নারায়ণগঞ্জে একদিন পর ভোট, মাঠে বিজিবি

Slider ফুলজান বিবির বাংলা সারাদেশ

file

 

ঢাকা; আর একদিন পর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। তফসিল ঘোষণার পর এক মাস ৬ দিনেও শঙ্কা কাটেনি অধিকাংশ প্রার্থীর। নানা শঙ্কায় ভোটাররাও। নগরীর ১৭৪ কেন্দ্রের মধ্যে ১৩৭টিই ঝুঁকিপূর্ণ। সংশ্লিষ্টরা প্রায় ৮০ ভাগ কেন্দ্রকে বলছেন অতিগুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে গতকাল সোমবার ২২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
বিজিবি এবং পুুলিশ ও র‌্যাবসহ স্ট্রাইকিং ফোর্স ও মোবাইল টিম হিসেবে ৭ বাহিনীর ৫ হাজার ৩৪০ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তাছাড়া, ভোট কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করবেন আরো ৪ সহস্রাধিক পুলিশ ও আনসার সদস্য। ওদিকে শেষ মুহূর্তের নির্বাচন জমে উঠেছে। গতকাল আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেলিনা হায়াত আইভীকে সমর্থন দিয়েছে জাতীয় পার্টি। অপরদিকে কল্যাণ পার্টির প্রার্থী বিএনপি প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। অপরদিকে বিএনপি প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন ২৫ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র প্রসঙ্গে রিটার্র্র্নিং অফিসার মো. নুরুজ্জামান তালুকদার মানবজমিনকে বলেন, আমি কেন্দ্রগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ বলবো না। ঝুঁকিপূর্ণ বলে শঙ্কা ছড়াতে চাই না। বলবো অতিগুরুত্বপূর্ণ। প্রায় কেন্দ্রকেই অতিগুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছি। এসব কেন্দ্রে ১০ পুলিশ ও ১৪ আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২৪ সদস্য সকাল-সন্ধ্যা দায়িত্ব পালন করবে। কেন্দ্রে যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। কেন্দ্রগুলোতে প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ রাখা হচ্ছে একটি করে।
তিনি আরো বলেন, অনেক প্রার্থী সেনা মোতায়েনের দাবি জানালেও তার প্রয়োজন নেই। তেমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডে একাধিক ভোটারের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের মধ্যে কোনো শঙ্কা নেই। তারা নিরাপদ বোধ করছেন। সোমবার থেকে ২২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবি সহ র‌্যাব, পুলিশ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ড ও শটগানধারী আনসার ব্যাটালিয়নের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার সদস্য স্ট্রাইকিং ও মোবাইল ফোর্স হিসেবে কাজ করবে। পুরো নগরীতে ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। প্রতি ভোটারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
নাসিকের এই দ্বিতীয় নির্বাচনটি হচ্ছে দলীয়ভাবে। মেয়র পদে লড়ছেন ৭ প্রার্থী। সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদের ৯ ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছেন ৩৮ জন। ২৭টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন ১৫৬ জন। ওই ২০১ প্রার্থীর ভোটগ্রহণ হবে পৃথক তিনটি ব্যালটে। ১৭৪ ভোট কেন্দ্রের ১ হাজার ৩০৪টি ভোটকক্ষে তা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া অস্থায়ী ৪ কেন্দ্রে রয়েছে ১২৬ ভোট কক্ষ। সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া নারায়ণগঞ্জে এই নির্বাচনী যজ্ঞে নির্বাচনী আইনশৃঙ্খলাই সবচেয়ে বেশি শঙ্কিত করে ভোটার ও প্রার্থীদের। বার বার নির্বাচন কমিশনের কাছে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন প্রার্থীরা। অবশেষে নির্বাচনের তিন দিন আগে গতকাল সোমবার বিজিবি মোতায়েন করা হলো। এবার নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে নির্বাচন ও ভোটগ্রহণ উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত ৭ বাহিনীর প্রায় ১০ হাজার সদস্য নিয়োগ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ৫ হাজারের বেশি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। যারা গতকাল থেকে স্ট্রাইকিং ও মোবাইল ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। মাঠে থাকবেন ভোটগ্রহণের পরদিন পর্যন্ত। গতকাল নগরীতে তাদের টহল দিতে দেখা গেছে। এরই মধ্যে ৪৫০ জন বিজিবি গতকাল মাঠে নেমেছে। ওই ২২ প্লাটুন বিজিবির নেতৃত্বে রয়েছেন মেজর মোস্তাফা কামাল পাশা। প্রতি প্লাটুনে থাকছে ২০ সদস্য। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ সদরে ৭, বন্দর থানা এলাকায় ৫ এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকায় ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। তারা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবেই কাজ করবেন। একইভাবে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবেন সশস্ত্র ব্যাটালিয়ন আনসারের ৩০ সদস্যও।  আর মোবাইল টিম বা ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে র‌্যাবসহ আরো ৫ বাহিনীর সদস্য। এর মধ্যে থাকছে ৪৮০ র‌্যাব সদস্য, ৪ হাজার পুলিশ, ২০০ জন শিল্প পুলিশ, ৯০ জন করে নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ড সদস্য। প্রতিটি ওয়ার্ডে ৬টি স্ট্রাইকিং ফোর্স দায়িত্ব পালন করবে। কোনো কেন্দ্র বা স্থান থেকে সহিংসতার খবর পাওয়ার ৬ মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।  সেভাবে সাজানো হয়েছে দায়িত্ব। এরই মধ্যে একে একে মাঠে নামতে শুরু করেছে ওই ৭ বাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যরা।
এছাড়া আরো ৪ হাজারের বেশি পুলিশ ও আনসার সদস্য ভোট কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করবেন। প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে থাকবে ২২ পুলিশ ও আনসার সদস্য। এরমধ্যে ১০ জন পুলিশ ও বাকি ১২ জন করে আনসার সদস্য। আর সাধারণ ভোট কেন্দ্র রয়েছে ৩৭টি। এর চারগুণ ভোট কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। ২৭ ওয়ার্ডে মোট ১৭৪ ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ১৩৭টি ঝুঁকিপূর্ণ। এই ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে নিয়োগ করা হচ্ছে ২৪ জন করে পুলিশ ও আনসার সদস্য। তার মধ্যে ১০ পুলিশ ও ১৪ আনসার সদস্য। এর মধ্যে নারী ও পুরুষও রয়েছে। এছাড়া, সাধারণ ৩৭টি ভোট কেন্দ্রের প্রতিটিতে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের হাতে ১০টি করে আগ্নেয়াস্ত্র থাকলেও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে থাকছে ১২টি করে আগ্নেয়াস্ত্র। ভোট গ্রহণের আগে ২১ তারিখ রাত থেকে তাদের দায়িত্ব বণ্টন করা হবে। প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের সঙ্গে ভোটের ব্যালট, বাক্সসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদিসহ কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেয়া হবে। আগামী বৃহস্পতিবার ভোট গ্রহণ, গণনা ও কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত তাদের সেখানে অবস্থান করতে হবে। কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণার পর সরঞ্জাম চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার নির্ধারিত স্থান নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে পৌঁছে দিতে হবে।
সাধারণত নির্বাচন উপলক্ষে এলাকায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের কথা থাকলেও নারায়ণগঞ্জে এবার তা হয়নি। ফলে অধরা রয়ে গেছে সন্ত্রাসীরা। এছাড়া, নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘনের দায়ে করা শতাধিক লিখিত অভিযোগেরও সুরাহা হয়নি। জমা নেয়া হয়নি লাইসেন্সকৃত ৯৭১টি বৈধ অস্ত্রও। তবে ১৯ থেকে ২৫শে ডিসেম্বর পর্যন্ত বৈধ অস্ত্র বহন ও পরিদর্শনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছাড়াও নির্বাচনী কর্মযজ্ঞে প্রতিদিন অংশ নিচ্ছেন এক রিটার্নিং অফিসার ও ৯ সহকারী রিটার্নিং অফিসারসহ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। প্রতিটি ওয়ার্ডে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছেন ২৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এরই মধ্যে তাদের হাতে ১৬ প্রার্থী বা তাদের স্বজনদের গুনতে হয়েছে জরিমানার অর্থদণ্ড। ভোটের দিন মোবাইল কোর্টের সংখ্যা বাড়তে পারে। মাঠে নামতে পারেন জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটও। এছাড়া ভোটের দিন প্রতিকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকবেন ১৭৪ প্রিজাইডিং অফিসার, ১ হাজার ৩০৪ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও ২ হাজার ৬০৮ জন পোলিং অফিসার।
এর আগে ২০শে ডিসেম্বর মধ্য রাত পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে স্থানীয় ও বাইরের নেতাকর্মীদের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ গ্রহণের সুযোগ থাকলেও তা একদিন কমিয়ে দেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক পরিপত্রে গতকাল মধ্যরাতের পর বাইরের রাজনীতিবিদদের নারায়ণগঞ্জে অবস্থান নেয়া যাবে না বলে জানানো হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দলীয় প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. সাখাওয়াত হোসেন খানের পক্ষে নারায়ণগঞ্জে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জনসংযোগের কথা ছিল। এ অবস্থায় গত রোববার রাতে ওই পরিপত্রের কথা জানাজানি হওয়ার পর তা বিএনপি নেত্রীকে জনসংযোগ থেকে বিরত রাখার জন্য প্রতারণা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি সভাপতি তৈমূর আলম খন্দকার। তিনি বলেন, ‘এটি বিএনপি চেয়ারপারসনকে নির্বাচনী জনসংযোগে অংশ নিতে না দেয়ার চক্রান্ত ছাড়া আর কিছুই নয়।’
আইভীকে জাপার সমর্থন
নাসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে সমর্থন দিয়েছে জাতীয় পার্টি (এ)। গতকাল দুপুরে নগরীর দুই নম্বর রেলগেটস্থ জেলা আওয়ামী লীগ অফিসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে দলের সমর্থনের কথা জানান দলটির উচ্চ পর্যায়ের একটি টিম। সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ফয়সাল চিশতি বলেন, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের উপ-নির্বাচনে (২০১৪ সালের ২৬শে জুন অনুষ্ঠিত) আওয়ামী লীগ আমাদের সম্মান দেখিয়ে কোন প্রার্থী দেয়নি। সে হিসেবে আমরাও এ নির্বাচনে কোন প্রার্থী দেইনি। জাতীয় পার্টি এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আইভীকে সমর্থন দিয়েছে। জাতীয় পার্টি ইতিমধ্যে এ নিয়ে কাজ করেছে। নেতাকর্মীদের স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে আইভীর পক্ষে কাজ করতে। আইনের বাধ্যবাধকতার কারণে এখানকার এমপি সেলিম ওসমান প্রকাশ্যে কিছু করতে পারছেন না।
তিনি বলেন, আমরা সবাইকে অনুরোধ করবো আইভীকে জয়ী করতে। আইভীকে কর্মঠ ও দক্ষ নেত্রী উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইভী এ এলাকায় অনেক কাজ করেছেন। এ আসনের সাবেক প্রয়াত সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানও অনেক কাজ করেছেন। আইভী এবং প্রয়াত নাসিম ওসমানের অসাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার জন্য এবং নারায়ণগঞ্জবাসীর স্বার্থে আইভীকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। নারায়ণগঞ্জের শান্তি বজায় রাখতে এবং সুন্দর নগরী গড়ে তুলতে আইভীর বিকল্প নেই। নারায়ণগঞ্জকে মাদক এবং সন্ত্রাসমুক্ত করতেও আইভীর প্রয়োজন।
এ নির্বাচনে সরকারের কোনো পরিবর্তন ঘটবে না। তবে এলাকাতে শান্তি ও অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিতে আইভীকে জয়ী করাতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আবদুর সবুর আসুদ, হাজী সাইফউদ্দিন আহমেদ মিলন, ভাইস চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম নুরু, আলমগীর শিকদার লোটন, যুগ্ম মহাসচিব সফিকুল ইসলাম সফিক, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম জসিমউদ্দিন প্রমুখ।
সেলিম ওসমানকে ফোন করে দোয়া চেয়েছেন আইভী
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমানকে মুঠোফোনে কথা বলে ‘দোয়া’ চেয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী।
সোমবার দুপুর ১টায় শহরের দুই নম্বর রেলগেটস্থ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান জাতীয় পার্টির (এরশাদ) প্রেসিডিয়াম মেম্বার এসএম ফয়সাল চিশতি। তিনি জানান, আইনের বাধ্যবাধকতার কারণে এখানকার এমপি সেলিম ওসমান প্রকাশ্যে কিছু করতে পারছেন না। এ নির্বাচনে সরকারের কোন পরিবর্তন ঘটবে না। তবে এলাকাতে শান্তি ও অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিতে আইভীকে জয়ী করাতে হবে। তাছাড়া আমার সঙ্গে আইভীর কথা হয়েছে। তিনি আমাকে জানিয়েছেন ৪দিন আগে সেলিম ওসমানের মোবাইলে কথা বলে দোয়া চেয়েছেন।
সাখাওয়াতের ২৫ দফার ইশতেহার
নাসিক নির্বাচন সামনে রেখে ২৫ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী  সাখাওয়াত হোসেন খান। গতকাল বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে শহরের শায়েস্তা খান রোডে নিজের নির্বাচনী ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ ইশতেহার ঘোষণা করেন।
ইশতেহারের মধ্যে রয়েছে, সিটি করপোরেশন পরিচালনার জন্য দলমত-নির্বিশেষে সব ধর্ম, বর্ণ ও পেশার লোকদের সমন্বয়ে উপদেষ্টা কাউন্সিল গঠন। শীতলক্ষ্যা সেতুর বাস্তবায়ন। দুই নং রেল গেট ও চাষাড়ায় দু’টি ফ্লাইওভার বা আন্ডারপাস নির্মাণ। আইনশৃঙ্খলার উন্নতি ও মাদক নিয়ন্ত্রণে পঞ্চায়েত ও বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে প্রতিটি মহল্লায় কমিটি। জলাবদ্ধতা নিরসনে বোট খাল, বোয়ালিয়া খাল, হিরালাল খাল ও বন্দরের ৩৫টি খাল পুনরুদ্ধার ও খনন করা এবং মাস্টার প্ল্যানের মাধ্যমে ড্রেনেজ ব্যবস্থা আধুনিকায়ন।  শীতলক্ষ্যা নদী দূষণমুক্ত করে ভ্রমণপিপাসু ও চিত্ত-বিনোদনকারীদের জন্য নদীর দুই পাড়ে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা এবং পরিবেশ দূষণ রোধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ। গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা বৃত্তি, বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ প্রদান এবং শিক্ষার্থীদের জন্য বাস, ট্রেন ও লঞ্চে হাফ ভাড়া চালু করা। নারায়ণগঞ্জ ও বন্দরে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ। মহিলাদের জন্য নদীর দু’পাড়ে দু’টি আধুনিক মাতৃসদন হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা ও বিনামূল্যে সেবা প্রদানের প্রদক্ষেপ গ্রহণ। সিটি করপোরেশন এলাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ এবং বিদ্যুতের হয়রানিমূলক ভূতুড়ে বিল বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ। সিটি করপোরেশন আওতাধীন প্রতিটি ঘরে ঘরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা এবং টিউবওয়েল ও ডিপ টিউবওয়েলের উপর সকল প্রকার কর রহিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ। যাত্রীসেবার  মান বৃদ্ধির জন্য সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে কম ভাড়ায় আধুনিক বাস সার্ভিস চালু করা। প্রতিটি ওয়ার্ডে কম্পিউটার প্রযুক্তিসহ আধুনিক পাঠাগার ও শিক্ষার্থীদের জন্য আইটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন। আধুনিক ও পরিবশে বান্ধব শিল্প কারখানা স্থাপনের জন্য বিনিয়োগ বান্ধাব পরিবেশ সৃষ্টি। খেলাধূলা বিকাশের জন্য নদীর দু’পাড়ে দু’টি আধুনিক স্টেডিয়াম স্থাপন। অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে খাস জমি উদ্ধার করে ভূমিহীন ও অল্প আয়ের মানুষের জন্য অত্যাধুনিক আবাসিক কলোনি নির্মাণ ও স্থায়ীভাবে হকারদের পুনবার্সন করে ফুটপাত দখলমুক্ত রাখা। বেকার সমস্যা নিরসনে সিটির করপোরেশনের অর্থায়নে বেকার যুবক ও যুবতীদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। শ্রমিক ভাইবোনদের জন্য একটি আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণ ও বিনামূল্যে ওষুধসহ সকল প্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার ব্যবস্থা করা। মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারকে সকল প্রকার কর থেকে মুক্ত রাখা এবং সিটি করপোরেশনের অর্থে তাদের জন্য উন্নতমানের চিকিৎসা ব্যবস্থা করা। হাজীগঞ্জ ও সোনাকান্দা  কেল্লাকে নগরবাসীর জন্য আধুনিক বিনোদন কেন্দ্রে রূপান্তর করা। প্রতিটি বাজারকে আবর্জনা ও কাদামুক্ত রাখার জন্য আধুনিকীকরণ করা। হোল্ডিং ট্যাক্স সহনীয় মাত্রায় রাখার জন্যে উদ্যোগ গ্রহণ। সকল বয়সের মানুষের চিত্ত-বিনোদনের জন্য নদীর দু’পাড়ে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সংবলিত দু’টি পার্ক নির্মাণ। বন্দরের সোনাকান্দায় অবস্থিত মেরিন টেকনোলজি ইনস্টিটিউটকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের পদক্ষেপ গ্রহণ করা। শহরকে ধুলাবালুসহ ময়লা আবর্জনামুক্ত রাখার জন্য পরিবেশ বান্ধব ডাম্পিং ইয়ার্ড নির্মাণ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, সাংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন বীরবিক্রম, আমান উল্লাহ্‌ আমান, আবদুস সালাম, তৈমূর আলম খন্দকার, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, শ্যামা ওবায়েদ, এবিএম মোশাররফ হোসেন, সাবেক এমপি আবুল কালাম, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক কাজী মনিরুজ্জামান, শহিদুল ইসলাম বাবুল, সেলিমুজ্জামান সেলিম, হারুন অর রশিদ, আবু আল ইউসুফ খান টিপু, আমিরুল ইসলাম শিমুল, হাসান মামুন, হায়দার আলী লেলিন, ওমর ফারুক সাফিন, শেখ মো. শামীম, মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভূঁইয়া, ওবায়দুল হক নাসির প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *