পাঁচবিবি সীমান্তে বিজিবি’র তান্ডব; সাংবাদিক, শিশুসহ আহত ২০

Slider বাংলার মুখোমুখি

15328309_1113966725339047_1710136986_n

বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার সীমান্তবর্তী চেঁচড়া গ্রামে শিশুসহ ২০ জন গ্রামবাসী ও এক সাংবাদিককে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে বিজিবি সদস্যদের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় বিজিবি’র অধিনায়কসহ উপজেলা প্রশাসন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। গত মঙ্গলবার ফেন্সিডিল আটক করা নিয়ে চোরাচালানীর হামলায় এক বিজিবি সদস্য হলে আটাপাড়া ক্যাম্পের হাবিলদার নোয়াব আলীর নেতৃত্বে বিজিবি সদস্যরা এই তান্ডব চালায়।

আহতরা হলেন- হানিফ (৪৫), লেবু (৪০), মিলু বেগম (২৯), ছকিনা বেগম (৪২), এমরান (২৩), রশিদ (২৭), বাবু (১৫), ছাব্বির (১৪), তামিম (৭), হাবিব (১৩), লেবু (৪০), রহিদ (২০), শরিফুল (৩৬), শেখ আবুল (৪৪), রায়হান (৩০), রবিউল (১২), মোতালেব (২০), সাজু (১৮), হাছিনা (৩৮) ও মানিক (৫০) ও সাংবাদিক মোসলেম উদ্দীন।

কয়েকজন গ্রামবাসী জানান, সকাল ৯টার দিকে চেঁচড়া সীমান্তে মাদকদ্রব্য আটক করা নিয়ে বিজিবি সদস্যদের সাথে কয়েকজন চোরাচালানীর মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়েছে। এসময় ইয়ার হোসেন নামে এক বিজিবি সদস্য আহত হয়। এঘটনাকে কেন্দ্র করে বেলা ৩টার দিকে আটাপাড়া ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যরা গ্রামের লোকজনকে পিটিয়ে আহত করে। তারা ১৮-২০ জন গ্রামবাসী, এক শিশু ও এক সাংবাদিককেও পিটিয়ে আহত করেছে।
সরেজমিনে ওইদিন সন্ধ্যায় চেঁচড়া গ্রামে গেলে গ্রামের বাসিন্দা হানিফ, লেবু, মিলু বেগম, ছকিনা বেগমসহ প্রায় ৩০ জন গ্রামবাসী জানান, আটাপাড়া ক্যাম্পের হাবিলদার নোয়াব আলীর নেতৃত্বে ১০-১২ জন বিজিবি সদস্য দুই অটোভ্যানে চড়ে চেঁচড়া গ্রামে আসে।

এসময় তারা গ্রামের শেখ আব্দুল্লাহ’র বাড়ী থেকে শুরু করে চেঁচড়া জামে মসজিদ পার হয়ে রাস্তার দুই পাশে থাকা বাড়ী-ঘর ও দোকানে লাথি মেরে ধাক্কাধাক্কি করে এবং অশ্লীলভাষায় গালাগাল করতে থাকে।

এক পর্যায়ে উত্তেজিত বিজিবি সদস্যদের হাতে থাকা লাঠি-সোটা দিয়ে নিরীহ গ্রামবাসীর উপর চড়াও হয়ে এলোপাথারীভাবে মারপিট করতে থাকে। অনেককে বাড়ী থেকে টেনে এনে পিটিয়ে আহত করে। এমনকি ৭ বছরের শিশু তামিমকেও পিটিয়ে আহত করে বিজিবি। বিজিবি সদস্যদের এই তান্ডব দেখে বাড়ীর মহিলা ও পুরুষেরা দিক-বেদিক পালিয়ে রক্ষা পায়।

গ্রামবাসী শরিফুল, বদিউজ্জামান ও আবুল জানান, বিজিবি সদস্যরা কিছু জিজ্ঞেস না করেই আমাদের উপর হয়ে চড়াও হয়ে এলাপাথারীভাবে লাঠি নিয়ে পিটাতে থাকে। তারা বলে, যে অপরাধ করেছে তাকে ধরবে, বিজিবি আমাদেরকে কেন লাঠিপেটা করলো, আমরা তো কোনো অপরাধ করিনি। বিজিবি মাদক মামলা সহ মিথ্যা মামলা দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। আমরা এর বিচার চাই। শিশু তামিমের বাবা বেলাল হোসেন বলেন, আমার ছেলে স্কুল থেকে বাড়ী আসছিলো। বিজিবি সেই ছেলের পেছনে লাঠি দিয়ে আঘাত করেছে। তার কি অপরাধ ছিল?

আহত সাংবাদিক দৈনিক খবরের হিলি স্থল বন্দর প্রতিনিধি মো: মোসলেম উদ্দীন জানান, পেশাগত দায়িত্ব পালনে চেঁচড়া গ্রামে যায়। গিয়ে দেখি গ্রামবাসীর উপর বিজিবি লাঠিসোটা নিয়ে অতর্কিতভাবে হামলা চালাচ্ছে। সেই সময় আমি বিজিবি’র সিও সাহেবের সাথে ফোনে কথা বলে সেই হামলার ভিডিও করলে বিজিবি সদস্যরা আমাকেও লাঠি দিয়ে এলোপাথারীভাবে মারতে থাকে। এসময় আমার পিঠে, হাতে ও পায়ে কালশিরা হয়ে গেছে। রাতে হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়েছি। এক্সরে রিপোর্টে আমার বাম হাতের আঙ্গুল ফেটে গেছে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে পাঁচবিবি উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর উদ্দীন আল ফারুক জানান, জয়পুরহাট- ২০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মো. মোস্তাফিজুর রহমান, থানার উপ-পরিদর্শক রেজাউল, বাগজানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল হক সহ অনেকে ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে গ্রামবাসী ও আহতরা বিজিবি সদস্যদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করেছেন। এক সাংবাদিক, এক শিশু সহ আহত ১০-১২ ব্যক্তি তারা সকলেই শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন দেখিয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

আটাপাড়া ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার হাশেম আলী জানান, চেঁচড়া সীমান্ত দিয়ে দেশে মাদকদ্রব্য পাঁচারে বাঁধা দেওয়ায় কর্তব্যরত বিজিবি সদস্য ইয়ার হোসেনের উপর চড়াও হয় স্থানিয় চোরাচালানীরা। এসময় চোরাচালানীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে বিজিবি’র ওই সদস্যের ডানহাতের একটি আঙ্গুল কেটে যায়। পরে ঘটনাস্থল থেকে ৫৩ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার করা হয়েছে। বিজিবি সদস্যরা অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে কেন গ্রামবাসীর উপর তান্ডব চালিয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

জানতে চাইলে জয়পুরহাট-২০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মো: মোস্তাফিজুর রহমান সংবাদদাতাকে জানান, বেসামরিক লোককে মারার হুকুম আমি দেইনি। যারা এঘটনায় জড়িত তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *