রোহিঙ্গা নির্যাতনের প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল রাজপথ

Slider জাতীয়

41981_f2

 

ঢাকা; মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মুসলিম রোহিঙ্গাদের নিপীড়নের প্রতিবাদে ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে বিভিন্ন সংগঠন। বিক্ষোভ  সমাবেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধে বিশ্ব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে নির্যাতিত মুসলিমদের আশ্রয় দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বক্তারা। শুক্রবার জুমার নামাজের পর দেশের বিভিন্ন মসজিদ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।
রাজধানীতে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর  গেইট থেকে দৈনিক বাংলা মোড় পর্যন্ত সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরীর নেতাকর্মীরা। তাদের বিক্ষোভ কর্মসূচির কারণে ওই এলাকার  বেশকিছু সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে  দেয়া হয়। মিছিলের আগে মুফতি ফয়জুল্লাহ, জাফর উল্লাহ খান, আবুল হাসনাত আমিনীসহ হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয়  নেতারা বক্তব্য রাখেন। সমাবেশে রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ সীমান্ত খুলে দেয়ার এবং আরাকানের মুসলমানদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়। এ বিষয়ে জাতিসংঘ ও ওআইসি’র ভূমিকারও সমালোচনা করেন  হেফাজত নেতারা। বিক্ষোভ শেষে হেফাজতকর্মীরা সরে  গেলে বেলা আড়াইটার দিকে ওই সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।  এদিকে চট্টগ্রাম নগরীর আন্দরকিল্লা জামে মসজিদ চত্বরে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের প্রতিবাদে আয়োজিত এক সমাবেশ থেকে সীমান্ত খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন হেফাজত নেতারা। মিয়ানমারের এই ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস’ বন্ধ না হলে প্রয়োজনে মিয়ানমারমুখী লংমার্চেরও ঘোষণা দেন তারা।
সমাবেশে জুনায়েদ বাবুনগরী প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, আপনার সরকার জনগণের সরকার। তাই আপনাকে জনগণের ভাষা বুঝতে হবে। সীমান্ত খুলে দিয়ে রোহিঙ্গা মুসলিমদের আশ্রয় দেয়ার ব্যবস্থা করুন। কূটনৈতিক উপায়ে জাতিসংঘের মাধ্যমে মিয়ানমারের উপর চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা ১লা ডিসেম্বর গণমিছিল করব, ২রা ডিসেম্বর মিয়ানমার দূতাবাসে স্মারকলিপি দেবো। এরপরও যদি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যা না থামে, তাহলে কোটি কোটি মুসলমানকে সাথে নিয়ে আমরা মিয়ানমারমুখী লংমার্চ করবো। সু চির তক্তপোষ কাঁপিয়ে দিবে তৌহিদি জনতা। হেফাজতের এই আন্দোলনকে সরকারবিরোধী আন্দোলন হিসেবে না দেখতে সরকারের প্রতি আহ্বানও জানান হেফাজত মহাসচিব। তিনি বলেন, সরকারকে বুঝতে হবে এটা সরকারবিরোধী আন্দোলন নয়। মুসলিম রোহিঙ্গার প্রাণ ও অধিকার রক্ষায় আমরা আন্দোলন করছি। এ গণহত্যা থামাতে সরকারেরও যা যা করা প্রয়োজন সব করতে হবে।
রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে কড়া নজরদারি রাখার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যকে ‘সংবিধানের লঙ্ঘন’ বলে আখ্যায়িত করেন হেফাজতে ইসলামী কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী। তিনি বলেন, আমাদের সংবিধানের ২৫ অনুচ্ছেদের (ক) ধারায় স্পষ্ট উল্লেখ আছে প্রতিবেশী কোনো জনগোষ্ঠী জাতিগত, বর্ণগত কোনো নিপীড়নের শিকার হলে তাদের বাংলাদেশ আশ্রয় দিবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য সংবিধানের স্পষ্ট লঙ্ঘন। সংবিধান মেনে রোহিঙ্গাদের এ দেশে প্রবেশের সুযোগ দিতে হবে। অনুপ্রবেশ করা ভারতীয় হাতির জন্য সরকার লাখ লাখ টাকা খরচ করে অথচ রোহিঙ্গাদের হাতির মর্যাদাও দেয়া হচ্ছে না। নাস্তিকদের প্ররোচনায় সরকার সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করেছে- এমন অভিযোগ করে হেফাজতের ?যুগ্ম মহাসচিব মঈনুদ্দিন রুহী বলেন, “ইয়াবার জন্য যদি সীমান্ত খোলা থাকে, তাহলে রোহিঙ্গাদের জন্য কেন সীমান্ত বন্ধ থাকবে? তাদের খাওয়া পরা নিয়ে সমস্যা হলে প্রয়োজনে হেফাজত ইসলাম তাদের দায়িত্ব নেবে। সরকার যদি পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয় তাহলে তিনিও বাংলাদেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে মিয়ানমারমুখী লংমার্চের করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন। সমাবেশ শেষে আন্দরকিল্লা থেকে শুরু হয়ে চট্টগ্রামের প্রেস ক্লাবে গিয়ে শেষ হয় হেফাজতে ইসলামীর মিছিল। সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- হেফাজত ইসলামীর ঢাকা কমিটির নেতা জুনায়েদ আল হাবিব, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সভাপতি মাওলানা সরওয়ার কামালসহ চট্টগ্রাম মহানগর ও উত্তর জেলার নেতারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *