বাংলাদেশ এখন আর ছোট দল নয়

Slider খেলা সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী

 

 

 

 

58242_f3

 

 

 

 

 

 

 

ওয়ানডে ক্রিকেটে টাইগাররা ক্রীড়া বিশ্বের সমীহ কুড়িয়েছে আগেই। আর নিজেদের শততম টেস্টে জয় নিয়ে দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটেও বাহবা পাচ্ছে বাংলাদেশ। টেস্টে বাংলাদেশের গায়ে ছোট দলের তকমাটা আর দেখতে চান না ক্রিকেটের অনেক বোদ্ধা বিশ্লেষকই। ভারতীয় দৈনিক ইকোনমিক টাইমসের বোদ্ধা লেখক বোরিয়া মজুমদার তার এক নিবন্ধে বলেন, ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় শেষে বাংলাদেশকে আর ছোট দল বলা যায় না। শ্রীলঙ্কাক সফরে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে চার উইকেট জয় কুড়ায় বাংলাদেশ। শততম টেস্টে জয়ের মাত্র চতুর্থ নজির এটি। ইংল্যান্ড, ভারতের মতো শীর্ষ টেস্ট খেলুড়ে দেশেরও এমন কীর্তি নেই। বাংলাদেশ ছাড়া এমন গৌরব রয়েছে কেবল অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তানের। ভারতীয় শীর্ষ সংগঠক এন শ্রীনিবাসন আমলে বাংলাদেশের প্রতি আইসিসির অসম্মানকর আচরণের বিষয়টিও উঠে আসে ইকোনমিক টাইমসের লেখায়। নিবন্ধে লেখা হয়, নিজেদের সবচেয়ে তৃপ্তিকর জয় থেকে বাংলাদেশ তখন ৪ রান দূরে। গ্যালারিতে বাংলাদেশের খেলোয়াড় ও সমর্থকরা আবেগে উদ্বেল। ওভারের শেষ বলে রিভার্স সুইপ খেলে ২ রান নিলেন মুশফিকুর রহীম। কিন্তু পরের ওভারে উইকেট পড়ে গেল। এবার ব্যাট হাতে ক্রিজে গেলেন বাংলাদেশের নতুন সেনসেশন মেহেদী হাসান মিরাজ। বল হাতে সামর্থ্য দেখিয়েছেন ইতিমধ্যে। ফাইন লেগে সুইপ খেলেই দৌড় লাগালেন মিরাজ। ক্রিজের অন্যপ্রান্ত থেকে দু’হাত মেলে ধাবমান অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমের মুখে তখন সবজয়ের অভিব্যক্তি। নিজেদের ১০০তম টেস্টে জয় কুড়ালো বাংলাদেশ। ভিনদেেেশর মাটিতে বাংলাদেশের চার বছরে প্রথম জয় এটি। মাত্র সেদিনও ছোট দল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিল বাংলাদেশ। দুই আড়াই বছর আগে এন শ্রীনিবাসনের নেতৃত্বে পুনর্গঠিত আইসিসির নির্বাহী কমিটির প্রস্তাবনায় অসম্মান দেখানো হয় বাংলাদেশকে। বিশ্ব ক্রিকেটের এই এলিট পর্যায়ে খেলতে বাংলাদেশকে রেলিগেশন ফাইট দেয়ার প্রস্তাব রাখা হয় তাতে। যাই হোক, বাংলাদেশের এমন অসম্মানকর বিষয়টি এখন অতীত ঘটনা। ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় নিয়ে বাংলাদেশ এখন আর ছোট দল নয়। নতুন চারণভূমির জন্য এবং দর্শক-সমর্থক আকর্ষণে নিদারুণভাবে চেষ্টা করছে টেস্ট ক্রিকেট, আর এতে বাংলাদেশের ভূমিকাটা হবে বড়ই। নিজ দেশেতো বটেই বিশ্বের ভিন্ন ভিন্ন প্রান্তেও বাংলাদেশের টেস্ট ম্যাচে ভক্ত-সমর্থকদের উপস্থিতিটা চোখে পড়ছে নিয়মিত। এতো দ্রুত এমনটি হয়তো প্রত্যাশিত ছিল না ক্রিকেট বিশ্বের কাছে। এমন চিত্রের কারণ কী? দুটি কারণ মনে আসতে পারে। প্রথমত, বাংলাদেশ দলে সামর্থ্যবান তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীম, সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমানের মতো ব্যাটসম্যানরা খেলছেন, যারা নিয়মিত রান পাচ্ছেন ভিনদেশের মাটিতে। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ৫০০, শ্রীলঙ্কার মাটিতে ৪০০ রানের স্কোর গড়ছেন তারা। ভারতের মাটিতে করলো ৪০০ ছুঁই ছুঁই। রান পাচ্ছেন লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানরাও। আর বাংলাদেশ দলে সাকিব ও মেহেদীর মতো স্পিনার রয়েছে যারা এশিয়ার মাটিতে ম্যাচে ২০ উইকেট তুলে নিতে পারেন যা হাড়েহাড়ে টের পেলো ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা। সম্প্রতি বাংলাদেশ দলের আত্মবিশ্বাসটাও দেখাচ্ছে বেশ। সর্বশেষ সফরে আইসিসি টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর দল ভারতের বিপক্ষে সমান তালে লড়াই করে বাংলাদেশ। আর নিজেদের ১০০তম টেস্টকে আলাদাভাবে বেছে নিলো তারা। শ্রীলঙ্কার ৩০০ রানের জবাবে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ করলো ৪৬৭ রান। এতে বোলাররা পেয়ে যান বড় পুঁজি। দ্বিতীয় ইনিংসে শ্রীলঙ্কার লেজের দিকের ব্যাটসম্যানরা দৃঢ়তা দেখালেও ভড়কে যায়নি টাইগাররা। দলটি বড় এক মিশনে ছিল যে!
বাংলাদেশের ক্রিকেটে খেলোয়াড়দের মধ্যে একতার অভাব, অসামঞ্জস্য, ও রাজনৈতিক প্রভাব দেখা যাচ্ছিল দীর্ঘদিন। কিন্তু এবারের বাংলাদেশ দল খেললো তেলপানি দেয়া মেশিনের মতো। আর এমন পরিবর্তনের জন্য বাহবা পেতে পারেন তাদের সিনিয়র খেলোয়াড়রা। টেস্ট ক্রিকেটের সত্যিই ভালো একটা বাংলাদেশ দলের দরকার। মনে হয় এটা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *