আলিয়ার দৃষ্টিতে কওমি সনদের স্বীকৃতি

Slider জাতীয়

62356_f1

 

ঢাকা; কওমি মাদ্‌রাসার দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান দেয়ায় খুশি আলিয়া মাদ্‌রাসার আলেমরাও। তাদের কথা, এই স্বীকৃতির ফলে সমাজে পিছিয়ে পড়া বিশাল একটা জনগোষ্ঠী মূল স্রোতধারায় আসবে এবং সমাজ, রাষ্ট্রে অবদান রাখবে। তবে এই স্বীকৃতি যেন শুধু কাগজে না হয় সেদিকে কর্তৃপক্ষ ও কওমি আলেমদের নজর রাখতে হবে। একই সঙ্গে কওমি মান যথাযথভাবে রক্ষা করে তারা যেন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সুযোগ পায় সেটি নিশ্চিত করারও তাগিদ দেন তারা। এই উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশের উদাহরণ টেনে আলেমরা বলেন, কওমি মাদ্‌রাসায় পড়াশুনা করে সেনাবাহিনী, প্রশাসন, বিচার ও শিক্ষা বিভাগের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়েছে। ইসলামের বিভিন্ন জায়গার উচ্চতর গবেষণা করছে। যা সমাজ ও রাষ্ট্রের অবদান রাখছে। বাংলাদেশের কওমি মাদ্‌রাসা শিক্ষার্থীরা যাতে সেই সুযোগ পায় তা নিশ্চিত করতে হবে।
আলেমরা জানান, আমাদের কওমি মাদ্‌রাসায় স্বভাবতই ইসলাঈ বিষয়াবলী, তথা: আল-কুরআন, আল-হাদীস, ইসলামের ইতিহাস এবং আরবি ভাষা ইত্যাদি পড়ানো হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও ইসলামী নানান বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কোর্স পড়ানো হয়। বিভিন্ন ইসলামী বিষয়ে এমফিল-পিএইচডি করারও সুযোগ আছে। অনেক কওমি গ্র্যাজুয়েটের এ সব বিষয়ে শিক্ষকতার মতো যোগ্যতা থাকলেও শুধু কওমি সনদের সরকারি স্বীকৃতির অভাবে শিক্ষকতার আবেদন করা তো দূরের কথা, স্নাতক- স্নাতকোত্তর কোর্সে ভর্তি হওয়ার ন্যূনতম সুযোগ পেতো না। বহির্বিশ্বের বিভিন্ন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও একমাত্র এই সনদের সরকারি স্বীকৃতি না থাকার কারণেই অনেক শিক্ষার্থী আবেদন করতে পারছেন না। এখন সেই আবেদনের সুযোগ হলো। তবে এর জন্য নিচের স্তরের স্বীকৃতির প্রয়োজন হবে। এটাও তাদের আদায় করতে হবে। এটা নিয়ে কওমিপন্থিদের নানান মত আছে। তারপরও জাতীর স্বার্থে একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে।
কওমি মাদ্‌রাসায় পড়াশুনা করে অনেকেই এখন জনপ্রতিনিধিত্বশীল বিভিন্ন নির্বাচনে অংশগগ্রণ করছেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচন থেকে নিয়ে একেবারে সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত অংশ নিচ্ছেন। বর্তমান সরকারের আমলে ইসি বা নির্বাচন কমিশন স্তরভেদে বিভিন্ন নির্বাচনে বিভিন্ন শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্তারোপ করেছেন। এ অবস্থায়, কওমি শিক্ষার কোনোরূপ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না থাকায় সকল কওমি শিক্ষিতই আইনগতভাবে ‘অশিক্ষিত’ প্রমাণিত হবেন এবং কোনো ধরনের নির্বাচনে দাঁড়ানোর যোগ্যতা হারাবেন।
ইসলামী দলগুলোর সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা ও জাতীয় ফতোয়া বোর্ডের সেত্রেুটারি ড. খলিলুর রহমান মাদানী মানবজমিনকে বলেন, কওমি স্বীকৃতি প্রকৃত পক্ষে আমাদের আলেম-ওলামা ও ইসলামের জয়। তারা যদি মান পায়, স্বীকৃতি পায় এটা অবশ্যই আলেম-ওলামাদের জন্য খুবই পজিটিভ। সর্বোপরি ইসলাম ও মুললিম উম্মাহ্‌র জন্য ভালো। এতোদিন যারা সমাজের বিশাল একটি জনগোষ্ঠী মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতো স্বীকৃতি ও মান না থাকার কারণে তারা আজ মূল স্রোতধারায় আসবে। তিনি বলেন, নিচের স্তরের স্বীকৃতি দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য আলাদা সিলেবাস বা বোর্ড করতে পারে। কারণ যে কোনো প্রতিষ্ঠান তাকে ভর্তি করাতে নিচের দিকে সার্র্টিফিকেট চাবে। সংশ্লিষ্টদের এই বিষয়গুলো দেখতে হবে। এটা যেন শুভংকরের ফাঁকি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
বাংলাদেশ মসজিদ মিশনের সভাপতি ও তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্‌রাসার অধ্যক্ষ যাইনুল আবেদীন বলেন, কওমি মাদ্‌রাসার স্বীকৃতি মানে ইসলামী শিক্ষার স্বীকৃতি। এই স্বীকৃতিকে কাজে লাগিয়ে অনেকদূর যেতে পারবে তারা। এজন্য তাদের কারিকুলাম সময়োপযোগী করতে হবে। একই সঙ্গে এটা নিয়ে যাতে আর কেউ তালবাহানা করতে না পারে সেদিকেও নজর রাখতে হবে।
আইয়াম পরিষদের সভাপতি মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী বলেন, লাখ লাখ কওমি শিক্ষিত বাংলাদেশেরই সন্তান। তাদের নানান অফিসিয়াল কাজে বিভিন্ন সরকারি ফরম পূরণ করতে হয়। ফর্মে নাম-ধাম, জন্ম তারিখ, ঠিকানার পরই শিক্ষাগত যোগ্যতার একটা অংশ থাকে। কিন্তু কওমি শিক্ষিতরা এ অংশটুকু পূরণ করতে মারাত্মক বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। কারণ, ফরমে সাধারণ শিক্ষার বিভিন্ন সনদের নাম থাকলেও কওমি শিক্ষার কোনো সনদের নাম নেই। রাষ্ট্রীয়ভাবে এ শিক্ষার স্বীকৃতি থাকলে অবশ্যই বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি ফরমে কওমি সনদের নাম থাকত আর কওমি সনদধারী কেউই বিব্রতবোধের শিকার হতেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *