মেয়েটি কাঁদালেন সবাইকে

Slider নারী ও শিশু

fda3dabb2f32066f9b8735037aaae5ed-58c3da85eee96

ঢাকা; রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আজ মানব পাচার নিয়ে বায়রা ও র‍্যাব আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা—প্রথম আলোপরিবারের দারিদ্র্য দূর করতে বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মেয়েটি। কিন্তু দালালরা তাঁকে নিয়ে যায় সিরিয়ায়। সেখানে তাঁকে শারীরিক ও যৌন নিপীড়নের শিকার হতে হয়। নিজের সেই দুর্ভোগের কথা মেয়েটি যখন বলছিলেন, তখন উপস্থিত অনেকেই চোখ মুছছিলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘আমরা এমন নির্যাতনের আর কোনো ঘটনা শুনতে চাই না।’আজ শনিবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এই সেমিনারের আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা) ও র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। অনুষ্ঠানের শুরুতেই দক্ষিণ আফ্রিকায় পাঠানোর নামে দালালদের প্রতারণার কথা তুলে ধরেন ফরিদপুরের মহিব উল্লাহ। এরপর সিরিয়া-ফেরত পটুয়াখালীর মেয়েটি এসে তাঁর দুর্ভোগের কথা বলতে শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘আমাকে তিন মাস আটকে রাখা হয়। একটা পতিতালয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়। শরীরে বৈদ্যুতিক শক দিয়েও নির্যাতন করা হতো। একদিন বাড়িতে ফোন করে মাকে সব বলি। এরপর র‍্যাবের সহায়তায় দেশে ফিরে আসি।’

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মানব পাচারকারীদের দেশের শত্রু উল্লেখ করে তাদের প্রতিরোধে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের একজন নারী বিদেশে গিয়ে নির্যাতিত হবেন, এটা কোনোভাবেই মানা যায় না। এই ধরনের খবর আমাদের কষ্ট দেয়। এসব বন্ধে আমাদের কাজ করতে হবে। সবাইকে সচেতন হতে হবে।’

আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আমি মালদ্বীপে গিয়ে দেখি অনেক লোক রাস্তায় শুয়ে আছে। কাজ নেই। দূতাবাস থেকে বলা হয়, এরা বৈধভাবে আসেনি। আরেক দেশে গিয়ে শুনি সেখানকার জেলে আট শ বাংলাদেশি। সাগরপথে হাজার হাজার মানুষ গেছে। থাইল্যান্ড বা মালয়েশিয়ার জঙ্গলে অনেকের গণকবর মিলেছে। আমরা চাই না এগুলো থাকুক।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এই ধরনের যেকোনো কিছু ঘটলেই মানুষ জিজ্ঞেস করে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কী করে? সে কারণেই আমাদের কাজ করতে হয়। র‍্যাব এ কারণেই মানব পাচার প্রতিরোধে কাজ করছে। সবাই মিলে সুসংগঠিতভাবে কাজ করতে হবে।’
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ থেকে যাঁরা বিদেশে যাবেন, তাঁদের দক্ষ হয়ে যেতে হবে। সরকার এ জন্য নতুন করে আরও ৪০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করছে। আর প্রবাসীদের কল্যাণেও সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানসচিব বেগম শামছুন নাহার বলেন, অবৈধভাবে কারোই বিদেশে যাওয়া উচিত না। মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানোর জন্য নারী পাওয়া যাচ্ছে না। আর অনেকেই অবৈধভাবে চলে যাচ্ছেন। সচিব এই খাতের ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনাদের কারণেই মালয়েশিয়ায় সরকারিভাবে লোক যেতে পারেনি। আপনারাই এখন পরস্পরের বিরুদ্ধে মামলা করছেন।’
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক সেলিম রেজা বলেন, ‘গত বছর ৭ লাখ ৫৭ হাজার লোক চাকরি নিয়ে বিদেশে গেছেন। আমরা মনে করছি এই বছর এই সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়াবে। তবে অবৈধভাবে যারা লোক পাঠায়, সেই মানব পাচারকারীরা দেশ ও জাতির শত্রু। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে।’
র‍্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘মানব পাচারের মতো মর্মান্তিক ঘটনা থেকে আমরা বের হতে চাই। র‍্যাব এ জন্য কাজ করছে। তবে গ্রামগঞ্জের মানুষকেও সচেতন হতে হবে। সাত-আট লাখ টাকা খরচ করে বিদেশে না গিয়ে দেশেই এখন অনেক কাজ করা যায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।’
বায়রার সভাপতি বেনজির আহমেদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। র‍্যাব-৩-এর কমান্ডিং কর্মকর্তা তুহিন মোহাম্মদ মাছুম মানব পাচার প্রতিরোধে র‍্যাবের বিভিন্ন কার্যক্রম ও সুপারিশ তুলে ধরেন। বায়রার সাবেক সভাপতি নুর আলী ও বর্তমান মহাসচিব রুহুল আমিন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। তাঁরা অযথা ব্যবসায়ীদের যেন হয়রানি না করা হয়, সে জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে পাচার হয়ে ফিরে আসা ১০ জনকে এক লাখ টাকা করে দেওয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *