ধাঁধার চরে নদী পরিব্রাজক দলের ব্যাতিক্রমী প্রকৃতি পাঠের আসর

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি

10 (1)

 

 

 

 

 

 

মোঃ মনির হোসেন; নদীর গর্ভেই জন্মেছে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি। নদীকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে মানুষের সভ্যতা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যবাহী বাজার, গ্রাম, গঞ্জ ও শহর। কিন্তু এ যুগে নদীর সাথে মানুষের ধীরে ধীরে এক ধরণের বিচ্ছিন্নতাও সৃষ্টি হচ্ছে। আর নদী ও প্রকৃতির প্রতি প্রতি ঘনিষ্ঠতা ও মায়া বাড়াতেই নদী পরিব্রাজক দলের এ আয়োজন।

পৃথিবীর মানচিত্রে নদীমাতৃক দেশ হিসেবে পরিচিত আমাদের বাংলাদেশ। তেমনি গাজীপুরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া একটি নদী শীতলক্ষ্যা । আর ১১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ শীতলক্ষ্যা নদীর খ্যাতি পরিষ্কার ও স্বচ্ছ পানির জন্য। এ নদীর বুকেই জেগে উঠেছে নৌকা আকৃতির এক বিশাল চর। নাম তার ধাঁধার চর। অনেকে এটাকে বলে মাঝের চর। কারণ এ চরটি লাখপুর, তারাগঞ্জ, রাণীগঞ্জ ও চরসিন্দুর-এর মাঝখানে অবস্থিত।

আর শীতলক্ষ্যা নদীর বুকে জেগে উঠা এ চরটির আয়তন প্রায় আড়াইশত একর। দূর থেকে দেখলে এ চরটিকে অনেকটা সেইন্ট মার্টিনস এর মত মনে হয়। আবার পুরো ভিউটা এক সাথে দেখলে মনে হয় টাইটানিক জাহাজ। ধাঁধার চরের অবস্থানটাও বেশ ধাঁধা লাগানো। চরের উত্তর-দক্ষিণে শীতলক্ষ্যা নদী, আর পূর্বে ব্রহ্মপুত্র নদ। দুই দিকে দুই থানা কাপাসিয়া ও শিবপুর। আর আছে দুই পাশে দুই জেলা গাজীপুর ও নরসিংদী। বর্ষা মৌসুমে দুইটি নদীই থাকে গভবর্তী। জলে টইটুম্বর। আর শীতকালে এটি হয়ে ওঠে আরও মনোরম, আরও মনোলোভা। স্থানীয় তারাগঞ্জ, লাখপুর, রাণীগঞ্জ ও চরসিন্দুর-এর মাঝখানে এ চরকে দেখলে মনে হয় ভাসমান টাইটানিক গ্রাম। এ চরটি লম্বায় ৪ কিঃ মিঃ, চওড়ায় বর্ষায় আধা কিঃ মিঃ। আর শীতকালে চওড়ায় আরো বিস্তৃত হয়। আনুমানিক ২০০ বছর আগে জেগে ওঠা এই চরকে স্থানীয়রা কেউ কেউ বলেন মাঝের চর। কারণ এটি ব্রহ্মপুত্র নদ ও শীতলক্ষ্যা নদীর সঙ্গম স্থলে অবস্থিত। এক সময় এই চরের নাম-নিশানা ছিল না। ছিল বহমান নদী। তারপর আস্তে আস্তে বিন্দু বিন্দু বালুকণা জমতে জমতে বেলে মাটিতে পূর্ণ হয়ে এক সময় যখন চর জেগে ওঠে, তখন স্থানীয় লোকজন এটি দেখে ধাঁধায় পড়ে যান। সেই থেকে এর নাম ধাঁধার চর।

আর এ চরেই নদী পরিব্রাজক দল অতি সম্প্রতি আয়োজন করে প্রকৃতি পাঠের আসর। উক্ত প্রকৃতি পাঠের আসরে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, চট্রগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের প্রানিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও নদী গবেষক ড. মঞ্জুরুল কিবরীয়া। এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন নদী পরিব্রাজক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. মনির হোসেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর মো. শওকত আলম, ধলাদিয়া ডিগ্রী কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের প্রধান মুহাম্ম্দ মোশারফ হোসেন, চ্যানেল আইয়ের স্টাফ রিপোর্টার জাহিদুজ্জামান, নদী পরিব্রাজক দলের সহ সভাপতি জিল্লুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক ইসলাম মাহমুদ,মো. আলী হোসেন, যুগ্ম সাংগাঠনিক সম্পাদক শাহ সামসশুল হক, ইভেন্ট সম্পাদক নুরুজ্জামান শিপন,গবেষনা সম্পাদক মো. মোতাহার হোসেন খান,যুগ্ম ইভেন্ট সম্পাদক আলী ফয়সাল দীপ, যুগ্ম মহিলা বিষয়ক সম্পাদক শাহজিয়া শাহরিন আনিকা, গাজীপুর জেলা সভাপতি মোস্তফা আযাদ ও তুরাগ শাখার সভাপতি আব্দুল মালেক।

6 (3)

 

 

 

 

 

 

ধাঁধার চর পরিচালনা পরিষদের সভাপতি গোলাম মো. তৈমুরুজ্জামান বলেন, এ চরের প্রত্যেক কৃষক এখানে বসবাসরত পাখ-পাখালী, বিদ্যমান লতা-গুল্মের প্রতি খুবই আন্তরিক। পরিবেশ-প্রকৃতিকে প্রাধান্য দিয়েই চাষ-বাস করে থাকেন।
ধাঁধার চর পরিচালনা পরিষদের সাধারন সম্পাদক পরাগ আহমেদ বলেন, কিছু লোভী মানুষের লোলুপ চোখ পড়েছে এ ধাঁধার চরে। তাই এসকল লোভী মানুষ এবং বালু খেকোদের হাত থেকে ধাঁধার চর বাঁচাতে হবে।

নদী পরিব্রাজক দলের সভাপতি মো. মনির হোসেন বলেন, এখানকার কৃষকরা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে চরটি কৃষি পর্যটন ও নদী পর্যটনের জন্য অনন্য একটি স্থান হবে। এখানকার প্রকৃতি-পরিবেশ ঠিক রেখে কৃষি ও নদী পর্যটন এবং প্রকৃতি পর্যবেক্ষনকেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব। যার নিয়ন্ত্রন ও ব্যবস্থাপনা থাকবে এখানকার কৃষকদের হাতেই।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর মো. শওকত আলম বলেন, নদী ও প্রকৃতি বিষযক এমন একটি পাঠচক্রে উপস্তিত থাকতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।সঙ্গে সঙ্গে আয়োজক সংগঠনদ্বয়কে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

চট্রগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের প্রানিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও নদী গবেষক ড. মঞ্জুরুল কিবরীয়া ধাঁধার চর পর্যবেক্ষনে বলেন,
‘ঝিরঝিরে বাতাস। উড়ন্ত পাখির কলকাকলি। মাঝির আকুল করা গান। চরের বুক দিয়ে হাঁটলে কল্পনা করা যাবে না এটি একটি চর-যার দু’পাশে রাক্ষুসে দুই নদী। মনে হবে মাসি-পিসির ঘুম পাড়ানো শান্ত-স্নিগ্ধ একটি গ্রাম। সত্যিকার অর্থেই এটি দেখার মত একটা জায়গা। এখানকার নৌকা দিয়ে চরের চারপাশ ভ্রমণ, চরের কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করে পেয়ারা বাগান, কলা বাগান, সাড়ি সাড়ি তাল গাছ, জাম গাছ, কুল বাগান ও নানা প্রজাতির অসংখ্য ঔষধি গাছ দেখা যায়। পাশেই নদীতে থৈ থৈ জলরাশি। উপরে দিগন্ত বিস্তৃত খোলা আকাশ। মাছরাঙা পাখির হুটহাট জলচুম্বন ,পানকৌড়ির লুকোচুরি। প্রকৃতি পাঠে আগ্রহীদের জন্য এটি হতে পারে উপযুক্ত জায়গা।’

প্রকৃতি পাঠে উপস্থিত প্রকৃতি প্রেমীরা বলেন, ‘আজকের এ আয়োজনটি আমাদের জন্য খুবই শিক্ষনীয় ছিল।এধরনের আয়োজন বেশি বেশি হওয়া প্রয়োজন। চমৎকার আয়োজনের জন্য নদী পরিব্রাজক দলকে ধন্যবাদ জানাই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *