নারায়ণগঞ্জে ভোট শুরু

Slider সারাদেশ

2a99d95d6dc8bb376574c3fab8614d47-25

নারায়ণগঞ্জ; নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। সকাল ৮টায় আনুষ্ঠানিকভাবে এই ভোট গ্রহন শুরু হয়।
 গত তিন বছরে সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়া জয়ের যে ধারা তৈরি হয়েছে, এই নির্বাচন তার ব্যতিক্রম। নির্বাচনপ্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে গতকাল পর্যন্ত কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। দল বেঁধে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগের অনুকূল পরিবেশ বিদ্যমান বলে মনে করছেন ভোটাররা। তাই আজ সবার দৃষ্টি থাকবে নারায়ণগঞ্জের দিকে।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত বিরতিহীন ভোট গ্রহণ হবে। প্রায় পৌনে পাঁচ লাখ ভোটার আগামী পাঁচ বছরের জন্য তাঁদের ‘নগর অভিভাবক’ বেছে নিতে ভোট দেবেন। আজ রাতেই বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করার কথা রিটার্নিং কর্মকর্তার। ইতিমধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন।
প্রধান দুই মেয়র প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াৎ আইভী নৌকায় ভোট দিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। আর বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান ধানের শীষে ভোট দিয়ে পরিবর্তনের সূচনা করতে ভোটারদের সহযোগিতা চেয়েছেন।
দলীয়ভাবে ও দলীয় প্রতীকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনেই প্রথম ভোট হচ্ছে। এর আগে সব সিটি করপোরেশনে দলনিরপেক্ষ ভোট হয়েছে। রাজনীতি-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন রয়ে গেছে। জাতীয় নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অর্ধেকের বেশি আসনে সরকারদলীয় প্রার্থীদের জয় এবং পরে উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি ও সংঘাতের ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ জেলা পরিষদ নির্বাচনেও ভোটের আগেই সরকারদলীয় ২২ জন প্রার্থী জয়ের পথে রয়েছেন।
তা ছাড়া বর্তমান কমিশনের অধীনে বেশির ভাগ নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। এটা এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে শেষ নির্বাচন। ফলে কমিশন বিদায়ের আগে শেষটা ভালো করতে পারবে কি না, সেটা নিয়েও সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক দলগুলোর আগ্রহ রয়েছে। তাই শুধু সাধারণ মানুষই নয়, রাজনৈতিক দলগুলোরও দৃষ্টি থাকবে নারায়ণগঞ্জের দিকে।
দলীয় প্রতীকে হওয়া নির্বাচনগুলো নিয়ে একের পর এক অভিযোগ ওঠার মধ্যেই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত ২৪ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত এখানে বড় ধরনের কোনো অভিযোগ ওঠেনি। প্রার্থীদের মধ্যে একে অপরকে আক্রমণ করে বক্তব্য দেওয়ার ঘটনাও ছিল কম। কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে শঙ্কা থাকলেও তাঁদের মধ্যেও বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সরকারি দলের নেতা, এমনকি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও স্বীকার করেছেন, এই নির্বাচনের পরিবেশ ভালো আছে। নির্বাচন কমিশন, সরকার ও পুলিশ প্রশাসন বারবার আশ্বস্ত করছে, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে।

এই নির্বাচনের প্রতি সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক দলের আগ্রহের কারণ জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এ বি সিদ্দিক বলেন, ২০১১ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়েও আগ্রহ ছিল। তা ছাড়া বিরোধী দল বিএনপি অংশ নেওয়ায় এই নির্বাচন শুধু স্থানীয়ভাবে নয়, জাতীয়ভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। এই ভোটের ফল কী হয়, তা জানতে সারা দেশের মানুষ আগ্রহী হয়ে উঠেছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি আবদুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশ ভালো। তা ছাড়া দীর্ঘদিন সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে না। এ কারণে সবার আগ্রহ তৈরি হয়েছে। আর নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে আলোচনার মধ্যে এই নির্বাচন হওয়ায় সবার দৃষ্টি নারায়ণগঞ্জের দিকে পড়েছে।

নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, গতকাল সব প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণা বন্ধ ছিল। প্রার্থীরা শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিয়েছেন কাল।

ভোটারদের অভয় দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও। পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান, জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, রিটার্নিং কর্মকর্তা, র‌্যাব-১১-এর অধিনায়ক গতকাল নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ভোটারদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করেছেন। তাঁরা বলেছেন, নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে আসুন। সব ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নুরুজ্জামান বলেন, প্রশ্নবিদ্ধ নয়, নারায়ণগঞ্জে মডেল নির্বাচন হবে।

নির্বাচন কমিশন সচিব আবদুল্লাহ বলেছেন, শঙ্কা দূর করে সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠানে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভোট সুষ্ঠু হবে।

দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচনে মোট ২০১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মেয়র পদে লড়ছেন সাতজন। যদিও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রার্থী কামাল প্রধান ও কল্যাণ পার্টির রাশেদ ফেরদৌস বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে গেছেন। অন্য তিন প্রার্থী হলেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মাহবুবুর রহমান ইসমাইল (কোদাল), ইসলামী আন্দোলনের মাসুম বিল্লাহ (হাতপাখা) ও ইসলামী ঐক্যজোটের এজহারুল হক (মিনার)। ২৭ ওয়ার্ডে ২৭টি কাউন্সিলর পদে প্রার্থী ১৫৬ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের ৯টি পদে ৩৮ জন প্রার্থী রয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে প্রথম ভোট হয় ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর। নির্দলীয় ওই নির্বাচনে সেলিনা হায়াৎ আইভী ১ লাখ ৮০ হাজার ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ-সমর্থিত ও বর্তমান সাংসদ শামীম ওসমান পেয়েছিলেন ৭৮ হাজার ভোট। বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী ভোটের সাত ঘণ্টা আগে সরে দাঁড়ান। অবশ্য এবার বিএনপির প্রার্থী শেষ পর্যন্ত আছেন। গতকাল দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, এবার বর্জন নয়, শেষ পর্যন্ত ভোটে থাকবে বিএনপি।

নির্বাচনের টুকিটাকি

মোট ভোটার ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৯৩১ জন। পুরুষ ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬৬২ জন এবং নারী ২ লাখ ৩৫ হাজার ২৬৯ জন। তিনটি থানা নিয়ে এই সিটির অবস্থান। এর মধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকার ১০টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৯৭। সদর থানার ৮ ওয়ার্ডে ভোটার ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬১২ এবং বন্দর থানার ৯ ওয়ার্ডে ভোটার ১ লাখ ১৩ হাজার ৩২২ জন।

নির্বাচনে মোট ভোটকেন্দ্র ১৭৪টি, ভোটকক্ষ ১ হাজার ৩০৪। সবগুলো ভোটকেন্দ্রকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মোট পর্যবেক্ষকের সংখ্যা ৩২২। এর মধ্যে দুজন বিদেশি পর্যবেক্ষক রয়েছেন বলে কমিশন থেকে জানা গেছে। দেশি ১৬টি সংস্থা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে।

এবারের নির্বাচনে নতুন ৭১ হাজার ভোটার ভোট দেবেন। নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারণে এই নতুন ভোটারদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে বলে মনে করছেন প্রার্থীরা।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সাড়ে নয় হাজার সদস্য

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আনসার ও ভিডিপি, কোস্টগার্ড, নৌপুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর সাড়ে নয় হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে বিজিবির ২২ প্লাটুন সদস্য স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। সদস্যদের মধ্যে সাড়ে পাঁচ হাজার স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে এবং চার হাজার ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করবেন। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে প্রথম স্তরে আনসার, দ্বিতীয় স্তরে পুলিশ ও তৃতীয় স্তরে স্ট্রাইকিং ফোর্স দায়িত্ব পালন করবে।

কাল দুপুর ১২টায় নগরীর চাষাঢ়ায় র‌্যাবের ডগ স্কোয়াড ও বোম ডিসপোজাল ইউনিটি বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি চালিয়েছে। এ সময় র‌্যাব-১১-এর উপ-অধিনায়ক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নরেশ চাকমা বলেন, নির্বাচনে বিজিবি, পুলিশ ও আনসারের সঙ্গে ৬০০ র‌্যাব সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। র‌্যাব সদস্যরা মূলত স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ভোটকেন্দ্রের বাইরে দায়িত্ব পালন করবেন। ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে ভোটের দিনও তল্লাশি চলবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *