ঢাকাকে যে বিষয়ে সচেতন হতে হবে

Slider সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী

55345_hnd

 

 

 

 

পার্বত্য চট্টগ্রামের পঙ্কিলতাপূর্ণ সীমান্তে বাংলাদেশ নির্মাণ করছে সীমান্ত চৌকি। এজন্য বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীকে মিজোরাম ও ত্রিপুরার সীমান্ত সড়ক ব্যবহার করতে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। দু’দেশ তাদের আস্থার ঘাটতি মিটিয়ে সম্পর্ক গড়তে কতটা এগিয়েছে তা বোঝা যায় এতে। এপ্রিলের শুরুতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে আসার কথা রয়েছে। এর প্রস্তুতি হিসেবে গত সপ্তাহে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শঙ্কর বাংলাদেশ সফর করেন। এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ও নিরাপত্তাবিষয়ক কর্মকর্তারা ঘনিষ্ঠভাবে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করার বিষয়ে আলোচনা করেন। ওই বৈঠকেই ভারতের এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেয়া হয়। যদি পরিকল্পনামতো শেখ হাসিনার সফর হয় তাহলে ২০১০ সালের পর এটাই হবে তার প্রথম দ্বিপক্ষীয় ভারত সফর। ২০১০ সালেই সীমান্ত চুক্তির মূল স্মারকে স্বাক্ষর করা হয়েছিল। ওই চুক্তি পুরোপুরি এখন বাস্তবায়িত হয়েছে। ২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফর করেন। তখন যেসব ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় তাতে সম্পর্কের যে অগ্রগতি হয় তা প্রধানমন্ত্রী হাসিনার এ সফরে আরও সমৃদ্ধ হবে। শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন ধরে এটা পরিষ্কার করেছেন যে, তিনি তখনই এই সফর করবেন যখন দেখা যাবে বাস্তব ফলোদয় হয় এমন বিষয় (আলোচনার) টেবিলে এসেছে। এখন কর্মকর্তারা দু’মাস ধরে এই সফরের বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন। এতে ইঙ্গিত মেলে, বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা আশা করা যায়। এ সফরে প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্ব চুক্তি, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি, গঙ্গায় ব্যারেজ প্রকল্প, জ্বালানি ও সংযুুক্তি বা কানেকটিভিটি প্রকল্প নিয়ে জল্পনা কল্পনা রয়েছে। এর যেকোনোটি দু’পক্ষের মধ্যকার সম্পর্ককে দৃঢ় করবে। ক্রমবর্ধমান হারে তাতে উভয় প্রতিবেশীর জন্যই ‘উইন-উইন’ পরিস্থিতি হবে বলে বর্ণনা করা হচ্ছে।
তবে নয়া দিল্লি ও ঢাকাকে সামনে চলার পথে সম্ভাব্য বাধাগুলোর বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। এর সঙ্গে যুক্ত (ভারতের) কেন্দ্রীয় সরকার ও সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলো। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এর মধ্যে পানি বণ্টন চুক্তি আবেগপূর্ণ বিষয়। তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি আটকে আছে। কারণ, পশ্চিমবঙ্গের ‘রিজার্ভেশন’। এ বিষয়টিতে নজর দিতে হলে কেন্দ্রীয় সরকারকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পৌঁছতে হবে। একইভাবে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের ফারাক্কা ব্যারেজ প্রকল্প নিয়ে রয়েছে পিছুটান বা আপত্তি। ওদিকে শেখ হাসিনার জন্য রাজনৈতিক উদ্বেগ অপেক্ষাকৃত বেশি। আগামী ২০১৮ সালে বাংলাদেশে নতুন নির্বাচনের মুখে তিনি। বিরোধীরা তাকে ভারতের প্রতি নমনীয় হিসেবে অভিযোগ করেন। পানির প্রশ্নে তিনি শূন্য হাতে দেশে ফিরে যাবেন- এমনটা হতে পারে না। অন্যদিকে সীমান্ত সমস্যার সমাধান হয়েছে। তবে সীমান্তে গুলি বন্ধ হয়নি। এ ইস্যুতে শেখ হাসিনাকে টার্গেট করেন তার বিরোধীরা। ওদিকে গত বছর বাংলাদেশ সফর করেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি জিনপিং। অবকাঠামো নির্মাণে সহযোগিতা ও যৌথ উদ্যোগে তিনি ৩৮০০ কোটি দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন। বাংলাদেশে চীনের এই বিনিয়োগ নিয়ে ভারতের যে অনাস্থা রয়েছে সে বিষয়টি আমলে নিতে হচ্ছে শেখ হাসিনাকে। তিনি অবশ্য এ বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরেছেন। বলেছেন, যদি সব প্রকল্প ঠিকঠাক মতো সম্পন্ন হয় তাহলে বাংলাদেশে যে সমৃদ্ধি আসবে তার সুবিধা ভারতও পাবে। বাংলাদেশ ও প্রতিবেশী আরো দেশে অধিক হারে ‘ওয়ান বেল্ট ওয়াল রোড’ প্রকল্পে অনেক বেশি বিনিয়োগ করছে চীন। এমন প্রকল্প থেকে ভারত এখন দূরে রয়েছে। এ নিয়ে ভারতের উদ্বেগ রয়েছে। এ বিষয়ে ঢাকাকে আরো সচেতন হতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *