রাতভর তুলকালাম ছাত্রলীগের

Slider শিক্ষা সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী

14cd57b58b066864f5ca051d25ce066c-58c764f70792a

 

 

 

 

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের বিভিন্ন কক্ষে জোর করে ছাত্রলীগের শিক্ষার্থী তোলা নিয়ে রাতভর তুলকালাম হয়েছে।

হলের আবাসিক শিক্ষকদের ধাওয়া দিয়েছে ছাত্রলীগ। প্রাধ্যক্ষের কক্ষ ভাঙচুর করা হয়েছে। মারধরের শিকার হয়েছেন এক সাংবাদিক।

গতকাল সোমবার রাত ১২টা থেকে আজ মঙ্গলবার ভোররাত সাড়ে চারটা পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে।

হল সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত বিজয় একাত্তর হলে আবাসিক শিক্ষার্থীদের আসনবিন্যাস হল প্রশাসনই করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র এই হলেই আসনসংকটকে কাজে লাগিয়ে ছাত্রসংগঠনগুলো রাজনীতি করতে পারে না। তারা চাইলেই হলের বিভিন্ন কক্ষে কর্মী তুলতে পারে না। তবে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে অনেকবার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের কঠোরতায় তা সম্ভব হয়নি।

সবশেষ হলের খেলার কক্ষটিকে ‘গণরুম’ হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে ছাত্রলীগ।

‘গণরুম’ হচ্ছে এমন কক্ষ, যেখানে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই ছাত্রসংগঠনগুলো তাদের কর্মী বা অনুসারীদের তোলে। তাঁদের দিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি করায়। এসব কক্ষে সাধারণত ধারণক্ষমতার চেয়ে চার-পাঁচ গুণ বেশি শিক্ষার্থী থাকেন।

বিজয় একাত্তর হলের গণরুমে প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী আছেন। তাঁরা ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন।

হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল রাত ১২টার দিকে বিজয় একাত্তর হলের ‍উত্তর পাশের যমুনা ব্লকের প্রত্যেক কক্ষে এক-দুজন করে শিক্ষার্থী জোর করে তুলে দেয় ছাত্রলীগ।

খবর পেয়ে কয়েকজন আবাসিক শিক্ষক হলে ছুটে আসেন। পরিস্থিত সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলে তাঁদের ধাওয়া দেন ছাত্রলীগের কর্মীরা।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থী জানান, ছাত্রলীগের কর্মীরা একজন আবাসিক শিক্ষককে ‘শিবির’ বলেও ধাওয়া করেন।

দিবাগত রাত সোয়া একটার দিকে হলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আ জ ম শফিউল আলম ভূইয়া। তিনি হলে নিজের কক্ষে প্রবেশ করলে হল শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ফকীর রাসেল আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক নয়ন হাওলাদারের নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হয়। একপর্যায়ে প্রাধ্যক্ষের কক্ষের জানালার কাচ ভাঙচুর করা হয়।

পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক এম আমজাদ আলী ও ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আবিদ আল হাসান প্রাধ্যক্ষের কক্ষে যান। তাঁরা হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ডেকে কথা বলেন। হলের ছাত্রদের নিজ নিজ কক্ষে ফেরত যেতে নির্দেশ দিতে বলেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে। যেসব কক্ষে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া ছাত্র তোলা হয়েছে, তাঁদের সবাইকে ফিরিয়ে আনতে বলেন।

এ অবস্থায় ভোররাত চারটা পর্যন্ত হলের ভেতরের মাঠে অবস্থান নেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা দফায় দফায় বিক্ষোভ করেন।

ভোররাত সাড়ে চারটার দিকে হলের যমুনা ব্লকের ৫০০৩ নম্বর কক্ষের শিক্ষার্থী ও বার্তা সংস্থা ইউএনবির বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক ইমরান হোসাইনকে মারধর করা হয়। তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, ইমরানের কক্ষেও ছাত্র তোলার চেষ্টা করেছিল ছাত্রলীগ। এতে তিনি বাধা দেন। পরে সংবাদ সংগ্রহ শেষে ঘুমাতে গেলে তাঁকে মারধর করা হয়।

হল শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ফকীর রাসেল আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক নয়ন হাওলাদারের ভাষ্য, আসন না পাওয়া নতুন শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে বিভিন্ন কক্ষে উঠেছেন। তাঁদের কিছু করার ছিল না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান বলেন, যাঁরা এসব ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাঁদের খুঁজে বের করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রাধ্যক্ষ শফিউল আলম ‍ভূইয়া সাংবাদিকদের বলেন, এই ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি করা হবে। দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া যেসব শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন কক্ষে তুলে দেওয়া হয়েছে, তাঁরা কেউ সেখানে থাকতে পারবেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *