আগামী সংসদ নির্বাচনের সর্বাত্মক প্রস্তুতির নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

Slider জাতীয় ঢাকা সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী

232542Hasina-09_kalerkantho_pic

 

 

 

 

 

ঢাকা ; প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এখন থেকেই নির্বাচনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামার জন্য দলের সংসদ সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছি বলে আত্মতুষ্টিতে ভুগলে কিংবা নির্বাচনকে সহজভাবে নিলে চলবে না। আগামী নির্বাচন কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং হবে। তাই জনপ্রিয়তা ছাড়া কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। এলাকায় দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ দ্রুত নিষ্পত্তি করারও নির্দেশ দেন তিনি।

রবিবার রাতে জাতীয় সংসদ ভবনের নবম তলাস্থ সরকারি দলের সভাকক্ষে আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে স্বতন্ত্র ১১ জন সংসদ সদস্য প্রথমবারের মতো এই বৈঠকে অংশ নেন। তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। এখন থেকে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করুন। দলের নেতা-কর্মীদের উপেক্ষা করলে কিন্তু আপনারা আগামীতেও মনোনয়ন পাবেন না। যার যার এলাকায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে দূরত্ব রয়েছে তা দ্রুত সমাধান করে দলকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলুন। আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হতে এখন থেকেই সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামুন।

সংসদীয় দলের বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আগামী নির্বাচন যথাসময়েই অনুষ্ঠিত হবে। তাই এখন থেকেই নির্বাচনী এলাকায় থেকে জনগণের মন জয় করুন, সরকারের গত আট বছরের ব্যাপক সাফল্যেগুলো তুলে ধরুন। মনে রাখবেন, দিন শেষে কিন্তু জনগণের কাছেই যেতে হবে। সরকারের জনকল্যাণমুখী কাজগুলো দেশবাসীর সামনে তুলে ধরুন। জনগণের মন জয় করুন, কর্মীদের মূল্যায়ন করুন।

দলের মধ্যে কোন ধরনের কোন্দল-দ্বন্দ্বের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, দলের মধ্যে কোন ধরনের বিভেদ-অনৈক্য বরদাস্ত করা হবে না। সারাদেশের তিনশ’ আসনের জরিপ রিপোর্ট ও প্রকৃত চিত্র আমার কাছে আছে। আরো জরিপ চালাবো। নির্বাচনী এলাকায় কার কী অবস্থা, জনসমর্থন কার কেমন, আর কারা জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন- সব রিপোর্ট আমার কাছে রয়েছে। তাই সবাই সাবধান হয়ে যান, নির্বাচনী এলাকায় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে জনগণের ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করুন। যার বিরুদ্ধে দলের মধ্যে বিশঙ্খলা সৃষ্টি করবে তাদের কাউকেই ক্ষমা করা হবে না।
রাত ৮টা থেকে পৌনে ১০টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বৈঠকের পুরোটাই ছিল নির্বাচনী তত্পরতা বৃদ্ধির প্রসঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী বারংবার এমপিদের সরকারের উন্নয়ন-সাফল্যেগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরার নির্দেশ দেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বেশ ক’জন এমপির পরীক্ষাও নেন বৈঠকে। তিনি বেশ কয়েকজন এমপির কাছ থেকে জানতে চান- সরকার কতজন শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে বই দিয়েছে? কতজনকে ভিজিএফ কার্ড দেয়া হচ্ছে? কতজনকে অসহায়-বিধবা ভাতা দেওয়া হচ্ছে। এ সময় বেশিরভাগ এমপিই প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী এমপিদের আরো বেশি পড়াশুনা করা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আরও বেশি সম্পৃক্ত হওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন, আমরা এতো আর্থ-সামাজিক বিপ্লব ও উন্নয়ন করেছি। এমপিরাই যদি এসব বিষয়ে অজ্ঞ হোন তবে আমরা জনগণকে কীভাবে অবহিত করব। তাই জনগণের জন্য আমরা কী কী কাজ করছি তা জনগণের সামনে তুলে ধরুন। নিজ নিজ এলাকার উন্নয়নগুলো ভোটারদের ঘরে ঘরে গিয়ে জানান, সামাজিক গণমাধ্যমেও সবকিছু তুলে ধরুন। এমপিদের হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, আমি কারোর দায়িত্ব নিতে পারব না। নিজের আসনে নিজে প্রস্তুত হোন। জনবিচ্ছিন্ন কাউকে কিন্তু মনোনয়ন দেব না, তিনি যত বড়ই নেতা হোন না কেন। জনগণের কাছে যেতে হবে, কর্মীদের মূল্যায়ন করতে হবে। মনে রাখবেন- দিন শেষে কিন্তু জনগণের কাছেই যেতে হবে।

সরকারের উন্নয়ন-সফলতার পূর্নাঙ্গ চিত্র জনগণের সামনে তুলে ধরার পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত জোটের অগ্নিসন্ত্রাস, নাশকতা, পুড়িয়ে মানুষ হত্যা, দুর্নীতি, অর্থ পাচারের চিত্রগুলোও তুলে ধরার জন্য এমপিদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী এই অপশক্তিরা সরকারের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। তাই সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থেকে জনগণের কাছে তাদের নেতিবাচক ও দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডগুলো তুলে ধরতে হবে। জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের কঠোর অবস্থান অব্যাহত থাকবে। জনগণকে এ ব্যাপারেও ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। আর অতীতে আপনারা কে কী ভুল করেছেন, তা চিহ্নিত করে উদ্যোগী হয়ে সেসব ভুল সংশোধনের চেষ্টা করুন।

একাধিক সদস্য জানান, বৈঠকে ড. হাছান মাহমুদ, আতিউর রহমান আাতিক, তারানা হালিম, মোতাহার হোসেন, ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন, জুনাইদ আহমেদ পলক, সাধন চন্দ্র মজুমদার, ডা. হাবিবে মিলস্নাহ মুন্না প্রমূখ সংসদ সদস্যরা বৈঠকে নির্বাচনী কৌশলসহ নিজ নিজ এলাকার সমস্যাগুলো তুলে ধরেন। এমপিদের জন্য থোক বরাদ্দ বৃদ্ধি, এমপিদের এলাকার সমস্যা সমাধানে মন্ত্রীদের সহযোগিতার হাত বৃদ্ধির নির্দেশ দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। কেউ কেউ অভিযোগ করেন, অনেক মন্ত্রীই কথা দিয়ে কথা রাখেন না। এমপিরা নিজের এলাকার সমস্যা নিয়ে গেলে অনেক মন্ত্রীই বিমাতাসুলভ আচরণ করেন। দু’জন এমপি থোক বরাদ্দের এক কোটি টাকার মধ্যে ৫০ লাখ টাকা সোলার প্যানেলে ব্যয় করার পরামর্শ দেন।

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের অংশগ্রহণ: বৈঠক সূত্র জানায়, বর্তমান সংসদের ১৬ জন স্বতন্ত্র সদস্যের মধ্যে ৫ জন অংশ নেননি। তাঁরা হলেন- ডা. রুস্তম আলী ফরাজী, মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন, মকবুল হোসেন, রহীম উল্লাহ ও উষাতন তালুকদার। বাকী ১১ জনকে দলীয় সদস্য হিসেবে পরিচয় দেওয়ার জন্য বৈঠক থেকে বলা হয়।

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের পক্ষ থেকে বৈঠকে বক্তব্য রাখেন সাবেক এফবিসিসিআই সভাপতি ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন। তিনি বলেন, একটি বিশেষ প্রেক্ষাপটে গত নির্বাচনে আমরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলাম। আগামী নির্বাচনে আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে নেব। তাঁর নির্দেশে নৌকা প্রার্থীরা বিজয়ী হবেন বলেন তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের সম্পাদক নূর ই আলম চৌধুরী লিটন সাংবাদিকদের বলেন, স্বতন্ত্র এমপিরা আমাদের দলেরই নেতা। তাঁদের আনুষ্ঠানিক যোগদানের প্রয়োজন পড়ে না। তবে বৈঠক থেকে আমরা স্বতন্ত্র এমপিদের আওয়ামী লীগ দলের সদস্য হিসেবে গ্রহণ করেছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *