আমরা জনগণের সেবার জন্যই রাজনীতি করি। কেবল সরকারে নয়, বিরোধী দলে থাকতেও যেকোনো দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের নিত্যসঙ্গী। কিন্তু সেই দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। এই ধরনের দুর্যোগে মানুষের জীবন রক্ষাই আমাদের প্রথম লক্ষ্য। তাই দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসনে যা যা করার তার সবই করা হবে।
গতকাল সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠকে সরকারি ও বিরোধী দলের একাধিক এমপির লিখিত ও সম্পূরক প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। বুধবার সকাল সাতটায় অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা সফর শেষে দেশে ফিরেই সংসদ অধিবেশনে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। তার এই ক্লান্তিহীন পরিশ্রমের ভূয়শী প্রশংসাও করেন প্রশ্নকর্তা স্বতন্ত্র এমপি ডা. রুস্তম আলী ফরাজী। সরকারি দলের সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসবেই। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাসও হবে। কিন্তু ওই সময় আমাদের প্রথম কর্তব্য মানুষের জীবন রক্ষা করা। আমরা সতর্ক আছি। যখনই ঘূর্ণিঝড়ের আভাস পাই, তখনই কতটুকু ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে এবং সেগুলো মোকাবিলায় কার কী করণীয় তা নির্ধারণ করে মানুষের পাশে ছুটে যাই। সব ধরনের আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ করি বলেই দুর্যোগ মোকাবিলা করতে আমরা সক্ষম হই। ঘূর্ণিঝড় মোরায় ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আল্লাহর রহমতে যে পরিমাণ ক্ষতি হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। সাগরে ভাটা থাকায় ক্ষয়ক্ষতি অনেক কম হয়েছে। তবে প্রচুর ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে, গাছপালা ভেঙে পড়েছে। সরকার ও সচেতন প্রশাসন দুর্যোগ মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি ও পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি বলেন, ভিয়েনা সফরে থাকতেই ঘূর্ণিঝড় মোরা মোকাবিলায় সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। ইতোমধ্যে নৌবাহিনীর দুইটি জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গিয়ে ত্রাণ তৎপরতাসহ মানুষের জানমাল রক্ষায় পদক্ষেপ নিয়েছে। বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারও প্রস্তুত রয়েছে। প্রয়োজনে সেগুলোকেও ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজে লাগানো হবে। তিনি জানান, বুধবার সকালে দেশে ফেরার পরপরই তিনি গণভবনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে। দলের পক্ষে একাধিক টিমও গঠন করা হয়েছে। যেগুলো আজ-কালের মধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গিয়ে ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজ শুরু করবে। কেমন ক্ষতি হয়েছে, পুনর্বাসনে কী কী করণীয় সেগুলোও তারা (আওয়ামী লীগ) নির্ধারণ করে সুপারিশ করবে। সরকার, প্রশাসন, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পাশাপাশি রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও ঘূর্ণিঝড় মোরায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কল্যাণে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত সব বাড়িঘর মেরামত করে দেয়া হবে। খাদ্য ও নগদ সহায়তার পাশাপাশি পুনর্বাসনে সবকিছু করা হবে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সরকার নির্মিত সাইক্লোন সেন্টার ‘মুজিব কেল্লা’র উন্নয়নসহ নতুন নতুন সাইক্লোন সেন্টার তৈরি ও উন্নয়নে তার সরকারের পদক্ষেপগুলোও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। এ প্রসঙ্গে ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানি ও ব্যাপক সম্পদহানি হলেও তৎকালীন বিএনপি সরকারের নিদারুণ ব্যর্থতার চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা ও মানুষের জানমাল রক্ষায় বিএনপি সরকারের কোনো পূর্বপ্রস্তুতিই ছিল না। এ কারণে লাখ লাখ মানুষ মারা যায়, ঘরবাড়ি ও সম্পদ ধ্বংস হয়। বিপুল সংখ্যেক গবাদিপশু ভেসে যায়। নৌবাহিনীর জাহাজ ও বিমানবাহিনীর উড়োজাহাজও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সে সময় বিরোধী দলে থাকলেও আমরা দলের সব সংসদ সদস্যকে নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। ত্রাণ সহায়তার পাশাপাশি এমনকি মারা যাওয়া মানুষের মরদেহ উদ্ধার ও দাফনের পদক্ষেপও নিয়েছিলাম। তিনি বলেন, ওই সময় আমি সংসদে দাঁড়িয়ে লাখ লাখ প্রাণহানি ও ব্যাাপক সম্পদ ধ্বংসের কথা তুলে ধরলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘যত মানুষ মারা যাওয়ার কথা ছিল, তত মানুষ মারা যায়নি।’ আমি তাকে প্রশ্ন করেছিলাম, ‘কত মানুষ মারা গেলে আপনার তত মানুষ হতো?’ খালেদা জিয়া এই প্রশ্নের জবাব দেননি। কত লাখ মানুষ মারা গেছে, কত গবাদিপশু ভেসে গেছে, কত ঘরবাড়ি ও গাছপালা ধ্বংস হয়েছে- তার খোঁজখবরও বিএনপি সরকার রাখেনি। সরকারি দলের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আবদুল্লাহের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাওরসহ দুর্গত এলাকায় নদীভাঙন রোধে বাঁধ নির্মাণসহ প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু হয়েছে। এটি শেষ হলে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজও শুরু হবে। তবে এই কাজগুলো একসঙ্গে শুরু ও শেষ করার পদক্ষেপ নিতে হবে। কেননা একপর্যায়ের কাজ শেষ হওয়ার আগেই বর্ষা মৌসুম এসে যাওয়ায় আবারও নদীভাঙন শুরু হয়ে যায়। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হাওর, বাওর ও বিলের উন্নয়নে সরকার ইতোমধ্যেই হাওর উন্নয়ন বোর্ড গঠন করেছে। এই কার্যক্রমগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন দরকার। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড ঢিমেতালে চললে চলবে না। এই কাজগুলোতে গতিশীলতা আনতে হবে।
ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংসদে হাজিরা দিলেন প্রধানমন্ত্রী
এদিকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংসদের হাজিরা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে তিনি সংসদ সচিবালয় থেকে ডিজিটাল পরিচয়পত্র গ্রহণ করেন। নীল ফিতায় সবুজ রঙের নতুন ওই পরিচয়পত্র গলায় ঝুলিয়ে বুধবারের প্রশ্নোত্তর পর্বে তাকে অংশ নিতে দেখা গেছে। সংসদ সদস্যদের হাজিরা গণনা ব্যবস্থা ডিজিটাল করার অংশ হিসেবে নতুন এই পরিচয়পত্র আইনপ্রণেতাদের দিচ্ছে সংসদ সচিবালয়। এর আগে সংসদ সদস্যরা খাতায় সই করে হাজিরা দিতেন। জানা গেছে, গত কয়েকটি অধিবেশনে সংসদ সদস্যরা জিডিটাল পদ্ধতিতে হাজিরা দিচ্ছেন। তবে এখনও সব এমপি এই ডিজিটাল কার্ড পায়নি। সংসদ কক্ষের প্রবেশপথগুলোয় বসানো ডিজিটাল মেশিনে কার্ড মেশিনে পাঞ্চ করে ঢুকতে হবে। একইসঙ্গে সংসদ সদস্যদের জন্য পর্যায়ক্রমে ডিজিটাল পরিচয়পত্র ইস্যু করা হচ্ছে। সব সদস্যদের হাতে এই পরিচয়পত্র পৌঁছে গেলেই পূর্ণাঙ্গভাবে ডিজিটাল হাজিরা চালু হবে। সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে, চলতি অধিবেশন থেকে হাজিরা গণনা ডিজিটাল করা হয়েছে। সব সংসদ সদস্য নতুন ডিজিটাল পরিচয়পত্র পেলে এটা পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *