ধর্ষিতা বললো ‘আমি বিচার চাই না’

Slider নারী ও শিশু

64620_ape
বড়াইগ্রাম (নাটোর) প্রতিনিধি; নাটোরের বড়াইগ্রামের মাঝগাঁও ইউনিয়নের ছাইতানগাছা গ্রামের দশম শ্রেণির স্কুলছাত্রী (১৫) কে বিয়ের প্রলোভনে এক বছর বিভিন্ন জায়গায় আটকে রেখে ধর্ষণ ও এর ফলে সন্তান জন্মদানের ঘটনায় দায়ী প্রদীপ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে তার কোনো অভিযোগ নেই বলে জানিয়েছে। পাশাপাশি পরিবারসহ একঘরে করার ঘটনা সত্য নয় বলে জানায়।
গতকাল সকালে উপজেলার বনপাড়া ক্যাথলিক চার্চ প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ওই কিশোরী এ কথা জানায়। তবে, শিশুটির পিতার স্বীকৃতি সে চেয়েছে। শনিবার দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ‘ধর্ষিতার সন্তানকে এতিমখানায় না দেয়ায় একঘরে  শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদে বলা হয়েছে গ্রামপ্রধান উজ্জ্বল ক্রুশ শিশুটিকে এতিমখানায় না দেয়া পর্যন্ত একঘরে করে রাখার  ফতোয়া দেন। এর আগে গ্রাম্য সালিশ করে ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে প্রদীপের কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে সেখান থেকে ৮ হাজার টাকা নিজেরা রেখে বাকি টাকা মেয়েটির হাতে তুলে দেন।
শ্বশুরবাড়ি সূত্রে মেয়েটির সঙ্গে পরিচয় ঘটে বড়াইগ্রামের পার্শ্ববর্তী লালপুর উপজেলার আড়বাব ইউনিয়নের ছালামপুর নওদাপাড়া গ্রামের বৈদ্যনাথ বিশ্বাসের ছেলে প্রদীপ বিশ্বাস (৩৬) এর। প্রদীপের সংসারে রয়েছে স্ত্রী ও ৬ বছর বয়সী এক ছেলে সন্তান।  পরিচয়ের সূত্র ধরে একপর্যায়ে প্রদীপ ওই মেয়েটিকে ফুসলিয়ে ধর্ষণ করে। পরে ঢাকা ও রাজশাহী শহরে প্রায় এক বছর স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস করে এবং এর ফলে মেয়েটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়। কিন্তু গ্রামে এই সন্তান নিয়ে থাকা চলবে না বলে জানায় গ্রাম প্রধান উজ্জ্বল ক্রুশ। সন্তানকে এতিমখানায় না দেয়া পর্যন্ত একঘরে করা হয়। এ ঘটনা মানবজমিনের স্থানীয় প্রতিনিধি জানলে তিনি  মেয়েটির বাড়ি যান। এ সময় তার মা ও মেয়েটি সব ঘটনা খুলে বলেন। তবে তখনই তারা অনুরোধ করেছিলেন যেন পত্রিকায় প্রকাশ না করা হয়।  মেয়েটি তখন জানায়, এমনিতে আমরা খুব গরিব মানুষ। যদি পত্রিকায় প্রকাশ করা হয় তাহলে আমাদের আরো বড় ক্ষতি হবে।
ওদিকে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর উজ্জ্বল ক্রুশসহ স্থানীয় খ্রিষ্টান নেতৃবৃন্দ মেয়েটির সঙ্গে যোগাযোগ করে। এরপর শনিবার বিকালে এ ব্যাপারে একটি জরুরি সভায় মিলিত হয়। পরের দিন রোববার সকালে খ্রিষ্টান প্যারিস কাউন্সিলের সহ-সভাপতি বেনেডিক্ট গমেজ স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিককে ডেকে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। কিন্তু বিস্ময়ের বিষয় সংবাদ সম্মেলনে ওই নির্যাতিত মেয়েটি একঘরে করার ঘটনা অস্বীকার করছে। অথচ উজ্জ্বল ক্রুশ মোবাইল ফোনে জানিয়েছেন, মেয়েটিকে এর আগেও একটি বিচারে ২৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে। আবারও আরেকটি ঘটনা। তাই আপাতত একঘরে করে রাখা হয়েছে (উজ্জ্বল ক্রুশের এই বক্তব্য মোবাইল ফোনে রেকর্ড করা হয়েছে)। এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে মেয়েটি গ্রামপ্রধান বা ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বাঁচানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এলাকাবাসীর ধারণা, দোষীরা নিজেদের বাঁচাতে নাবালিকা পিতৃহীন ওই নির্যাতিতা গরিব মেয়েটিকে ভয়ভীতি দেখিয়ে অন্য কথা বলাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *