সীতাকুণ্ডের ছয় জঙ্গির চারজনই আত্মীয়

Slider টপ নিউজ

8c498078d84fa05e0ef92003a37c1579-58c9aa42cb646

ঢাকা; ভুয়া একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা দিয়ে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড পৌরসভার প্রেমতলা ও আমিরাবাদ এলাকার দুটি বাসা ভাড়া নিয়েছিল জঙ্গিরা। দুই বাসায় থাকা ছয় জঙ্গির চারজনই আত্মীয়। তাদের মধ্যে দুজন আত্মঘাতী বিস্ফোরণে মারা গেছে। অন্য দুজনকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ।

গত জানুয়ারি মাসে কক্সবাজারের রামুর মো. জসিম উদ্দিন পরিচয়ে প্রথমে প্রেমতলার ‘ছায়ানীড়’ বাড়ির নিচতলার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেয় জঙ্গিরা। এরপর ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে জসিম উদ্দিন পরিচয়ে প্রেমতলা থেকে এক কিলোমিটার দূরে আমিরাবাদের ‘সাধন কুটির’ নামের বাড়ির ফ্ল্যাটটিও ভাড়া নেওয়া হয়।

ছায়ানীড়ের বাড়িতে গত বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশের সোয়াটের (স্পেশাল উইপনস অ্যান্ড ট্যাকটিকস) অভিযানের সময় আত্মঘাতী বিস্ফোরণে ও গুলিতে নিহত হয় পাঁচজন। তাদের মধ্যে দুজনের পরিচয় শনাক্ত করতে পেরেছে পুলিশ। তাঁরা হলেন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারী এলাকার বাসিন্দা কামাল হোসেন ও তাঁর স্ত্রী জুবাইরা ইয়াসমিন। অভিযান শেষে বাড়ির ছাদ থেকে তাঁদের শিশুসন্তানের লাশও উদ্ধার করে পুলিশ। অন্যদিকে সাধন কুটিরে গত বুধবার বিকেলে অভিযান চালিয়ে অক্ষত অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হয় আরেক জঙ্গি দম্পতি জসিম ও আরজিনাকে। পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে, জসিমের বোনই জুবাইরা ইয়াসমিন। আর জসিম ও আরজিনা দুটোই ছদ্মনাম।

চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত উপমহাপুলিশ পরিদর্শক মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, জসিমের প্রকৃত নাম জহিরুল ইসলাম। তাঁর স্ত্রীর প্রকৃত নাম রাজিয়া সুলতানা। তাঁদের বাড়ি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের জঙ্গলঘেরা যৌথখামারপাড়া এলাকায়। তিনি বলেন, বিস্ফোরণে নিহত দুই জঙ্গির পরিচয় বের করা যায়নি। রাজধানীর কল্যাণপুরে অভিযানের (২৬ জুলাইয়ের ওই অভিযানে নয় জঙ্গি নিহত হয়) আগে দুজন পালিয়ে যায়। নিহত দুই জঙ্গি কল্যাণপুরের আস্তানার হতে পারে। তবে এটি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে বাইশারী বাজার থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার উত্তরে যৌথখামারপাড়ায় গিয়ে কথা হয় জুবাইরার মা জান্নাত আরার সঙ্গে। তিনি বলেন, তাঁর মেয়ে কীভাবে এ ধরনের কাজে জড়িয়েছেন, তা জানেন না। প্রায় আট মাস আগে জুবাইরাকে বাইশারী থেকে চট্টগ্রাম নিয়ে যান জামাতা কামাল হোসেন। এরপর চাকরির কথা বলে জুবাইরার বড় ভাই জহিরুল হককেও চট্টগ্রামে নিয়ে যান কামাল। তখন জহিরুলের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী রাজিয়া সুলতানাও চলে যান। কিছুদিন আগে জুবাইরার সন্তানের দেখভালের কথা বলে জুবাইরার ছোট বোন মনজিয়ারা পারভিনকেও চট্টগ্রাম নিয়ে যান কামাল।

সাত দিন আগে জুবাইরার মুঠোফোনে কথা হয় জান্নাত আরার। চট্টগ্রামে চাকরি করে তাঁরা ভালো টাকা আয় করছেন বলে তাঁকে জানানো হয়। তাঁদের জন্য কোনো চিন্তা না করতে বলা হয়।

জুবাইরার বড় ভাই জিয়াবুল হক বলেন, সম্ভবত চট্টগ্রাম গিয়ে কামাল হোসেন জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়ে পড়েন।

বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আলম বলেন, পুলিশ এসে জুবাইরার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন। এলাকায় কেউ নিখোঁজ রয়েছে কি না সেই খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। যৌথখামারপাড়া এলাকার ইউপি সদস্য আবু তাহের বলেন, এই গ্রামটিতে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের বসবাস বেশি। বেশির ভাগ মানুষ রাবার বাগান ও চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে।

বাইশারী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) আবু মুসা বলেন, এলাকায় বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে, যারা নিখোঁজ রয়েছে।

এদিকে ছায়ানীড় বাড়ি থেকে গ্রেনেড ও বিস্ফোরক উদ্ধার এবং পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে সীতাকুণ্ড থানায় পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা করেছে। অন্যদিকে সাধন কুটির থেকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় জসিম ওরফে জহুরুল ইসলাম এবং আরজিনা ওরফে রাজিয়া সুলতানার বিরুদ্ধে একই থানায় সন্ত্রাস দমন আইন, অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। এ ছাড়া ছায়ানীড় বাড়ি থেকে গ্রেনেড ও বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় করা সন্ত্রাস দমন আইনের মামলাতেও দুজনকে আসামি করা হয়েছে। তিনটি মামলাতেই এই দুজনের বাইরে আরও চারজনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের নাম প্রকাশ করতে চায়নি পুলিশ। গতকাল শুক্রবার রাতে জসিম ও আরজিনাকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হয়। দুই মামলায় দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে ১২ িদন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

গতকাল বেলা দেড়টার দিকে সাধন কুটির বাড়িটিতে গিয়ে দেখা যায়, সামনে পাহারা দিচ্ছেন চার পুলিশ সদস্য। তাঁদের একজন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রাজীব খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, যে ফ্ল্যাট থেকে বোমাসহ দুই জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেটি বন্ধ রাখা হয়েছে। বাকি ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা বাসায় রয়েছেন। নিরাপত্তার জন্য দিনরাত পালাক্রমে পুলিশ সদস্যরা বাড়িটি পাহারা দিচ্ছেন।

বাড়ির মালিক সুভাষ চন্দ্র দাস বলেন, ‘খুবই ভয়ে আছি। কখন কী হয়ে যায়।’

স্থানীয় কাউন্সিলর মাসুদুল আলম বলেন, লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য পুলিশকে বলা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *