আশকোনা অভিযানে ‘জঙ্গির’ স্ত্রী-সন্তান নিহত

Slider জাতীয়
c06cadb00fe7b9361550ffa9a4e019ec-04
ঢাকা; ‘জঙ্গি আস্তানা’ সন্দেহে রাজধানীর আশকোনায় ‘সূর্য ভিলা’ নামের বাড়িতে অভিযানকালে দুজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে একটি শিশু। আর আত্মসমর্পণ করেছে চারজন। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে আজ শনিবার বিকেল পৌনে চারটা পর্যন্ত চলা এই অভিযানের পরিসমাপ্তি ঘোষণা করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এ কথা বলেন।

আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বেলা সোয়া তিনটার দিকে ঘটনাস্থলে যান। বিকেল পৌনে চারটার দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদ ব্রিফিং করে বলেন, নিহত দুজনের মধ্যে একজন নারী ‘জঙ্গি’ সুমনের স্ত্রী। নিহত কিশোরটি আজিমপুরে পুলিশের অভিযানে নিহত জঙ্গি তানভীর কাদেরির ছেলে আফিফ কাদরি।

সকালে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ছানোয়ার হোসেন বলেন, সকাল সাড়ে নয়টার দিকে দুই শিশুকে নিয়ে দুজন নারী আত্মসমর্পণ করেন। এই চারজন হলেন মিরপুরের রূপনগরে পুলিশের অভিযানে নিহত জঙ্গি ও সাবেক মেজর জাহিদের স্ত্রী জেবুন্নাহার শীলা, তাঁর মেয়ে এবং পলাতক জঙ্গি মুসার স্ত্রী তৃষ্ণা ও তাঁর মেয়ে।

দুপুরে এডিসি ছানোয়ার হোসেন বলেন, ওই বাসায় আরও তিনজন ছিল। তাদের বের হওয়ার জন্য পুলিশ এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় দিয়েছিল। বারবার তাদের হ্যান্ডমাইকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা তাতে সাড়া দেয়নি। দুপুর সাড়ে ১২টার একটু পরে নিচতলা বাসার দরজা খুলে গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন এক নারী। কীভাবে ওই ‘জঙ্গি’ নারী বিস্ফোরণটি ঘটিয়েছেন, উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, তিনি নিজে ওই বাড়ির গাড়ি পার্কিংয়ের পিলারের পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি দেখতে পানে বোরকা পরা একজন নারী বাঁ হাতে একটি মেয়েশিশুকে ধরে বাসার দরজা খুলে বাইরে এসেছেন। ওই দুজন পার্কিংয়ের দিকে আসছিলেন। তখন তিনি তাঁদের দাঁড়াতে বলেন। বারবার বলেন হাত তুলতে। কিন্তু ওই নারী দাঁড়াননি। তিনি শিশুটিকে সঙ্গে নিয়ে সামনে দিকে হাঁটতে শুরু করেন। একপর্যায়ে বাঁ হাতে শিশুটিকে ধরে রেখে ডান হাত ওপরের দিকে তোলার মতো ভঙ্গি করেন। তবে তখন তিনি কোমরে রাখা বিস্ফোরকে চাপ দেন। সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ওই নারীর মৃত্যু হয়। ওই নারীই ‘জঙ্গি’ সুমনের স্ত্রী। বিস্ফোরণে আহত শিশুটিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। তখনো বাড়ির ভেতরে ছিল নিহত জঙ্গি তানভীর কাদেরির ছেলে।

আত্মঘাতী নারী জঙ্গির সঙ্গে থাকা আহত শিশুটিকে প্রথমে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে শিশুটিকে বেলা দুইটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান আশরাফুল হক প্রথম আলোকে বলেন, আনুমানিক চার বছর বয়সী শিশুটির অবস্থা সংকটাপন্ন। আজই শিশুটির অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা। শিশুটি কোনো কথা বলতে পারছে না। তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়‌নি। শিশুটির তলপেট থে‌কে নাড়িভুঁড়ির কিছুটা অংশ বের হয়ে এসেছে। সারা শরীরে স্প্রিন্টারের আঘাত রয়েছে। মাথা‌, হাত ও পা‌য়ে আঘাত আছে। শিশুটি প্রায় অচেতন। সে কোনো কথা বলার ম‌তো অবস্থায় নেই।

বেলা তিনটার দিকে এক ব্রিফিংয়ে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ভেতরে থাকা আরেক ‘জঙ্গি’ বিস্ফোরক ও গুলি ছুড়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও পাল্টা গুলি করেছে। এরপরে ভেতর থেকে আর কোনো শব্দ আসেনি। ভেতরে থাকা ‘জঙ্গি’ জীবিত না মৃত, তা নিশ্চিত নয় পুলিশ। পরে অবশ্য পুলিশ জানায়, আফিফ কাদরি মারা গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *