সোমবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৪

ঢাকার একুশে মেলায় বই বিক্রির ঝড়

Slider ঢাকা সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী সারাদেশ

image

 

 

 

 

ঢাকা;  ঢাকার গুলশন, বসন্তে ফের শান্ত, সুন্দর, স্বপ্নময়। সকাল সন্ধায় মৃদুমন্দ বাতাসে অপ্রতিম মধুরতা। ভিড় বিদেশিদেরও। ভাষাকে ভালবেসে গান গাইছে তারাও নিজেদের ভাষায়। বাংলার মতই সুর এক, ভাষাটা কেবল আলাদা। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’, গানটি ভিনদেশিরা আপন করে নিয়েছে। কী করে পারল। তাদের দেশে তো ভাষার জন্য রক্ত ঝরেনি। ভাষা শহিদদের ব্যথায় মানুষের বুক কাঁপেনি। জিভ থেকে মাতৃভাষা ছিঁড়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়নি। প্রাণের ভাষাকে কলজে থেকে উগরে ফেলতে বন্দুক গর্জে ওঠেনি। ব্রিটেন, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, ইথিওপিয়া, নেদারল্যান্ডস, রোমানিয়া, রাশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, চিন, কোরিয়া, জাপান, ভারত একই মঞ্চে। গাইছে বাঙালির গান। উদাত্ত কণ্ঠে অন্তহীন উন্মাদনায়। দেশ, জাত, ধর্মের বিভেদ উধাও। জানে না, কী ভাবে দু’য়ের মাঝে পাঁচিল তুলে আলাদা হতে হয়। বিদ্বেষে শেষ করতে হয় সম্পর্ক। সব বাধা ভেঙে মিশলেই সুখ পায়। বিদেশিরাও দ্বিধাহীন চিত্তে স্বীকার করে, ভালবাসা শেখার দেশ বাংলাদেশ।

১৯৪৭-এ স্বাধীনতার আগে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পাকিস্তান উর্দুকে রাষ্ট্রীয় ভাষা করার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৪৭-এর ১৭ মে হায়দরাবাদের সম্মেলনে মুসলিম লিগ নেতা চৌধুরী খালিকৃজ্জামান ঘোষণা করেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জিয়াউদ্দিন সমর্থন করেন। বিপদ সঙ্কেত ছড়ায় পূর্ব বাংলায়। কী হাল হবে সেই ভাবনায় অধীর হয়ে ওঠে বাঙালি। দুর্ভাবনায় জল ঢালতে পাল্টা দাবি তোলেন ভাষাবিদ মহম্মদ শহীদুল্লাহ। ‘আজাদ’ পত্রিকায় তিনি লিখেছিলেন, বাংলাই হওয়া উচিত পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। দুটি রাষ্ট্রভাষা করা গেলে উর্দুর কথা ভাবা যেতে পারে।

১৯৫২-র ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার স্বীকৃতির দাবিতে ঢাকায় ছাত্র আন্দোলনের গর্জন। পুলিশের গুলিতে প্রাণ দেন রফিক, বরকত, শফিক, জব্বার, সালাম। সেই রক্ত স্রোতেই জন্ম নেয় বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রাম। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও ভাষার দায় শেষ হয়নি। একুশে ফেব্রুয়ারির প্রেরণায় ভাষাকে বরণ করে নতুন প্রাণে। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় ঢাকার একুশে গ্রন্থ মেলা। মাস জুড়ে চলে। বাঙালি বসন্তের রূপ খুঁজে পায় বইয়েতেই। শুধু বাংলাদেশিরা নয়, বিদেশি লেখক, কবিরাও গন্ধে গন্ধে ছুটে আসেন। ফুল ফুটলে ভ্রমর কী দূরে থাকতে পারে। এবার এসেছিলেন আর্জেন্তিনা, জার্মানি, পুয়ের্তোরিকো, রাশিয়া, চিনের কবি, লেখকরা। মেলার উদ্বোধনের আবেগ দেখে তাঁরা অভিভূত। অবিরাম বৃষ্টির মতো ঝরছে বাংলা বই। বই বন্যায় ভাসছে মানুষ। বইয়ের ঝাঁকা নামতে না নামতেই শেষ। কলকাতার বই মেলার বিক্রি ২০ কোটি। ঢাকার মেলায় প্রথম পনের দিনেই বিক্রি ৪০ কোটি ছাড়িয়েছে। শেষে শত কোটিতে গিয়ে পৌঁছলেও আশ্চর্যের কিছু থাকবে না।

আধুনিক দুনিয়ায় বিনোদনের উপকরণ তো অনেক। সবাই সে দিকেই ছুটছে। সব ফেলে বইকে বুকে তুলে নেওয়ার লোক কোথায়। আছে, বাংলাদেশে আছে। সেখানে বাংলা বইয়ের স্থান বাঙালির হৃদয়ে। তাকে স্থানচ্যুত করার শক্তি কারও নেই। বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান যে দিন রাষ্ট্রপুঞ্জে বাংলায় ভাষণ দিয়েছিলেন সে দিনই বিশ্ব আন্দাজ করেছিল বাংলার প্রাণশক্তি। যে ভাষা পৃথিবীর কোমলতম ভাষা। ভালবাসায় বিশ্বকে বাঁধা যার একমাত্র আশা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *