গ্রামে-গঞ্জে খেজুর রস সংগ্রহে গাছিরা ব্যস্ত,

Slider গ্রাম বাংলা

fb_img_1480064142696

এম এ কাহার বকুল, লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ, শীতের খেজুর রসের পিঠা-পায়েস আর খেজুর রস খেতে কার না ভালো লাগে? এক গ্লাস খেজুর রস খেলে মনে হয়, এযেন অমৃত রস খেলাম। প্রাকৃতিক সুমিষ্ট এই রসের জন্য সবাইকে একটি বছর অপেক্ষা করতে হয়। তার পরেও সবারই ভাগ্যে এই রস জোটে না।

রস ব্যবসায়ীরা একটি কলসে পানি আর একটি কলসে রস নিয়ে ভার সাজান। হাড় কাঁপানো শীতের সকালে তারা সেই রসের ভার নিয়ে মানুষের বাড়ী বাড়ী গিয়ে সস্তা দামে তা বিক্রি করেন। খেজুর রস ওয়ালাকে দেখলে শিশু, বৃদ্ধ সকলেই ভীর করে সিরিয়াল ধরে রস নিয়ে খায়। নিমিষেই সেই রস ফুঁড়িয়ে গেলে, রস বঞ্চিতদের যেন আফসোসের শেষ থাকে না।

লালমনিরহাট জেলার পাঁচটি উপজেলায় গ্রাম গুলোতে রয়েছে প্রচুর খেজুর গাছ। প্রতিবছর শীতের মৌসুমের শুরুতে খেজুর রস সংগ্রহ করতে গাছিদের দিয়ে গাছ পরিচর্যা করতে হয়। শীত আসলে খেজুর গাছ বিশেষ কৌশলে চেঁচা ছিলা করতে হয়। একাজে ক্রুটি হলে খেজুর রস সংগ্রহ হবে না। বরং খেজুর গাছ মরে যাওয়ার সম্ভবনা দেখা দেয়। খেজুর গাছ চেঁচা ছিলার কাজে পারদর্শীদের স্থানীয় ভাষায় গাছি বলা হয়। শীত আসছে। তাই খেজুর গাছ হতে রস সংগ্রহের প্রস্তুতি চলছে জোড়েশোড়ে।
জেলা সদরের অদুরে ভাটিবাড়ি গ্রাম। এই গ্রামটিতে কয়েক শতাধিক খেজুর গাছ রয়েছে। খেজুর রসের চাহিদা অনেক। তাই এই রসের আর্থিক মূল্যও অনেক। শীতের সকালে ঠান্ডা খেজুর রস ভোজন পিঁপাসি মানুষের কাছে প্রিয়। খেজুর রসের মিষ্টি সুস্বাদ কে না ভালোবাসে।
তত্বাবধায়ক ফখরুদ্দিন সরকারের আমলে জেলায় শীতের মৌসুমে নিপা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়ে ছিলো। সেই সময় লালমনিরহাট জেলার নানা বয়সের প্রায় ৪২ জন নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। সেই থেকে এই জেলায় খেজুর রস সংগ্রহ করে কাঁচা খেতে মানুষকে নিরুসাহিত করা হয়। তবে খেজুর রস গরম করে পরে ঠান্ডা করে খেলে নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত ঝুঁকি থাকে না। নিপাভাইরাস বাদুরের লালা হতে ছড়ায়। নিপায় আক্রান্ত কোন বাদুর খেজুরের রস খেলে রসে নিপাভাইরাস সংক্রামিত হয়।
তবে আশার কথা গত ৫-৭ বছরে জেলায় শীত মৌসুমে আর কোন নিপা ভাইরাসে আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়নি। কাঁচা খেজুর রসের চাইতে খেজুর রসের জেলী, পাটালি গুড়ের চাহিদা অনেক বেশী জনপ্রিয়। খেজুর রস আগুনে জ্বাল দিয়ে রস ঘন করে গুড় তৈরী করা হয়। এই গুড় দিয়ে সারা বছর মিঠা পায়েশ তৈরী করা যায়। তবে শীত মৌসুমে অগ্রহায়ণ মাসে পুরো দমে নতুন ধান কাঁটা মাড়াইয়ের কাজ শুরু হয়। তখন গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে নানা রকম পিঠা পায়েশ তৈরীর ধুম পড়ে যায়। গ্রামে মানুষ নিজেরাই তৈরী করে খেজুর রস ও খেজুর গুড় দিয়ে পিঠা। সেই পিঠা নিজেরা খায়। অন্য আত্মীয় স্বজনদের খাওয়ায়। অনেকে খেজুর রসের পিঠা আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। গ্রাম বাংলারার ঐতিহ্যের প্রতীক খেজুর গাছের রস আহরণ।

শীতের শুরুতে খেজুর গাছ পরিষ্কার করা হয়। ডালপালা কেটে পরিষ্কার করা হয়। এরর পর কয়েক দফায় খেজুর গাছ চেঁচে ফেলা হয়। তারপর বসানো হয় বাঁশের কঞ্চির নল। এই নল দিয়েই সারারাত ধরে খেজুরগাছ থেকে মাটির হাঁড়িতে ফোঁটায় ফোঁটায় খেজুর রস জমা হয়। পুরো শীতকাল চলবে খেজুর রস সংগ্রহের কাজ। গ্রামে গ্রামে তৈরি হবে খেজুরের গুড় ও পাটালি। রস জ্বালিয়ে ভিজানো পিঠা ও পায়েস খাওয়ার ধুম পড়বে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে। খেজুর রস দিয়ে তৈরী হবে দানা, ঝোলা ও পাটালি গুড়। খেজুর গুড়ের স্বাদ ও ঘ্রাণই একটু আলাদা হয়ে থাকে। রসনা তৃপ্তিতে এর জুড়ি নেই।
কিন্তু আধুনিকতার যুগে সেই আদিম খেজুর গাছ হাড়িয়ে যাচ্ছে। ফলে আমরা হাড়িয়ে ফেলছি প্রাকৃতিক সুস্বাদু খেজুর রস, পিঠা- পায়েস, গুড়। আমাদেরকে এই খেজুর গাছ সংরক্ষণে আরও মনযোগী হওয়া উচিৎ।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *