রিজার্ভ চুরির তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে না : অর্থমন্ত্রী

Slider অর্থ ও বাণিজ্য সারাদেশ
 file

ঢাকা; বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির তদন্ত প্রতিবেদন ফিলিপাইনকে দেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

তিনি বলেছেন, এটি আমাদের অভ্যন্তরীণ একটি বিষয়। তাই কোনোভাবে তা ফিলিপাইনকে দেয়া হবে না।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ রিজার্ভের চুরি অর্থ ফেরত পাবার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। রিজাল ব্যাংক এই অর্থ আটকিয়ে রাখতে পারে না। কারণ কোনো দেশের চুরি যাওয়া অর্থ কিভাবে একটি ব্যাংকের সম্পদ হতে পারে?

আজ রোববার দুপুরে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রীর নিজ দফতরে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সাথে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি।

এদিকে, আজ বার্ত সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিপাইন সরকার বাংলাদেশের কাছে এই তদন্ত প্রতিবেদন চেয়েছে। ফিলিপাইনের অর্থমন্ত্রী কার্লোস ডমিনগুইজ বলেছেন, বাংলাদেশের তদন্ত প্রতিবেদনকে তারা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, রিজার্ভ চুরির পর গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটা কাউকেই দেয়া হবে না।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া অর্থ ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকের মাধ্যমেই ক্যাসিনোতে গেছে। কাজেই এই টাকা রিজাল ব্যাংক কিভাবে দাবি করে সেটা আমার বোধগম্য নয়।

তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, রিজার্ভের চুরি যাওয়া টাকা আমাদের। আমরা অবশ্যই টাকা ফেরত পাবো।

অর্থমন্ত্রী বলেন, রিজার্ভের চুরি যাওয়া ২৯ মিলিয়ন ডলার ফিলিপাইনের সুপ্রীম কোর্ট জব্দ করে রেখেছেন। শিগগিরই এ অর্থ আমরা পাবো। তবে টাকা ফেরতের বিষয়ে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন (আরসিবিসি) যে বক্তব্য দিয়েছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। ফিলিপাইন সরকারও তা গ্রহণ করেনি। আমি বুঝতে পারি না, চুরি যাওয়া অর্থ কিভাবে একটি ব্যাংকের সম্পদ হয়।

মামলার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, যৌথভাবে বাংলাদেশের পক্ষে রিজার্ভ উদ্ধারে ফিলিপাইল সরকার দুটি মামলা করেছে। এ মামলাগুলোর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ সরকার। আপাতত বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মামলা করার প্রয়োজন নেই। যদি মামলা করতে হয় ফিলিপাইন সরকার করবে বলে তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ সময় ব্যাংকিং বিভাগের সচিব মো. ইনুসুর রহমান বলেন, মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিটেন্টস আওতায় ফিলিপাইন মামলা করবে।

উল্লেখ্য, চুরি হয়ে ফিলিপাইনে চলে যাওয়া আট কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারের মধ্যে প্রায় দেড় কোটি ডলার ইতোমধ্যে ফেরত পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে বাকি প্রায় সাড়ে ছয় কোটি ডলার ফেরতের বিষয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

গত ফেব্রুয়ারিতে সুইফট মেসেজিং সিস্টেমের মাধ্যমে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে রাখা বাংলাদেশের এক বিলিয়ন ডলার সরিয়ে ফেলার চেষ্টা হয়। এর মধ্যে পাঁচটি মেসেজে আট কোটি ১০ লাখ ডলার যায় ফিলিপিন্সের একটি ব্যাংকে। আর আরেক আদেশে শ্রীংলকায় পাঠানো হয় ২০ লাখ ডলার। শ্রীলঙ্কায় পাঠানো অর্থ আটকানো গেলেও ফিলিপিন্সের ব্যাংকে যাওয়া অর্থের বেশিরভাগটাই স্থানীয় মুদ্রায় বদলে জুয়ার টেবিলে চলে যায়। তার কিছু অংশ উদ্ধারের পর সম্প্রতি বাংলাদেশ ফেরত পেয়েছে।

বিশ্বজুড়ে আলোচিত এই ঘটনায় সমালোচনার মুখে গভর্নরের পদ ছাড়তে বাধ্য হন আতিউর রহমান। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে আনা হয় বড় ধরনের রদবদল। মার্চ মাসে সরকারের পক্ষ থেকে গঠন করা হয় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি, যার প্রধান করা হয় সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিনকে।

ফরাসউদ্দিন গত ৩০ মে প্রতিবেদন দেয়ার পর অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, রিপোর্টে যা আছে, তা অবশ্যই প্রকাশ করা হবে। এরপর কয়েক দফা সময় দিয়েও কথা রাখেননি মুহিত। সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরে প্রতিবেদন প্রকাশ করার দিনক্ষণ ঠিক করেও পরে নিজের অবস্থান থেকে সরে যান। আজ পর্যন্ত তা প্রকাশ করেননি তিনি। এ জন্য অর্থমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *