রোহিঙ্গা সংকট আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি

Slider সারাবিশ্ব

45410_f3

 

ঢাকা;  রোহিঙ্গা মুসলিম সংখ্যালঘুদের সঙ্গে মিয়ানমার যে আচরণ করছে তা আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি। মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনিফাহ আমান এই  মন্তব্য করেছেন। সোমবার রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে বৈঠকে বসেন আসিয়ান জোটভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আসিয়ান নেতৃবৃন্দের এটাই ছিল প্রথম বৈঠক। সেখানে মালয়েশিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ২০১৫ সালের মতো মানবিক বিপর্যয় এড়াতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। ওই বছর হাজারো রোহিঙ্গা মুসলিম রাখাইন রাজ্য থেকে নৌকায় করে পালায়। পরে তারা আন্দামান সাগরে আটকে পড়ে। মি. আমান বলেন, ‘আমার বিশ্বাস আমাদের কেউই ওই সংকটের পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না যা এ অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। আর এ কারণেই আমরা বিশ্বাস করি যে, বিদ্যমান পরিস্থিতি এখন একটি আঞ্চলিক উদ্বেগ এবং এর সমাধা করা উচিত একত্রে।’ এ খবর দিয়েছে সিএনএন। খবরে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের আচরণ নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই কঠোর সমালোচনা করে আসছে মালয়েশিয়া। চরম নিপীড়নের শিকার জাতিগত মুসলিম এই সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর প্রায় ১০ লাখ রাখাইনে বাস করে। মিয়ানমারের পশ্চিমে অশান্ত এক রাজ্য এই রাখাইন। গতকাল মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক রিপোর্টে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ অভিযোগ তোলে। এর পরপরই মালয়েশিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর তরফে এমন মন্তব্য এলো। অ্যামনেস্টির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত অঞ্চলের পরিচালক রাফেন্দি দিজামিন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘নির্মম আর সিস্টেমেটিক এক সহিংস অভিযানে বেসামরিক রোহিঙ্গাদের টার্গেট করেছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। সমষ্টিগত শাস্তি হিসেবে পুরুষ, নারী, শিশু, পরিবার আর এক একটা গ্রামজুড়ে হামলা, নির্যাতন চালানো হয়েছে।’
সিএনএন-এর খবরে আরো বলা হয়, মিয়ানমার সরকার ১৯৮২ সালে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার পর জোরপূর্বক তাদেরকে রাখাইনের বাকি বাসিন্দাদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। তারা বস্তির মতো আবাসনে বাস করে। সেখান থেকে তাদের বের হওয়ার অনুমতি নেই। তাদের নাগরিকত্ব প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। বৈধ এক জাতিগত গোষ্ঠী হিসেবেও তাদের স্বীকৃতি দেয়া হয় না।
রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় মিয়ানমার সরকারের ব্যর্থতার নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ।
এদিকে, সিএনএনকে পাঠানো এক লিখিত বিবৃতিতে মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র আয় আয় সো উল্টো অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে দুষেছেন। তার দাবি সংস্থাটি মিয়ানমারকে ভুয়া সংবাদের ভিকটিম বানিয়েছে। তিনি লিখেছেন, ‘এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ও দুর্ভাগ্যজনক যে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো একটি সংস্থা ভিত্তিহীন অভিযোগ, বানোয়াট ছবি আর ক্যাপশনের ভিত্তিতে তাদের রিপোর্ট তৈরি করেছে যেগুলো গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে আর নিজেরাই নিজেদের উপসংহার টেনেছে।’  আয় আয় সো আরো লিখেছেন, ‘এটা নিশ্চিত যে, আন্তর্জাতিক মহলে হৈ চৈ ছড়িয়ে, জঙ্গিবাদ, ঘৃণা আর সশস্ত্র হামলা উস্কে দিয়ে রাখাইনের সমস্যা সমাধান হবে না।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, মিয়ানমারের ৮ মাস বয়সী নতুন সরকার রাখাইন ইস্যু মোকাবিলায় উদ্যোগ নিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে রোহিঙ্গাদের জন্য নাগরিকত্ব যাচাইকরণ প্রক্রিয়া। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এসব অগ্রগতি এড়িয়ে গেছে বলে অভিযোগ তোলেন মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *