পদ্মা সেতুর বিরোধীতাকারীদের শাস্তি দাবি সংসদে

Slider জাতীয়

53263_lead

 

সংসদ রিপোর্টার; পদ্মা সেতুর মামলার রায় ইস্যু নিয়ে সংসদে ক্ষোভ জানিয়েছেন এমপিরা। তারা বলেছেন, পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগকারীরা দেশের শত্রু। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলারও পরামর্শ দেন তারা। রোববার সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে সরকারি, বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র এমপিরা এসব দাবি জানান। সাম্প্রতিক সময়ে সংসদে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে চলে গতকালের পয়েন্ট অব অর্ডার। প্রায় ২০ জন এমপি আড়াই ঘন্টার বেশি সময় ধরে পদ্মা সেতু ইস্যু নিয়ে বক্তব্য রাখেন।
এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদ সচিবালয়ে উপস্থিত থাকলেও অধিবেশন কক্ষে ছিলেন না। অধিবেশনের শুরুতেই পদ্মা সেতু নিয়ে কানাডার আদালতের রায় নিয়ে পয়েন্ট অব অর্ডারে অনির্ধারিত বিতর্কের সূত্রপাত করেন বিরোধী দলের সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ। এ বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনায় অংশ নেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, আইনমন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হক, সরকারি দলের শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আবদুল মান্নান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল ও জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। বিকাল সাড়ে চারটা থেকে এই অনির্ধারিত বিতর্ক শুরু হয়ে মাঝে ২০ মিনিটের বিরতী শেষে রাত পৌণে ৮টা পর্যন্ত চলে। আলোচনায় অংশ নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বিশ্ব ব্যাংক দুর্নীতির ভূয়া অভিযোগে অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়া হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সংসদে দাঁড়িয়েই দীপ্ত কন্ঠে বলেছিলেন, নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু করা হবে। বিশ্বব্যাংকেই দুর্নীতির প্রমাণ দিতে হবে। সেই চ্যালেঞ্জে প্রধানমন্ত্রী সফল হয়েছেন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু যেমন কারও কাছে মাথানত করেননি। তেমনি তাঁরই কন্যা শেখ হাসিনাও বিশ্ব ব্যাংকের কাছে মাথানত না করে নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু করছেন। তিনি বলেন, অন্যায়ভাবে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তৎকালীন মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে জোর করে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। কিন্তু আজ প্রমাণ হয়েছে আবুল হোসেন সত্যিই নির্দোষ, একজন দেশপ্রেমিক। তিনি বলেন, কানাডার আদালত রায়ে বলেছে, গুজবের ভিত্তিতে এ অভিযোগটি আনা হয়েছে। এটা ছিল দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।  কিছু লোক আছে, উন্নয়নমূলক কাজ নিলেই বিরোধীতা করে। পদ্মা সেতু হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৩ কোটি মানুষ উপকৃত হবে, প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবে। যারা পদ্মা সেতু নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে, দেশকে বিশ্বের সামনে হেয় করেছে তারা দেশের শত্রু। এদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু দেশের উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্মাণ করতে চেয়েছেন। বিশ্বব্যাংকের এতো শক্তি নেই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে হেয় করতে পারে। টিআইবিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, এ সংস্থাটি বলে বিশ্বব্যাংকের কাছে কৈফিয়ত চাইতে। আমরা চাইব কেন, তারা কেন চান না। এই ষড়যন্ত্রের পেছনে মূল কলকাাঠি নেড়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনুস। এদের কারণে সৈয়দ আবুল হোসেনসহ অনেককে কী যন্ত্রণা, অপমান সহ্য করতে হয়েছে। এই ড. ইউনুস গ্রামীণ ব্যাংকের ৫ বছরের বাড়ি ভাড়া বাকি রেখেই চলে গেছেন। এ ব্যক্তিটি বড় বড় কথা বলেন, হীতাপদেশ দেন- কিন্তু তিনি তাঁর আরেকটি মেয়ের কথা লুকিয়ে রেখেছিলেন। এটা তাঁর কেমন ধরনের নৈতিকতা? বিশ্বব্যাংকসহ সকল সংস্থাগুলোকে অনুরোধ, পাথরের চোখ দিয়ে চলবেন না, ঘুষখোরদের কথায় চলবেন না। আমাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে, অথচ বিশ্বব্যাংক নিজেরাই করাপ্ট (দুর্নীতিবাজ)। তারাই দুর্নীতির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, পদ্মা সেতু ছিল আমাদের একটি চ্যালেঞ্জ। ওই সময় বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন- দুর্নীতির কারনেই বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বন্ধ করেছে। এ কারণে সরকারের পদত্যাগও চেয়েছিলেন। এখন কী জবাব দেবেন খালেদা জিয়া? মিথ্যা অভিযোগের কারণে খালেদা জিয়ারই পদত্যাগ করা উচিত। তিনি বলেন, বারবার দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত হয়েছে, এখনও হচ্ছে। বাংলাদেশের এই অভূতপূর্ব উত্থান ও অগ্রগতি দেশী-বিদেশী অনেক অপশক্তি সহ্য করতে পারছে না। প্রধানমন্ত্রীকে হেয় ও ছোট করার জন্য ড. ইউনুস অনেক ষড়যন্ত্র করেছেন। সে একজন অকৃতজ্ঞ মানুষ। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এই ব্যক্তিকে আমরা গ্রামীণ ফোনের লাইসেন্স দিয়েছিলাম। জাতীয় স্মৃতিসৌধে ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কোনদিন যাননি এই অকৃতজ্ঞ ব্যক্তিটি। ওয়ান ইলেভেনের সময়ও বিরাজনীতিকরণ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিল। আজ বিশ্বব্যাংকের মিথ্যাচার প্রমাণ হয়ে গেছে। এখন রামপাল নিয়েও ষড়যন্ত্র হচ্ছে। ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য তিনি আইনমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, মামলা করুন, খরচ আমরা দেব। আর ড. ইউনুসসহ আর যারাই জড়িত তাদের সংসদে তলব করে ব্যাখ্যা চাইতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *