ভুয়া লাইক ও মন্তব্য ঠেকাতেই ফেসবুকে বন্ধ অভিযান

Slider তথ্যপ্রযুক্তি

th

ঢাকা; ভুয়া অ্যাকাউন্টের সঙ্গে অনেক প্রকৃত অ্যাকাউন্টও বন্ধ হয়ে গেছে বলে অভিযোগ

তবে গত শনিবার এক বিবৃতিতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ জানায়, ভুয়া অ্যাকাউন্ট ঠেকানোর কার্যকর উপায় হিসেবে উন্নত ব্যবস্থা হিসেবে ‘স্প্যাম অপারেশন’ কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরবসহ অন্য কয়েকটি দেশ থেকে আসা ভুয়া লাইক ও মন্তব্য ঠেকাতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ফেসবুক দাবি করেছে, তারা অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত বিশাল একটি গ্রুপকে শনাক্ত করেছে এবং তাদের মাধ্যমে প্রচারিত ভুয়া লাইক সরিয়ে ফেলেছে। ভুয়া অ্যাকাউন্ট সরানোয় যেসব পেজে ১০ হাজারের বেশি লাইক আছে, তাতে ৩ শতাংশ লাইক কমবে।

ভুয়া অ্যাকাউন্টের সংখ্যা কমায় অনেক ফেসবুক পেজে লাইক কমে যাওয়ার বিষয়টি ই-কমার্স ব্যবসায়ীরাও স্বীকার করেছেন। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইক্যাব) সভাপতি রাজীব আহমেদ বলেন, ফেসবুক ভুয়া আর অকার্যকর আইডি বন্ধ করছে, এটি অনেক ভালো একটি উদ্যোগ। এতে লাইক কমে গেলেও তা নিয়ে হতাশ হওয়া উচিত নয়। কারণ, ওই লাইক দিয়ে কখনোই ভালো কিছু হতো না।

জানতে চাইলে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি মোস্তাফা জব্বার প্রথম আলোকে বলেন, ফেসবুকের এ উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়। দেরিতে হলেও ফেসবুক স্বীকার করেছে ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ায় মানুষের পরিচিতি নিশ্চিত না করে কোনো কাজ করতে দেওয়া উচিত নয়। ভুয়া অ্যাকাউন্ট বন্ধ করতে গিয়ে দু-একজন ভুলের শিকার হতেই পারে, এটাকে বড় করে দেখা ঠিক হবে না।

এদিকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম সচিবালয়ে গতকাল রোববার গণমাধ্যমকে জানান, বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে সাড়া দিয়েই ভুয়া পেজ ও অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে ফেসবুক। তবে এ সময়ে কী পরিমাণ ভুয়া অ্যাকাউন্ট বাংলাদেশে বন্ধ করা হয়েছে, তার কোনো হিসাব সরকারের কাছে নেই। সচিবালয়ে ১০ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনে ভুয়া অ্যাকাউন্ট বন্ধে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরকারের একটি সমঝোতা হওয়ার তথ্য জানান তারানা হালিম। গত ৩০ মার্চ সিঙ্গাপুরে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন তারানা হালিম।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, প্রকৃত ফেসবুক ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে গেলে সেটি খোলার বিষয়ে বিটিআরসি উদ্যোগ নেবে।

তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মূলত তিনটি কারণে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ বা নিষ্ক্রিয় হতে পারে। এগুলো হলো ফেসবুকের ওয়েবসাইট রক্ষণাবেক্ষণ, ভুলভাবে অ্যাকাউন্ট চালানো ও অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্ধ হয়ে যাওয়া অ্যাকাউন্ট উদ্ধারের জন্য ফেসবুকের সঙ্গে যোগাযোগের আগে এটি বন্ধ হওয়ার কারণ বোঝা দরকার। এতে অ্যাকাউন্ট উদ্ধারের বিষয়টি ঠিকভাবে উপস্থাপন করা যায়। অনেক ক্ষেত্রে ফেসবুকের কাছে কোনো অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে মিথ্যা, ভুল ও আপত্তিকর তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ যায়। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ভুয়া অ্যাকাউন্ট হিসেবে চিহ্নিত করে ফেসবুক সেগুলো সরিয়ে দেয়। এ ক্ষেত্রে যদি ভুলবশত অ্যাকাউন্ট বন্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটে, তবে ফেসবুকের ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল বা আবেদন করা যায়। এ ক্ষেত্রে একটি ফরম পূরণ করতে হয়।

ঢাকার কলাবাগানের বাসিন্দা সাব্বির হোসেন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলেন ২০১০ সালে। সাত বছরের বেশি সময় ধরে নিজের অ্যাকাউন্টটি নিজেই চালিয়ে এসেছেন। কিন্তু গতকাল রোববার নিজের অ্যাকাউন্টে ঢুকতে গেলে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ জানায় তাঁর অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে ফেসবুকের এ সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে গতকালই আবেদন করেছেন সাব্বির। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ফিরতি বার্তায় তাঁকে জানিয়েছে, আবেদনটি বিবেচনাধীন রয়েছে।

সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে প্রায় ২ কোটি ৩৩ লাখ মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করছেন। দেশে যত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহৃত হচ্ছে, এর মধ্যে ৯৯ শতাংশই ফেসবুক। অন্যদিকে সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, সক্রিয় ফেসবুক ব্যবহারকারী হিসেবে ঢাকা এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চল মিলিয়ে এখানে ২ কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষ সক্রিয়ভাবে ফেসবুক ব্যবহার করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *