তাকে আর লাগে না ভালো

Slider বাধ ভাঙ্গা মত লাইফস্টাইল

98acd9a45c981babc031882e9ae875cf-58ff9b24d3d45

নাদিয়া নাহরিন; কোনো বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভেবে দেখুন সমস্যা কার। মডেল: নওরীন ও তূর্য, ছবি: অধুনাকিছু আশা, আকাঙ্ক্ষা আর কিছু স্বপ্ন নিয়ে শুরু হয় একটি সংসারের। পথচলায় থাকে একজন সঙ্গী। এই সঙ্গীই হয়ে যায় সবচেয়ে কাছের মানুষ। কিন্তু কথায় আছে, ‘সংসার জীবন বালির বাঁধ’, অর্থাৎ সবচেয়ে কাছের এই মানুষও হয়ে উঠতে পারে অচেনা কিংবা বড় একঘেয়ে। তখন বাকি পথটুকু হয়ে পড়ে মলিন। একই ছাদের নিচে এভাবে থাকা যে দায়! কিন্তু এদিকে স্থায়ী বিচ্ছেদের সিদ্ধান্তও নেওয়া যাচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে কী করণীয়?

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্টের পরামর্শক নুসরাত জাহান বলেন, ‘দাম্পত্যের এই সমস্যায় সবচেয়ে ভালো হয় যদি স্বামী-স্ত্রী দুজনেই এগিয়ে আসেন।’ তিনি ইতিবাচক মানসিকতার কথা বললেন। একে অপরের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব দেখাতে হবে; ‘তোমাকে দিয়ে এটি হবে না’, ‘আমি তোমাকে নিয়ে খুশি নই’—এমন কথা বলা যাবে না। বরং তাকে সাহস দিন, বোঝাতে চেষ্টা করুন আপনার কাছে তিনি কত গুরুত্বপূর্ণ। নুসরাত জাহান বলেন, ‘অন্যের দোষ না দিয়ে ভাবার চেষ্টা করুন আপনার কোন ব্যাপারটি অন্য মানুষকে বিব্রত করছে। প্রয়োজনে তাকে বুঝিয়ে বলুন। তাকে সময় দিন ব্যাপারটি বোঝার।’

দাম্পত্যে কেন এই সমস্যা?

অনেক দম্পতির মনেই প্রশ্ন থাকে, ‘আচ্ছা, এই সমস্যা কি শুধু আমাদের দুজনেরই? কেন এমন?’ যুক্তরাষ্ট্রে করা এক গবেষণার ফলাফলে এর উত্তরটা পাওয়া যায়। অধিকাংশ দম্পতির মধ্যেই এ ধরনের সমস্যা দেখা যায়। এমনকি অবিবাহিত কোনো সম্পর্কের মধ্যেও। আবার বন্ধুত্বের ক্ষেত্রেও এমনটি হয়ে থাকে। তবে হয়তো কারও সমস্যার পরিমাণ বেশি আর কারও কম।

একটি সম্পর্কে এমন সমস্যা কেন দেখা দেয়?

১. অতিরিক্ত অভিযোগ

কোনো সম্পর্কই পুরোপুরি মনের মতো হয় না। কিছু ব্যাপার মেনে নিতে হয়। সেটা স্বামী হোক কিংবা স্ত্রী, দুজনের জন্যই সত্য। তাই আমরা যখন সংসারজীবন শুরু করি, আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যে ভুলত্রুটি মিলিয়েই একজন মানুষ। ঝামেলাসহই একটি সংসারজীবন। এমন কোনো সম্পর্ক নেই, যেখানে ঝামেলা হয় না। তাই এগুলো মেনে নিয়েই সংসার বা একটি সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া উচিত।

২. বারবার জবাবদিহি

প্রত্যেক মানুষের আলাদা একটি জগৎ থাকে। আপনি তার যত কাছের মানুষই হন না কেন, তাকে তার মতো কিছু সময় থাকতে দিন। আপনি নিজেও নিজের কাজগুলোর প্রতি মনোযোগ দিন। বারবার জবাবদিহি করলে তা বিরক্তি তৈরি করে। ফলে একঘেয়েমি চলে আসবেই।

৩. অপরের সঙ্গে তুলনা

কখনোই অপরের সংসারজীবনের সঙ্গে তুলনা করা উচিত নয়। কেননা প্রত্যেকেই তার মতো স্বতন্ত্র। সেটি নিয়েই সুখী থাকুন।

৪. জোর করা

আপনার সঙ্গী যদি কোনো ব্যাপার এড়িয়ে যেতে চান, তাহলে তাঁকে জিজ্ঞেস করুন, কেন তিনি কাজটিকে এড়িয়ে যাচ্ছেন। কোনো কিছুতেই জোর করা ঠিক নয়। হ্যাঁ, আপনার ভালো না-ই লাগতে পারে, সে ব্যাপারটিও অন্যজনকে বুঝতে হবে। তাই বলে দুজনেই চেষ্টা করুন জোর না করা কিংবা অপরের সমস্যা বুঝতে চেষ্টা করা।

তারপরও সমস্যা

এত কিছুর পরও কিন্তু দাম্পত্য জীবনে সমস্যা দেখা দেয়। ক্যালিফোর্নিয়ার মনোবিজ্ঞানী লিয়ান ব্লোচ তাঁর এক গবেষণায় দেখেন, সেখানকার ৬২ শতাংশ দম্পতিই তাঁদের বিবাহিত জীবনে এমন সমস্যার সম্মুখীন হন। একই চিত্র আমাদের চারপাশেও দেখা যাবে। আসলে সমস্যাটা যখন খুব প্রকট হয়, তখন কেউ আর কাউকে একেবারেই সহ্য করতে চায় না। হয়তো আলোচনা করে একে অপরের সমস্যা বুঝতে চাইলে সমস্যাটা তীব্র হয় না। কিন্তু আসলে দুজনের মধ্যে সেই পরিস্থিতিটাই আর থাকে না। আবার এদিকে নিজেদের মধ্যে বিচ্ছেদ নেওয়ার মতো পরিস্থিতিও নেই। হোক সেটা সন্তানের কারণে কিংবা একে অপরের প্রতি দুর্বলতার জন্য। সংসারে স্বামী-স্ত্রীর এ ধরনের সমস্যার ফলে সন্তান এবং দুই পক্ষের পরিবারও বিভিন্ন সমস্যায় পড়ে।

সমাধানটা নিজেরাই করুন

একজন আরেকজনকে সহ্য করতে পারছেন না, কিন্তু তারপরও বিচ্ছেদ চাইছেন না। এমনটি যদি হয়, তাহলে বুঝতে হবে দুজনেরই দুজনার প্রতি দায়বদ্ধতা রয়েছে। সন্তান কিংবা একে অপরের প্রতি দুর্বলতার কারণেও সেটি হতে পারে। আবার বিচ্ছেদ করতে চাইছেন, তারপরও ভেবে দেখুন আপনি কি আসলেই এমন স্থায়ী সমাধান চাইছেন?

এমন অনেক সম্পর্ক থাকে, যা হয়তো একেবারেই শেষ পর্যায়ে। কিন্তু দুজনের চেষ্টায় সেই সম্পর্ক আবারও আগের জায়গায় ফিরে এসেছে। হ্যাঁ, এমন অনেক উদাহরণ পাওয়া যাবে আমাদের বাস্তব জীবনেই। তাই নিজেরাই সমাধানের পথ বেছে নিন।

সময় দিন

না, এখানে সময় দেওয়া বলতে একসঙ্গে কিছু সময় থাকাকে বোঝাচ্ছে না। বরং প্রিয় মানুষকে তার মতো থাকতে দিন। আপনার প্রয়োজনীয়তাটুকু তাকে বুঝতে দিন। দুজনের আনন্দের কিছু মুহূর্ত মনে করুন। ভেবে দেখুন তখন একজন আরেকজনের জন্য যতটা ছাড় দিয়েছেন, এখন কি তা-ই দিচ্ছেন?

ভুল স্বীকার করুন

দুই পক্ষেরই ভুল থাকে। হয়তো কারও কম আর কারও বেশি। চেষ্টা করুন নিজের ভুলটাই আগে স্বীকার করতে। তাহলে বিবাদের কোনো অবকাশই থাকে না। আর রাগের সময় নিজেকে সংযত রাখুন। এটি অনেকেই মেনে চলতে পারেন না। তবে রাগের মুহূর্তে এমন কিছু বলবেন না, যার ফলে আপনার সঙ্গী সব সময় আপনাকে ভুল ভাবে।

ভুলটা মেনে নিন

সঙ্গী যদি অনুতপ্ত হয়ে ভুল স্বীকার করে, তবে সেটা মেনে নিন। ভুল তো মানুষেরই হয়, নিশ্চয়ই কোনো মানুষ সব সময়ই একই রকম থাকে না। তাকে সময় দিন ভুলটা শুধরে নেওয়ার। যদি বারবার তার দোষের কথা বলেন, তাহলে সেটি অপরজনের জন্য খুবই নেতিবাচক হয়ে দাঁড়ায়।

নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া

সবচেয়ে ভালো হয় নিজেরাই যদি খোলামেলা আলোচনা করতে পারেন। কেননা একে অপরকে সবচেয়ে কাছ থেকে চেনেন আপনারা দুজনেই। এবং নিজেদের সমস্যাটাও বুঝবেন আপনারাই। সঙ্গীর কোনো কিছু যদি ভালো না লাগে, সেটা তখনই তাকে জানিয়ে দিন। চেপে রাখবেন না। এরপরও যদি একই ভুল করে থাকে, তবে তাকে পুরো ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলুন।

তৃতীয় পক্ষকে না বলাই ভালো

এ ধরনের সমস্যা তৃতীয় কোনো পক্ষকে না বলাই ভালো। কেননা আপনাদের সমস্যা আপনারাই বুঝবেন। দীর্ঘ একটা সময় দুজন পরস্পরের কাছে ছিলেন, তাই তৃতীয় পক্ষ দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে নিজেরাই আলোচনা করুন।

চেষ্টা করুন

কোনো কিছুই শেষ নয়, এমনকি শেষ মুহূর্ত থেকেও শুরু করা যায়। হ্যাঁ, কেউ কাউকে সহ্য করতে পারছেন না। তারপরও চেষ্টা করুন পথচলার মানুষটিকে খুশি রাখতে। সামান্য দিয়েই শুরু করুন। আপনার এই সামান্য প্রচেষ্টাই অপর মানুষটির কাছে অনেক বড় হয়ে উঠতে পারে। রাগের মুহূর্তগুলো নয়, আনন্দের সময়গুলো মনে করার চেষ্টা করুন। সে সময়ের মতো একটু হলেও চেষ্টা করুন, দেখবেন ধীরে ধীরে সম্পর্কটা আগের মতোই হয়ে উঠছে।

বিশ্বাস হারিয়ে না ফেলা

প্রতিটি সম্পর্কেই ঝগড়া, বিবাদ হয়। তার মানে এই নয় যে এখানেই শেষ। এই সমস্যাগুলোকে গঠনমূলকভাবে দেখার চেষ্টা করুন। বিবাদে সব সময় নিজেকেই জিততে হবে এমন নয়, কেননা সম্পর্কটি আপনাদের দুজনেরই। এবং পাশের মানুষটিও আপনারই চেনা। তাই তাকে বিশ্বাস করুন।

তাই শুরুটা আজ থেকেই হোক না!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *