আজ প্রতিরক্ষাবিষয়ক দুই সমঝোতা সই হচ্ছে

Slider জাতীয় টপ নিউজ

60698_lead1

 

দিল্লী;  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরে প্রতিরক্ষা বিষয়ক দুটি সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে। দিল্লির সাউথ ব্লক সূত্র বলছে, এই দুই সমঝোতার মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। বিদ্যমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতা কাঠামোকে সামনে আরো বিস্তৃত ও দৃঢ় করাই হবে এই সমঝোতার লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রীর সফরে এ দুটি সমঝোতা স্মারকসহ ২০টির বেশি চুক্তি ও সমঝোতা হবে।
গতকাল দুপুরে দিল্লিতে প্রটোকল ভেঙে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গুরুত্বপূর্ণ এই সফরে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেয়ার দৃঢ় প্রত্যাশার কথা জানিয়ে মোদি টুইট করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানানোর পরই। সফরের গুরুত্বপূর্ণ দিন আজ দ্বিপক্ষীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে। চুক্তি ও সমঝোতার বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য অনেক কিছুই খোলাসা করেছে বৃহস্পতিবার। সেখানে বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব শ্রীপ্রিয়া রঙ্গনাথান বলেন, প্রতিরক্ষা খাতে দুটি পৃথক সমঝোতা স্মারকসহ দু’দেশের মধ্যে ২০টি’র বেশি চুক্তি ও সমঝোতা সই হবে।
শনিবার হায়দারাবাদ হাউজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যকার শীর্ষ বৈঠক শেষে চুক্তি সইয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে। দিল্লি আনুষ্ঠানিক ওই ঘোষণার বরাতে বিবিসি বাংলাসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রতিরক্ষা বিষয়ক সমঝোতা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও বিশ্লেষণ ছাপা হয়েছে। তাতে বলা হয়- ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে প্রতিরক্ষা বিষয়ক দু’টি এমওইউ বা সমঝোতা-স্মারকের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর করে, ২৫ বছর নয়। এর একটি দু’দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে একটা নির্দিষ্ট কাঠামোর ভেতর নিয়ে আসবে। আর অন্যটি হবে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনাকাটা সংক্রান্ত। বিবিসি বাংলার রিপোর্টে সমঝোতা নিয়ে যে জল্পনা-কল্পনা ছিল তার উল্লেখ করা হয়েছে এভাবে- ‘গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই বাংলাদেশ ও ভারতের কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক মহলে তীব্র জল্পনা ছিল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে দুই দেশের মধ্যে কোনো প্রতিরক্ষা চুক্তি বা সমঝোতা হবে কি না, বা হলেও কী আকারে হবে।’ খবরে বলা হয়- প্রধানমন্ত্রী হাসিনার ভারতে পা-রাখার ঠিক আগের দিন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (বৃহস্পতিবার) স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলো ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে প্রতিরক্ষা সমঝোতা হচ্ছে- আর একটি নয়, বরং দুটি। ভারতের বাংলাদেশ ডেস্কের যুগ্ম সচিব শ্রীপ্রিয়া রঙ্গনাথনকে উদ্ধৃত করে বলা হয়- এর একটা হবে ফ্রেমওয়ার্ক এমওইউ, অর্থাৎ যা দু’দেশের ভেতরে প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে পরবর্তী কয়েক বছরের জন্য একটা নির্দিষ্ট কাঠামোর ভেতর  নিয়ে আসবে। তবে এটার মেয়াদ ২৫ বছর নয়- কিন্তু পাঁচ বছর পরপর সাধারণত এই সমঝোতা-স্মারকগুলো আপনি আপনি নবায়ন হয়ে যাবে। এই দুটি প্রতিরক্ষা এমওইউ-তে ঠিক কী থাকবে, তারও একটা ধারণাও দিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। শ্রীপ্রিয়া রঙ্গনাথন এই দুটো সমঝোতার বিষয়বস্তু ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের যে ধরনের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আছে এবং আগামী দিনে যেটাকে আমরা আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই, তার একটা ফ্রেমওয়ার্ক বা কাঠামো থাকবে এই সমঝোতায়। প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত গবেষণা বা রিসার্চ-ডেভেলপমেন্ট, প্রতিরক্ষা রসদ সরবরাহেরও অবকাশ থাকবে সেখানে।’ আর দ্বিতীয় যে সমঝোতাটা হচ্ছে তার লক্ষ্য হলো বাংলাদেশ যাতে তাদের প্রতিরক্ষার প্রয়োজন অনুযায়ী কিছু কিছু সরঞ্জাম ভারত থেকে কিনতে পারে, সেটা নিশ্চিত করা।’ বিবিসি বলছে, প্রতিরক্ষা খাতে এটাকে দু্থদেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবেই দেখছেন পর্যবেক্ষকরা। এদিকে প্রতিরক্ষা বিষয়ক এমওইউ বা সমঝোতা নিয়ে কলকাতার আনন্দবাজার বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই রিপোর্টে বলা হয়, দ্বিপাক্ষিক চুক্তির ঘণ্টা বাজিয়ে সুপ্রতিবেশীকে সরব সতর্ক করা নয়। বরং এমওইউ’র মোড়কে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বড় মাপের সমঝোতার পথে হাঁটতে চলেছে ভারত। শেখ হাসিনার আসন্ন সফরে (আজ) দু’দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে দু’টি সমঝোতাপত্র সই হবে। বাংলাদেশকে সমরাস্ত্র কেনার জন্য দেয়া হবে ৫০ কোটি ডলার ঋণ-সাহায্য। সব মিলিয়ে এরপর দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ভূ-কৌশলগত রাজনীতিতে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় পৌঁছানো যাবে বলে আশা করছে নয়াদিল্লি- এমনটাও ছাপা হয়েছে। আনন্দবাজারের রিপোর্টে বলা হয়- এটা বাস্তব যে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বেইজিং-ঢাকা অক্ষ চাপ বাড়িয়েছে নয়াদিল্লির। দীর্ঘদিন আগেই সামরিক সহযোগিতা নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের চুক্তি হয়ে গেছে।  সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী এলাকায় ভারতীয় সামরিক ঘাঁটিগুলোর উপর নজরদারি এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দখলদারি রাখতে বেইজিং-এর সক্রিয়তা বাড়ছে উল্লেখ করে রিপোর্টে বলা হয়- সেই পরিকল্পনা রূপায়ণে ঢাকাকে পাশে পেতেও ক্রমশ প্রভাব বাড়াচ্ছে চীন। পদ্মা সেতু থেকে শুরু করে বাংলাদেশের বিভিন্ন পরিকাঠামোয় বেইজিং যে অর্থ দিচ্ছে তার উল্লেখ করে বলা হয়- গত দু’বছরে বাংলাদেশকে আড়াই হাজার কোটি ডলার অর্থসাহায্য করেছে চীন, যার একটা ভালো অংশ সামরিক ক্ষেত্রে। এই প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনার সফরে প্রতিরক্ষা নিয়ে সমঝোতাপত্রে সই-এর বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশের ঘরোয়া রাজনীতিতে ভারতের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা নিয়ে বিরোধিতার ঝড় উঠেছে। সে দেশের বিএনপি-জামায়াত জোট এবং নাগরিক সমাজের একাংশ এ কথাও বলছে, যে অর্থের বিনিময়ে নিরাপত্তাকেও ভারতের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে হাসিনা সরকার। আর তাই এ ব্যাপারে কিছুটা সতর্কতার সঙ্গে নিচু তারে বিষয়টিকে বাঁধার পরিকল্পনা করা হয়েছে। লক্ষ্য এক, বাংলাদেশে হাসিনা সরকারকে চাপে না ফেলা। দুই, চীনের উদ্দেশেও খুব ঢাকঢোল পিটিয়ে কোনো বার্তা না দেয়া। পাশাপাশি ঘরোয়া সমালোচনার প্রতিবাদে শেখ হাসিনা জানিয়েছেন যে তিনি ভারতের সঙ্গে যখন চুক্তি করবেন, সেখানে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা বজায় রেখেই করবেন। দেশবাসীর কাছে কিছুই গোপন রাখবেন না। কিন্তু প্রতিরক্ষার মতো বিষয়ে কিছু গোপনীয়তা রাখা ভারতীয় কৌশলের মধ্যে পড়ে। তাই বেণী না ভিজিয়ে স্নান করার একটি কৌশল হিসাবে এখনই ভারত-বাংলাদেশ সমঝোতাকে চুক্তির আকার না দিয়ে, তার আগের ধাপ ‘এমওইউ’-সই করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে। সেখানে সাউথ ব্লকের বাংলাদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব শ্রীপ্রিয়া রঙ্গনাথনের সংবাদ সম্মেলনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়- তিনি বলেছেন, দু’দেশের মধ্যে চলতি সামরিক সহযোগিতাগুলোকে একটি ছাতার তলায় নিয়ে এসে একটি সামগ্রিক ‘ফ্রেমওয়ার্ক’ তৈরি করা হবে। যার মধ্যে রয়েছে সাবমেরিন-প্রশিক্ষণ, তথ্য সহযোগিতা, উপকূলরক্ষীদের মধ্যে সহযোগিতা, সেনাপ্রধান পর্যায়ে আদান-প্রদানের মতো বিষয়। এছাড়া ভারত থেকে সমরাস্ত্র এবং সামরিক প্রযুক্তি কেনার জন্য বাংলাদেশকে ৫০ কোটি ডলার ঋণ দেয়া হবে।
দিল্লিতে সাজসাজ রব: দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা জানানোর জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। দিল্লির গুরুত্বপূর্ণ সড়কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছবি শোভা পাচ্ছে। ভারত ও বাংলাদেশের পতাকা পাশাপাশি উড়ছে রাস্তার দুপাশে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জয়ী হয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার পর এটাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম ভারত সফর। এর আগে ২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করেন এবং ২০১৫ সালের জুন মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে আসেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে ভারতে গিয়েছেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী মো. আমিনুল ইসলাম, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক, তথ্য সচিব মর্তুজা আহমেদ এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমও সফরসঙ্গীদের মধ্যে রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে এফবিসিসিআই’র সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমেদের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল এবং সিনিয়র সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধিদলও সঙ্গে রয়েছেন।

বাস-ট্রেন উদ্বোধনীতে থাকছেন মমতা, আলাদা বৈঠকও হবে: সফরের দ্বিতীয় দিনে আজ হাসিনা-মোদি শীর্ষ বৈঠক শেষে দিল্লিতে এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী বিরল-রাধিকাপুর রুটে মালামাল পরিবহনকারী রেল চলাচল, খুলনা-কলকাতা রুটে যাত্রীবাহী বাস ও রেল চলাচল এবং ত্রিপুরার পালটানা বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে বাংলাদেশে অতিরিক্ত ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রক্রিয়ার উদ্বোধন করবেন। সেখানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও উপস্থিত থাকছেন। পরে মমতা ব্যানার্জিও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পৃথকভাবে দেখা করতে পারেন বলে খবর বেরিয়েছে। ভারতের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলাপে দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় যেমন-  দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সমপ্রসারণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে সহযোগিতা, আন্তঃযোগাযোগ তথা কানেকটিভিটি, উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা, জনযোগাযোগ, পদ্মা (গঙ্গা) ব্যারেজ নির্মাণ, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, নদীর অববাহিকাভিত্তিক পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত সুরক্ষা, নিরাপত্তা সহযোগিতা, মাদক চোরাচালান ও মানবসম্পদ রোধ প্রভৃতি অধিক গুরুত্ব পাবে বলে জানানো হয়েছে।
‘ল্যান্ড মার্ক ভিসিটে’ তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা হবে: এদিকে বিবিসি বাংলার প্রশ্নের জবাবে ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গোপাল বাগলে গতকাল বলেন, ‘দেখবেন এটা কিন্তু সত্যিকারের একটা ল্যান্ডমার্ক ভিজিট বা অবিস্মরণীয় সফর হয়ে উঠবে। এই সফর থেকে যাতে অর্জনগুলোও বড় মাপের হতে পারে, তার জন্য আমরা দুপক্ষ এখনও নিবিড় ও সক্রিয়ভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। তবে সফরে ঠিক কী কী হবে তার বিস্তারিত অবশ্য আমি এখনই প্রকাশ করতে পারছি না। সরকারি কর্মকর্তারা বেশি ভেঙে বলতে চান না, তবে দুদেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা খাতে বিশেষ সমঝোতা হতে চলেছে এবং তিস্তা নিয়ে চুক্তির আশা একেবারেই ক্ষীণ- দিল্লিতে পর্যবেক্ষকরা তা মোটামুটি ধরেই নিয়েছেন। কিন্তু বিবিসি বাংলার রিপোর্টে বলা হয়েছে- দীর্ঘ সময়ের মধ্যেও মীমাংসা হয়নি তিস্তার- প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে এটাই শুধু একটা বড় আফসোস। দিল্লিতে বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলি বলেন, “ভারতের অভ্যন্তরীণ বাধার কারণেই যে আজ পর্যন্ত তিস্তা চুক্তি সম্পাদিত হয়নি সেটা আমরা সবাই জানি। আমরা আশা করব প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী হাসিনার যে একান্ত আলোচনা হবে তখনই মি. মোদি ব্যাখ্যা করবেন সেই বাধা দূর করার জন্য তারা ঠিক কী করছেন বা কতদূর এগিয়েছেন।” হাইকমিশনার বলেন, আমাদের দিক থেকে আমরা চুক্তির জন্য পুরোপুরি রেডি আছি। আর এখানে আমাদের বক্তব্য খুব পরিষ্কার- তিস্তায় যা পানি আছে তার অর্ধেক ভাগাভাগি করতে হবে। আট আনা পানি থাকলে চার আনা-চার আনা ভাগ হবে, আর যদি ছ-আনা থাকে তাহলে ভারত পাবে তিন আনা আর আমরা তিন আনা। এটা নিয়ে তো কোনো তর্কই হতে পারে না!”
অন্যান্য কর্মসূচি: সফরের দ্বিতীয় দিন আজ শীর্ষ বৈঠকের পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনীর হিন্দি সংস্করণ উন্মোচন করবেন দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী। বিকালে ম্যানেকশ সেন্টারে মহান মু্‌ক্িতযুদ্ধে শাহাদৎবরণকারী ভারতীয় সৈনিকদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মুক্তিযুদ্ধে নিহত ৭ শহীদ ভারতীয় সেনা পরিবারকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননাপত্র প্রদান করবেন। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রী আজমির শরিফ যাবেন। সেখানে খাজা মঈনউদ্দিন চিশতি (রহ.)-এর দরগাহ শরীফ জিয়ারত করবেন। একইদিন বিকালে প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে দেখা করবেন। পরে তিনি রাষ্ট্রপতি প্রদত্ত এক নৈশভোজে যোগ দেবেন। এদিন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী এবং কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। সফরের সমাপনী দিন (১০ই এপ্রিল) সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাজমহল হোটেলে বাংলাদেশ ও ভারতের শীর্ষ শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের এক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন। বিকালে তিনি ঢাকার উদ্দেশে দিল্লি ত্যাগ করবেন।
প্রধানমন্ত্রী সফর উপলক্ষে মোদির টুইট
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর উপলক্ষে দুটি টুইট করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শেখ হাসিনাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন মোদি। দুজনের হাস্যোজ্বল একটি ছবি টুইটারে পোস্ট করে মোদি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হার এক্সেলেন্সি শেখ হাসিনাকে তার ভারত সফরে স্বাগত জানাতে পেরে আনন্দিত।’
দ্বিতীয় আরেকটি টুইটে তিনি লিখেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আমি আমাদের দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’ প্রসঙ্গত, আনুষ্ঠানিক সফরসূচি অনুযায়ী বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর কথা ছিল মোদির মন্ত্রিসভার বাঙালি সদস্য বাবুল সুপ্রিয়। তবে মোদি নিজেই বিমানবন্দরে ছুটে যান শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানাতে। বাবুল সুপ্রিয় ফুল দিয়ে তাকে বরণ করে নেন।
সুষমার সাক্ষাৎ: সফরের প্রথম দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। এ সময় সুষমাকে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটি উপহার দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বিকালে রাষ্ট্রপতি ভবনে তাদের সাক্ষাৎ-বৈঠক হয়।  বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন বলে এনডিটিভির খবরে জানানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *