ওসমানীনগর ও জগন্নাথপুরে বিএনপি প্রার্থী জয়ী

Slider গ্রাম বাংলা সিলেট

56417_f4

 

ঢাকা; ওসমানীনগর ও জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। ওসমানীনগরে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন ময়নুল হক চৌধুরী। তিনি পেয়েছেন ২০৭৭৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জগলু চৌধুরী পেয়েছেন ১৮৬৭৮ ভোট। তৃতীয় অবস্থানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আতাউর রহমান পেয়েছেন ১০০৬৮ ভোট। আর জাতীয় পার্টির শিব্বির আহমেদ পেয়েছেন ২৪২৪ ভোট।
এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি নেতা গয়াস মিয়া ২৯৮৬৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। একই সঙ্গে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির মুসলিমা আক্তার চৌধুরীর ২৫৫৩৬ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
অন্যদিকে জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী আতাউর রহমান ২৯৮৬৩ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের আকমল হোসেন পেয়েছেন ২৪০২৩ ভোট।
এর আগে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়। প্রতিটি কেন্দ্রে ছিল ব্যাপক নিরাপত্তা। প্রশাসন ছিল সতর্ক। প্রতিটি কেন্দ্রই ব্যাপক নিরাপত্তা ছিল প্রশাসনের। বাইরে স্ট্রাইকিং ফোর্স আর ভেতরে পর্যাপ্ত পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনী। নির্বাচনী প্রচারণাকালে দুই খুনের ঘটনায় আতঙ্ক ছিল ওসমানীনগরে। আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে ওসমানীনগরের নিহত হয় ২ জন। এই দুই খুনে ভোটারের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক দেখা দেয়। খুনের ঘটনার পর উৎসবমুখর পরিবেশ পরিণত হয় বিষাদে। এ অবস্থা কাটাতে প্রশাসন ব্যাপক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। নির্বাচনের দুদিন আগে থেকে প্রশাসন শোডাউন শুরু করে গোটা ওসমানীনগরে। দলবেঁধে বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশের সদস্যরা সাইরেন বাজিয়ে টহল দেয়। নতুন ধারার এই টহল নিয়ে ওসমানীনগরের ভোটারের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে। তবে সংঘর্ষের রেশ ভোটের মধ্যে দেখা যায়। ভোটার উপস্থিতি ছিল অনেক কম। সকাল তখন ৮টা। ওসমানীনগরের কুরুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র। কেন্দ্রের ভেতরে সুনসান নীরবতা। দু-একজন ভোটারের উপস্থিতি। কেন্দ্রের বাইরে একজন সাব-ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে পুলিশ। ভোটার ছাড়া কাউকেই তারা কেন্দ্রের আশপাশে ঢুকতে দিচ্ছেন না। সাড়ে ৮টার দিকে দয়ামীর আব্দুস সুবহান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গেলে কয়েকজন ভোটারের দেখা মেলে। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জগলু চৌধুরীর কেন্দ্র এটি। কিন্তু তেমন ভোটারের উপস্থিতি নেই। সকাল ৯টার দিকে কেন্দ্রে আসেন জগলুল চৌধুরী। তিনি নিজের ভোট প্রদান করেন। দয়ামীর থেকে তাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আসার পথে ডানে চকবাজার মাদরাসা ভোটকেন্দ্র। ওই কেন্দ্রের বাইরে জটলা। কিন্তু ভেতরে কোনো ভোটারের সারির দেখা মিলেনি। বেলা তখন ১১টা। তাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র। ওই কেন্দ্রের ভেতর একেবারেই ফাঁকা। এ কেন্দ্রের ভোটার হচ্ছেন নৌকার প্রার্থী আতাউর রহমান। বাইরে তার সমর্থকরা দৌড়ঝাঁপ করলেও ভোটাররা কেন্দ্রে না আসায় তাদের খুব টেনশন ছিল। এরই মধ্যে ওই কেন্দ্রে পুলিশের এডিশনাল ডিআইজি নজরুল ইসলাম পরিদর্শনে আসেন। এ সময় তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পুলিশ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছে। কেউ বিশৃঙ্খলা ঘটাতে চাইলে পুলিশ তার পাল্টা জবাব দেবে। একই কথা জানালেন সিলেটের পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায় সবাই। প্রশাসনও চায়। সুতরাং শান্তি বজায় রাখতে সবাইকে কাজ করতে হবে। দুপুর সাড়ে ১১টার দিকে গোয়ালাবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে কোনো ভোটারের দেখা মেলেনি। প্রিসাইডিং অফিসার মাওলানা মোশারফ হোসেন বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।
দুপুরের দিকে পাটলীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি কিছুটা বাড়ে। আর জায়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেও ৩০ থেকে ৩৫ জন ভোটার উপস্থিত ছিলেন। ওই দুটি কেন্দ্র হওয়ায় পুরুষ ভোটারের পাশাপাশি নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল বেশি। গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মানিক জানান, গোয়ালাবাজারের ভোট কেন্দ্রে এখন আর গোলযোগ হয় না। এবারের নির্বাচনেও সবাই শান্তিপূর্ণভাবে রায় দিচ্ছেন। তিনি বলেন, কেউ কেন্দ্র দখল করতে চাইলে তাকে সামাজিকভাবেও প্রতিহত করা হবে। কারণ, উৎসবকে যারা বিষাদ করবে তারা সমাজের শত্রু। দুপুরের পর বুরুঙ্গা ইকবাল আহমদ উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে গেলে প্রিসাইডিং অফিসার জানান, তার কেন্দ্রে মোট ৫টি বুথ রয়েছে। ভোটার উপস্থিতি খুবই কম। সাদিপুর ইউনিয়নেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঘটেছিল ডাবল মার্ডার। এ কারণে সাদিপুরের দিকেই নজর ছিল সবার বেশি। প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রায় সবাই সাদিপুরের বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। শরৎ সুন্দরী উচ্চবিদ্যালয়, রহমতপুর উচ্চবিদ্যালয়সহ ওই ইউনিয়নের কয়েকটি কেন্দ্র ছিল অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু গতকাল বিশৃঙ্খল কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে ভোটারের কম উপস্থিতি ভাবিয়েছে সবাইকে। ওই কেন্দ্রে এক এজেন্ট ও স্থানীয় বাসিন্দা জাকির হোসেন জানান, নারী ভোটারের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক কাজ করেছে। দলীয় প্রার্থীরা দুপুরের পর বাড়ি বাড়ি গিয়েও ভোটার টানতে পারেননি। তিনি বলেন, তবে এবার স্বস্তির মধ্যে নির্বাচন হয়েছে। চাতলপাড় ভোটকেন্দ্রের পাশের বাড়ির বাসিন্দা ছামির আলী জানান, ভোটের পরিবেশ নিয়ে সবাই সন্তুষ্ট। ভোট কম কাস্ট হলেও পরিবেশ ভালো থাকায় সন্তুষ্ট সবাই।
ওদিকে জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তবে ভোটার উপস্থিতি ছিল কম।
ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেই প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল প্রায় শূন্য। নজরে পড়েনি দীর্ঘ কোনো নারী কিংবা পুরুষ ভোটারের লাইন। অধিকাংশ কেন্দ্রই ছিল ফাঁকা। ধারণা ছিল বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিকাল ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত সামান্য ভোটার উপস্থিতি দেখা গেল কয়েকটি কেন্দ্রে। উপস্থিতি কম হওয়ার কারণ হিসেবে স্থানীয় ভোটাররা জানিয়েছেন, এ নির্বাচন নিয়ে কোনো আগ্রহ না থাকায় ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছে।
ভোটাররা জানান, জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় সকল নির্বাচনে এ উপজেলায় ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার পাশাপাশি নির্বাচনী উত্তাপে মুখর থাকে। কিন্তু এবারের নির্বাচনে কোনো উৎসাহ উদ্দীপনা ছিল না।
এদিকে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মুক্তাদীর আহমদ মুক্তা পৌর শহরের ইকড়ছই সিনিয়র মাদ্ররাসা ভোটকেন্দ্রের সামনে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নানের এপিএস আবুল হাসনাত নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করে প্রভাব বিস্তার করছেন। তিনি বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন।
সহকারী রিটার্নিং অফিসার জগন্নাথপুরের ইউএনও মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ জানান, ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও নির্বাচনের পরিবেশ খুবই ভালো। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ধারণা করছি ৪০ ভাগ ভোট কাস্টিং হতে পারে।  এ উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা এক লাখ ৬৭ হাজার ৪৯৯ জন। এর মধ্যে পুুরুষ ভোটার ৮৩ হাজার ৬৯২ ও মহিলা ভোটার ৮৩ হাজার ৮০৭ জন। মোট ৮৭টি ভোট কেন্দ্রের ৪৩২টি বুথে ভোট নেয়া হয়।
একটি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়নে ১৬ জন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্বে ছিলেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ ৮১৩ জন, বিজিবি ৬০ জন, র‌্যাব ৩২ জন, আনসার ও ভিডিপির ১ হাজার ৪৪ এছাড়াও পুলিশ ও র‌্যাবের সাদা পোশাকে বিপুল সংখ্যক সদস্যসহ ৯টি স্টাইকিং ফোর্স ও ৩১টি মোবাইল টিম দায়িত্বে ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *