১৩ মণ সোনার বৈধতার কাগজ দেখাতে পারেনি আপন

Slider অর্থ ও বাণিজ্য ঢাকা

003401gold_ornament_pic_kk

 

 

 

 

ঢাকা ঃ  শুল্ক গোয়েন্দাদের অভিযানে আটক সোনা-গহনার বৈধতার কাগজ আপন জুয়েলার্স কর্তৃপক্ষ দেখাতে পারেনি বলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান জানিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার আপন জুয়েলার্সের তিন মালিক দিলদার আহমেদ এবং তার দুই ভাই গুলজার আহমেদ ও আজাদ আহমেদকে দ্বিতীয় দফা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তিনি এ তথ্য জানান।

আপন জুয়েলার্স থেকে আটক করা সাড়ে ১৩ মণ স্বর্ণালঙ্কার ও ৪২৭ গ্রাম হীরা মজুদের স্বপক্ষে কিছু কাগজপত্র নিয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরে হাজির হন তিন ভাই। সকাল ১১ টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হন তারা।

পরে মইনুল খান বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে তারা ২০০ জন ব্যক্তি বিভিন্ন সময়ে ২০০ গ্রাম করে স্বর্ণ বহন (ব্যাগেজ রুলে) করেছেন এমন কাগজের ফটোকপি দেখায়। কিন্তু ওই ব্যক্তিদের কাছ থেকে তারা এই সোনাগুলো কিনে নিয়েছেন কি না এমন কোনো রশিদ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে পারেনি।

ব্যাগেজ রুলসে আনা স্বর্ণ কমার্শিয়াল কোনো কাজে ব্যবহার করা যায় না। তাদের অপকর্ম ধামাচাপা দেওয়ার জন্য তারা এই কাগজগুলো সংগ্রহ করেছে। এছাড়া আপন জুয়েলার্সের মালিকরা আয়কর ও ভ্যাটের দলিলে যে পরিমাণ স্বর্ণ মজুদ থাকার কথা বলেছেন তার সঙ্গে আটক স্বর্ণের পরিমাণের বিস্তর ফাঁরাক রয়েছে বলে তিনি জানান।

দিলদার আহমেদের বড় ছেলে সাফাত আহমেদ ও তার বন্ধুদের বিরুদ্ধে জন্মদিনের পার্টির কথা বলে বনানীর একটি রেস্তোরাঁয় দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হওয়ার পর প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মধ্যে আপন জুয়েলার্সের মালিকদের সম্পদ নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে শুল্ক গোয়েন্দারা।

গত ১৪ ও ১৫ মে গুলশানের ডিসিসি মার্কেট, গুলশান এভিনিউ, উত্তরা, মৌচাক ও জিগাতলার সীমান্ত স্কয়ারে আপন জুয়েলার্সের শো-রুমে অভিযান চালিয়ে প্রায় সাড়ে ১৩ মণ স্বর্ণালঙ্কার ও ৪২৭ গ্রাম হীরার গয়না আটক করেন তারা।

ওই স্বর্ণালঙ্কারের বৈধতার কাগজপত্র দেখাতে বললে গত ১৭ মে প্রথম দফায় শুল্ক গোয়েন্দাদের মুখোমুখি হন আপন জুয়েলার্সের মালিকরা। সেদিন কাগজপত্র দেখানোর জন্য তারা আরও ১৫ দিন সময় চেয়ে লিখিত আবেদন করেন। এ প্রেক্ষাপটে শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও দলিল সংগ্রহ করে ২৩ মে তাদের সশরীরে হাজির হয়ে মজুদ স্বর্ণ ও ডায়মন্ডের বিষয়ে শুনানিতে অংশ নেওয়ার নির্দেশ দেয়।

কিন্তু সেদিন হাজির না হওয়ায় শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ তাদের আরও সাত দিন সময় দিয়ে ৩০ মে কাগজপত্রসহ হাজির হতে বলে। এদিনও কাগজপত্র দেখাতে না পারায় শুল্ক গোয়েন্দা প্রধান মঈনুল খান বলেন, এসব সোনা চোরাচালানের মাধ্যমে অস্বচ্ছ ও অবৈধ উপায়ে আনা হয়েছে ধারণা করছেন তিনি।

আপন জুয়েলার্স থেকে যে স্বর্ণগুলো আটক করা হয়েছিল, তার বৈধ কাগজপত্র দেখানোর জন্য তাদের তিনবার সময় দেওয়া হয়েছিল। তারা বলেছিল- তাদের শোরুমে কাগজপত্র আছে।

কিন্তু তারা স্বর্ণগুলো কোথা থেকে কিনেছেন, তার স্বপক্ষে কোনো ধরনের বৈধ ও বিশ্বাসযোগ্য কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। তারা যে কাগজগুলো জমা দিয়েছেন তার বৈধতার বিষয়ে আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখব।

মঙ্গলবারই আপন জুয়েলার্সের মালিকদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সময় শেষ হয়েছে জানিয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, এখন তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে ৮৫ জন গ্রাহকের দাবির প্রেক্ষাপটে আটক সোনার মধ্য থেকে ২ দশমিক ৩৩ কেজি সোনা সোমবার তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

শুল্ক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে কাগজপত্র যাচাই শেষে আপনের পাঁচটি শাখায় গ্রাহকদের কাছে ওই সোনা ফিরিয়ে দেওয়ার কথা জানান শুল্ক গোয়েন্দা প্রধান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *