দিনাজপুরে এক মাস ধরে অনুপস্থিত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান

Slider রংপুর

dinajpur-bochaganj-upazila-chairman-pic

রংপুর ডেস্কঃ একমাসেরও বেশী সময় ধরে উপজেলা চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকায় দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সার্বিক কর্মকান্ডে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কাউকে দায়িত্ব না দিয়ে সরকারী নিয়মনীতি উপেক্ষা করে উপজেলা চেয়ারম্যান ফরহাদ হাসান চৌধুরী ইগলু অনুপস্থিত থাকায় পরিষদের সমন্বয় সভাসহ অন্যান্য জরুরী জনগুরত্বপুর্ণ কাজও করতে পারছেন না উপজেলা প্রশাসন। এই পরিস্থিতিতে উপজেলাবাসী বঞ্চিত হচ্ছে সরকারী বিভিন্ন সেবা থেকে।

এ ব্যাপারে গত ৫ ডিসেম্বর দিনাজপুর জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন বোচাগঞ্জ উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাজমুন নাহার মুক্তি।

লিখিত অভিযোগে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাজমুন নাহার মুক্তি উল্লেখ করেন, বোচাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফরহাদ হাসান চৌধুরী ইগলু সরকারী অনুমতি না নিয়েই গত ৯ নভেম্বর থেকে উপজেলা পরিষদে অনুপস্থিত রয়েছেন। তার অনুপস্থিতিতে পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি কাউকে দায়িত্বভার দেননি। ফলে উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই উপজেলা পরিষদের সরকারী পাজেরো গাড়িটি চেয়ারম্যান ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারে ব্যাক্তিগত কাজে ভ্রমণে গেছেন।

এছাড়াও উপজেলা চেয়ারম্যান ফরহাদ হাসান ইগলুর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। গত ২০১৫ সালের ৩০ জুন উপজেলা চেয়ারম্যান উপজেলা প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেনকে হত্যার হুমকী ও অন্যান্য অফিসারদের সাথে অশালীন আচরন করার বিষয়ে একই বছরের ৫ জুলাই উপজেলা পরিষদের সব দপ্তরের অফিসাররা এর প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসককে আবেদন করেন।

এছাড়াও ২০১০ সালে বোচাগঞ্জ উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানরা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিতভাবে উপজেলা চেয়ারম্যান ফরহাদ হাসান চৌধুরীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব দেন। এর প্রেক্ষিতে স্থনীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রনালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান রংপুর বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) ও যুগ্মসচিব নারায়ন চন্দ্র বর্মা গত ২৮ মার্চ ২০১৩ সালে বোচাগঞ্জে সরেজমিনে তদন্ত করেন।

তদন্তে উক্ত চেয়ারম্যনের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলেও রহস্যজনক কারণে তার বিরুদ্ধে অদ্যাবধি কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

একটি বিস্বস্ত সুত্র জানায়, উক্ত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট স্থনীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রনালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায় রহস্যজনক ভাবে ফাইলবন্দি অবস্থায় পড়ে রয়েছে ।

উপজেলা চেয়ারম্যান ফরহাদ হাসান চৌধুরী ইগলুর অনুপস্থিতিতে উপজেলা পরিষদের সার্বিক কার্যক্রমে অচলাবস্থার বিষয়টি স্বীকার করে বোচাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শীলাব্রত কর্মকার জানান, তিনি ওই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে গত ৮ নভেম্বর যোগদান করেছেন।

যোগদানের দিন উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথে তার দেখা হয়েছে। এরপর একমাস পেরিয়ে গেলেও আর চেয়ারম্যানের সাথে দেখা হয়নি। তিনি জানান, উপজেলা পরিষদের ১৭টি বিভাগ আছে। সব বিভাগের আর্থিক ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করেন উপজেলা চেয়ারম্যান। কিন্তু উপজেলা চেয়ারম্যান একমাসের বেশী সময় ধরে না থাকায় এসব কর্মকান্ড পরিচালনায় বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। চেয়ারম্যান কোন প্যানেল চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব না দিয়ে যাওয়ায় একমাস ধরে উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়নি বলে জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার।

দিনাজপুর জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ ইমতিয়াজ হোসেন জানান, বোচাগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ফরহাদ হাসান চৌধুরীর অননুমোদিত অনুপস্থিতি ও সরকারী গাড়ী জেলার বাইরে ব্যবহারের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর তিনি গত ৮ ডিসেম্বর বোচাগঞ্জে গিয়েছিলেন। কিন্তু উপজেলা চেয়ারম্যানকে পাওয়া যায়নি। তবে ১২ ডিসেম্বর উপজেলা চেয়ারম্যান তার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করেছেন বলে জানান তিনি। অননুমোদিত উপস্থিতিসহ সরকারী গাড়ী ব্যক্তিগত কাজে জেলার বাইরে ব্যবহারের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে বিষয়গুলো জানানো হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে উপজেলা পরিষদ আইন, ১৯৯৮ (১৯৯৮ সনের ২৪ নং আইন) এর ধারা ৬৩ এ উল্লেখ রয়েছে সরকারের পুর্বানুমতি সাপেক্ষে পরিষদের চেয়ারম্যানগন দাপ্তরিক বা ব্যক্তিগত প্রয়াজনে নিজ জেলার বাইরে যেতে পারবেন এবং ছুটি ভোগ করতে পারবেন। কিন্তু বোচাগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ফরহাদ হাসান চৌধুরী ইগলু তা করেননি এমনকি কোন প্যানেল চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেননি।

এছাড়াও উপজেলা পরিষদের বরাদ্দকৃত সরকারী গাড়ী নিজ জেলার বাইরে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের বিধি নিষেধ থাকলেও বোচাগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান একমাস ধরে সরকারী বরাদ্দকৃত গাড়ী নিয়ে দিনাজপুরের বাইরে অবস্থান করছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ফরহাদ হাসান চৌধুরী ইগলুর সাথে মোবাইলে (০১৭১১৩৮৪১৫১) বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *