মঙ্গলবার, এপ্রিল ৩০, ২০২৪

বিয়ের বয়সে ছাড়, তুমুল বিতর্ক

Slider সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী সারাদেশ

image

 

 

 

 

 

 

বাংলাদেশে বিশেষ ক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়েদের বিয়ের বয়সে ছাড় দেওয়া হল। যা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে সে দেশ জুড়ে।

২৭ ফেব্রুয়ারি দেশটির সংসদে পাস হওয়া বিলে  মেয়ে ও ছেলেদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স রাখা হয়েছে ১৮ ও ২১ বছর। তবে ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ তার চেয়ে কম বয়সেও বিয়ে দেয়া যাবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে পাস করা বিলে।
আর তাতেই দেশজুড়ে বইছে ক্ষোভ। সরব দেশী-বিদেশী সংগঠন, নারী নেত্রী আর সচেতন মানুষ। অথচ কে না জানে, একটি দেশের স্বপ্ন যদি হয় অর্থনৈতিক স্বাবলম্বীতা, তবে নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক সমাজব্যবস্থা, অর্থনৈতিক কাঠামো ও আইনগত সামাজিক সুরক্ষাবলয় হতে হবে অত্যাবশ্যকীয়।
পাস হওয়া বিল প্রসঙ্গে দেশটিতে কাজ করা আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান অক্সফামের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর এমবি আখতার আনন্দবাজারকে বলছেন, ‘২০০৪ সালে চলমান নারী নীতিমালায় কুড়ুল মেরেছিল বিএনপি সরকার। ২০১০ সালে আওয়ামী লীগ সরকার সেই নীতিমালার ব্যাপক উন্নতি ঘটিয়ে আমাদের আশার আলো দেখিয়েছিল। সেই নীতিমালার সঙ্গেই সাংঘর্ষিক এবার পাস হওয়া বিলটি।’
এম বি আখতার আরও জানান, সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে ১৬ বছরের নীচে বিবাহ হয় ৪৯ ভাগ কিশোরীর। চর বা প্রত্যন্ত গ্রামে এই হার ৬৬ ভাগেরও বেশী। পাশ হওয়া বিলের ‘বিশেষ প্র্রেক্ষাপট’ এই পরিসংখ্যানকে আরও বাড়িয়ে দেবে।
বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা বিরল। বিশেষ প্রেক্ষাপটে মেয়েদের বিয়ের বয়সে ছাড়ের বিধান বাংলাদেশে বাল্যবিয়ে বাড়ার ঝুঁকি তৈরি করবে বলেও মনে করেন তিনি।
এই বক্তব্য সঠিক মনে করছেন না দেশটির আইন মন্ত্রকের সচিব আবু সালেহ শেখ মহম্মদ জহিরুল হক। পাশ হওয়া বিলের ‘বিশেষ প্রেক্ষাপট’ কে ‘ব্যতিক্রম’ শব্দ আখ্যা দিয়ে জহিরুল হক বলছেন, ‘‘কোন পরিবার কিংবা ১৬ বছরের মেয়ে অথবা ১৮ বছরের ছেলে সামাজিক বাস্তবতায় বিয়ে দিতে কিংবা করতে ইচ্ছুক হয়, তবে তাদের আদালতের শরণাপন্ন হতে হবে। আদালতের বিবেচনায় যদি তা গ্রহণযোগ্য হয় তবেই বিয়ে হবে, অন্যথায় নয়।’’
আইন সচিব আরও বলেন, এটি সামাজিক নানা বাস্তবতার বিষয় মাথায় রেখেই সরকার করেছে। কেউ ইচ্ছে করলেই ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’র সুযোগ নিতে পারবে না। তাকে আদালতে গিয়ে অনুমতি নিতে হবে। অর্থাৎ আদালতের বিবেচনায় সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বিয়ে হতেও পারে, নাও হতে পারে।
এ দিকে, ক্ষোভ আর সরব জনমতের ধারাবাহিকতায় বিলটি পাস করার সাতদিনের মাথায় আইনী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এটি বাংলাদেশের সংবিধানের ৭, ১১, ১৫, ২৬, ২৭, ৩১ এই ধারাগুলোর পরিপন্থী উল্লেখ করে আইনটি বাতিলের আবেদন করা হয়েছে। এই নিয়ে আইনী নোটিস দিয়েছেন সরকারকে। সেই সঙ্গে আইন বাতিল করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ২৪ ঘন্টার মধ্যে না নিলে আদালতের আশ্রয় নেওয়ার কথাও বলেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুস আলী আকন্দ। বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের বিয়ের বৈধতা দিয়ে সদ্য পাশ হওয়া বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন-২০১৭’ বাতিল চেয়ে ওই আইনজীবী আইনি নোটিস পাঠান সংসদ সচিবালয়ের সচিব, আইন সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে। আইনটি বাতিল করার জন্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে হাইাকোর্টে রিট করা হবেও উল্লেখ করেছেন।

আইনজীবী তাঁর নোটিসে বলেছেন, সংসদে নতুন পাশ হওয়া আইনটি সংবিধানের ৭, ১১, ১৫, ২৬, ২৭, ৩১ এই ধারারগুলোর পরিপন্থি। মুসলিম বিবাহ আইন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের পরিপন্থী। তিনি মনে করেন এ আইনের ফলে দেশে বাল্য বিবাহের সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে। বাল্যবিবাহের দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম সারিতে। নতুন এ আইনটি হলে জনগণ এটির অপব্যবহার করবে। এতে চরম আকারে নারীদের মানবাধিকার লঙ্ঘন হবে।

এই অবস্থায় সরকারের করণীয় ব্যাখ্যা করেছেন আইন মন্ত্রকের সচিব আবু সালেহ শেক মোহাম্মদ জহিরুল হক। তিনি বলছেন, ‘‘অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করেই আইনটি পাস করা হয়েছে। বাস্তবতার ভিত্তিতেই। এখন এটা বাতিল করার কোনও চিন্তাভাবনা নেই সরকারের।’’
এই আইনটি পাস করার বিষয়ে মানবাধিকার সংগঠনসহ বিভিন্ন সংগঠনের সমালোচনা করে আসছিল। সংসদে পাসকৃত বিল হিসাবে মেয়ে ও ছেলেদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ ও ২১ বছর রাখা হলেও ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ তার চেয়ে কম বয়সেও বিয়ে দেয়া যাবে বলেও উল্লেখ করা হয়। এর আগে ২০১৬ সালের ২৪ নভেম্বর মন্ত্রিসভায় বিলটি অনুমোদন দেয়। বিলের ১৯ ধারায় বিশেষ বিধানে বলা হয়, এই আইনের অন্যান্য বিধানে যা কিছু থাকুক না কেন, বিধি দ্বারা নির্ধারিত কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্তবয়স্কের সর্বোত্তম স্বার্থে, আদালতের নির্দেশ এবং মাতা-পিতা বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অভিভাবকের সম্মতিক্রমে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বিয়ে সম্পাদিত হলে তা এই আইনের অধীন অপরাধ বলে গণ্য হবে না। এই বিষয়ে দেশের বিভিন্ন নারী সংগঠন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বিলটি পাস না করার জন্য আইন প্রনেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। নারী শিশু ও মহিলা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মনে করেন, বিশেষ বিধানের এই সুযোগ যে কেউ চাইলেই পাবে না। কোনো অনভিপ্রেত ঘটনার ক্ষেত্রে পিতামাতা বা বৈধ অভিভাবক এবং আদালতের সম্মতি লাগবে। আদালতের অনুমতি ছাড়া কেউ বিয়ে দিতে পারবে না। পাস হওয়া বিলে বিশেষ প্রেক্ষাপট বিধি দ্বারা নির্ধারিত রাখার কথা বলা হয়। এটি সংসদে উত্থাপিত খসড়ায় উল্লেখ ছিল না।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিছুদিন আগে বলেছিলেন, বিরোধিতাকারীরা বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞান। সমাজ বাস্তবতার কথা বিবেচনায় রেখেই এই আইন করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *