আমরাও শহীদের সন্তান

Slider ফুলজান বিবির বাংলা সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী

martyrs son

 

 

 

 

মাসুদ রানা;   ১৯৫২’র ভাষা শহীদ থেকে ৭১এর ত্রিশ লাখ শহীদ সবই জাতীয় চেতনার অংশ। এটি আন্তর্জাতিক চেতনার অংশও বটে। বাংলাদেশে এ চেতনা নিয়ে বিতর্ক ও বাড়াবাড়ি আছে, যা বিশ্ববাসী অবগত নয়। এটি প্রকাশ পেলে সুন্দরবন যেভাবে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ থেকে বাদ পড়ছে, তেমনি ২১ ফেব্রুয়ারী নিয়েও কথা উঠবে। তাই আমাদেরকে শহীদের প্রকৃত চেতনা ধারণ করতে হবে। শহীদের সন্তান বা যোগ্য উত্তরসূরী হতে হবে।
৫২’র ভাষা আন্দোলন বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। অথচ তাতে প্রাণ হারিয়েছে মাত্র কযেকজন। ১৯৭১ সালে তার চেয়ে লাখোগুণ বেশি শহীদ হয়েছে। কিন্তু তাদের আত্মত্যাগ বিশ্বজুড়ে সমাদৃত নয়। এর কারণ, শহীদের চেতনা নিয়ে বিতর্ক ও বাড়াবাড়ি।
বাংলাদেশে শহীদ বলতে শুধু ভাষা শহীদদের বুঝানো হয়। মুক্তিযুদ্ধে প্রানদানকারি ত্রিশ লাখ শহীদের কোনো মর্যাদা নেই। তারা মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্তও নয়। বাংলাদেশে তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা মাত্র প্রায় দুই লাখ। শুধু এ তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারই কোটা সুবিধাপ্রাপ্ত। প্রকৃতপক্ষে ১৯৭১ এর সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালির মধ্য থেকে ত্রিশ লাখ শহীদ, দুই লাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোন ও কোটি কোটি সহযোদ্ধাদের সঠিক মূল্যায়ন করলে দেশের সবাই মুক্তিযোদ্ধা পরিবারভুক্ত হবার কথা। কিন্তু তা কি হয়েছে? শুধু তালিকাভুক্ত পরিবারের সদস্যরাই মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদের সন্তান পরিচয় দিচ্ছে এবং স্বার্থ ভোগ করছে। স্বাধীনতাযুদ্ধে লড়াকু বীর ও শহীদদের নিয়ে এ বিতর্কই বাংলাদেশে শহীদের চেতনাকে বিনষ্ট করেছে।
বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শহীদ চেতনা সঠিক ছিল। তিনি ভাষা শহীদ ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সবাইকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছেন। যেমন ৭ই মার্চের ভাষণে তিনি বলেন, “আমরা ৫২ সালে রক্ত দিয়েছি—— রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি।” একইভাবে ১৯৭২ এর ১০ জানুয়ারী দেশে ফিরে লাখো জনতার সামনে বারবার শহীদদের স্মরণ করেন এবং বলেন, “ত্রিশ লাখ শহীদ ও দুই লাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ আজ স্বাধীন হয়েছে। আপনারাই জীবন দিয়েছেন এবং দেশ স্বাধীন করেছেন। এ স্বাধীনতা রক্ষার দায়িত্বও আপনাদেরই।” ।
বঙ্গবন্ধু শহীদ-গাজি নির্বিশেষে দেশের সবাইকে মুক্তিযোদ্ধা ঘোষণা করেন। একজন বন্দি ও আত্মত্যাগী যোদ্ধা হিসেবে নিজেও সাধারণ মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্ব স্বীকৃতি আদায়ের জন্য সাতজন শহীদসহ মোট ৬৭৬ জনকে বিশেষ খেতাব দেন। তাঁর সময়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বা পঙ্গু ও যুদ্ধাহত যোদ্ধাদের জন্য ভাতা সুবিধা ছিলনা। মুক্তিযোদ্ধা-শহীদ-আত্মত্যাগী পার্থক্য ছিলনা। দেশের সবাই মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদের স্বজন বিবেচিত ছিল।
আজ বঙ্গবন্ধু থাকলে মুক্তিযুদ্ধে প্রানদানকারি লাখো শহীদগণ ভাষা শহীদদের মতোই মর্যাদা পেতেন। শুধু দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হতো না। বঙ্গবন্ধুর মহান চেতনা তথা ‘শহীদ-গাজী নির্বিশেষে ১৯৭১ এর সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালিই মুক্তিযোদ্ধা’ প্রতিষ্ঠিত হতো। তাতে দেশের বর্তমান ষোল কোটি নাগরিক সবাই মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারভুক্ত হতো। আমরাও গর্বভরে শহীদের সন্তান পরিচয় দিতাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *