ঠাকুরগাঁওয়ের একটি শীতের সকাল

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি

39

এস. এম. মনিরুজ্জামান মিলন, রংপুর বিভাগীয় প্রতিনিধিঃ ঘড়ির কাঁটায় বেলা ১০ টা, পুব আকাশে সূর্য্যিমামার আগমন তখনও ঘটেনি। চারদিক হালকা কুয়াশার চাদরে আচ্ছন্ন, চলছে মৃদু শৈতপ্রবাহ।

ইংরেজি ক্যালেন্ডারের পাতায় দিনটা ১২ ডিসেম্বর। বার্ষিক পরীক্ষা শেষে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের মাঝে চলছে ছুটির আমেজ। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও চলছে শীতকালীন অবকাশ। তাই বেলা দূপুরেও মাঠের তুলনায় বিছানাতেই বেশি দেখা মিলছে শিক্ষার্থীদের।

বাংলা দিনপঞ্জির পাতায় তারিখটা ২৮ অগ্রহায়ণ। মোটামুটি ১৫ অগ্রহায়ণের পর থেকেই ঠাণ্ডা নামতে শুরু করেছে ঠাকুরগাঁওয়ে। তাপমাত্রাও ২০-২৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ড পূর্ব গোয়ালপাড়ার বাচ্চু গ্যারেজ মোড়, একদল মানুষ ভাপা পিঠার চুলোর পাশে বসে চুলোর আগুনে হাত-পা ছুড়ে শরীর গরম করার চেষ্টা করছে।

হাটতে হাটতে প্রায় একই এলাকার অংশ তবে পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ড সরকারপাড়াও ঘুরে এলাম। পুব আকাশে তখন সূর্য্যিমামা উকিঁ দিচ্ছেন। টিএন্ডটি মাঠে ৬-৭ জন ৫-৬ বছর বয়সী শিশু ছোটাছুটি করছে ফুটবল নিয়ে। পড়নে মোটামোটা সোয়েটার, জ্যাকেট, ট্রাউজার আর পায়ে ক্যাডস। শিশিরভেজা ঘাসে গড়াগড়ি খেয়ে প্রায় সবারই গোসল হয়ে গেছে। মনে পড়ে গেলো ছোটবেলার সেই মিষ্টি স্মৃতিগুলো। লোভ সামলাতে না পেরে ক্যামেরা, প্যাড রেখে নিজেও যোগ দিলাম হবু মেসি-রোনালদোদের সাথে।

পিচ্চিদের দলে যোগ দেওয়ার সময় কিছুটা দূরে ক’জন মহিলাকে দেখছিলাম মিষ্টি রোদে বসে থাকতে। খেলা শেষে তাদের অনুভূতিগুলো ক্যামেরাবন্দী করার উদ্দেশ্যে তাদের নিকটে গেলাম। আমার আসা দেখে একজন বাসার দিকে ছুট দিলেন। চেয়ার নিয়ে এলেন বসার জন্য। এসব ফর্মালিটির মাঝেই এক কাপ চা এগিয়ে দিলেন একজন।

চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতেই অনুভূতি শুনলাম তাদের। অনুভূতিগুলোও প্রায় একই। এজন্যই হয়তো গ্রামের মানুষেরা এতো সাদাসিধে।

শীতকালীন অনুভূতির কথা আসতেই সকলেই গ্রামে কাটানো ছেলেবেলার স্মৃতিচারণ করলেন। দেরীতে ঘুম থেকে ওঠা, মায়ের হাতের গরম গরম পিঠা, সকলে একসাথে পাঠশালায় যাওয়া, বাড়ি ফিরেই নদীতে ডুব দেওয়া- কী দারুণ ছিল দিনগুলো!

বর্তমানের কথা তুলতেই অনেকের মুখ ভার হয়ে গেল। স্বামী-সন্তান নিয়ে কাটানো বর্তমানের শীতকালগুলোও নেহাত মন্দ নয়, বললেন একজন। সকালবেলা স্বামী আর সন্তানদের মুখে গরম গরম পিঠা তুলে দেওয়ার মাঝেই আনন্দ খুঁজে পান তিনি। মাঠে বসে সন্তানের হাস্যোজ্জ্বল ছেলেবেলা দেখার মাঝেই এখনকার আনন্দ খুঁজে পান বলে জানান তাদের একজন।

সবশেষে কিছু ফটোসেশন সেরে চলে এলাম বাসায়। লিখতে বসলাম ঠাকুরগাঁওয়ের একটি শীতের সকাল নিয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *