অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা বন্ধে ব্যর্থ তারানা হালিম

Slider তথ্যপ্রযুক্তি

41501_tarana

 

ঢাকা; অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের অগ্রাধিকার নিজেই ঠিক করে তা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছেন গত বছরের ১৬ই জুলাইয়ে দায়িত্ব নেয়া ডাক ও টেলি যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। তার দায়িত্ব নেয়ার পর সরকারের ডাক ও টেলিকম বিভাগের ওয়েবসাইটে সাত অগ্রাধিকারের মধ্যে অবৈধ ভিওআইপি বন্ধ করাই ছিল অন্যতম।
সরকার প্রধান থেকে অবৈধ ভিওআইপি নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থানের কথা বলা হলেও তারানা হালিম কোনোভাবেই এর লাগাম টানতে পারেননি। উল্টো সরকারের মালিকানায় থাকা মোবাইলফোন অপারেটর টেলিটকের মাধ্যমে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা জিইয়ে রাখতে খোদ প্রতিমন্ত্রী সহায়তা করছেন বলেও বিটিআরসি সূত্র থেকে বলা হচ্ছে । বিটিআরসি’র কাছ থেকে প্রাপ্ত হিসাবে দেখা যাচ্ছে, তারানা হালিম যে সময় টেলিকম প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন সে সময় (জুলাই ২০১৫) দেশে গড়ে প্রতিদিন কল আসতো ১১২ দশমিক ৯৯ মিলিয়ন মিনিট। তার ৯০ দিনের অগ্রাধিকার কর্মসূচির শেষে (অক্টোবর ২০১৫) এর কোনো উন্নতি হয়নি, উল্টো বৈধ কলের সংখ্যা কমে ৮৪ দশমিক ১৮ মিলিয়ন মিনিটে দাঁড়ায়। চলতি বছরের আগস্ট মাসের শেষে এর হিসাব অনুসারে বৈধ কল প্রতিদিন ৭৩ দশমিক ৩০ মিলিয়নে নেমে গেছে।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘কল কমে যাওয়া মানে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। এ রাজস্ব হারানোর কারণ হলো গ্রে কল (অবৈধ কল) বেড়েছে। এটি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চলছে।’
বিটিআরসির নির্দেশনা অনুসারে, অবৈধ ভিওআইপির কাজে কোনো সিম ব্যবহার হওয়ার বিষয়টি চিহ্নিত হলে তা সংশ্লিষ্ট মোবাইলফোন অপারেটরকে চার ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করতে হয়। এ ক্ষেত্রে টেলিটকের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান বিটিআরসি চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ।
এ জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে বিটিআরসি? জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, আমরা নিয়ম অনুযায়ী জরিমানা করি। চলতি বছরের মে মাসে টেলিটক, জিপি ও রবিকে এ জন্য জরিমানা করা হয়েছিল। তবে টেলিটক তাদের জরিমানার টাকা দেয়নি।
বিটিআরসি সূত্র মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৭ই এপ্রিল পর্যন্ত টেলিটকের ১ হাজার ২৫৬টি সিম পাওয়া যায় যেগুলো চার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে অবৈধ ভিওআইপি’র কাজে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে কিছু সিম ৮৪ দিন পর্যন্ত চালু রাখার ঘটনাও পাওয়া গেছে।
বিটিআরসি এ জন্য গত মে মাসে টেলিটককে জরিমানা করেছিল ৫০ লাখ ২৪ হাজার টাকা। তবে প্রতিমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের কারণে বিটিআরসি এখনো এ টাকা হাতে পায়নি।
বিটিআরসি সূত্র মতে, রাষ্ট্রের পাওনা আদায়ের উদ্যোগ নেয়া হলেও প্রতিমন্ত্রী বিষয়টি ‘দেখবেন’ বলে আটকে রেখেছেন। তাই রাষ্ট্র তার প্রাপ্ত অর্থ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বিটিআরসি’র একজন সিনিয়র অফিসিয়াল বলেন, টেলিটক জরিমানার টাকা না দেয়ার কারণে অন্য অপারেটরদের সঙ্গে এক বৈষম্য থেকে যাচ্ছে, যেটি রেগুলেটর হিসেবে বিটিআরসি’র ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
ওই কর্মকর্তা বলছেন, একই সময়ে গ্রামীণফোন ও রবিকে অবৈধ ভিওআইপিতে ব্যবহৃত প্রতিটি সিমের জন্য ৪ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছিল। অপারেটর দুটো তাদের জরিমানা পরিশোধ করলেও টেলিটক তা করেনি, এটা নিয়ে বেসরকারি অপারেটররা প্রশ্নও তুলেছেন।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলছেন, মে মাসে কমিশনের এক সভায় অবৈধ ভিওআইপি কাজে ব্যবহৃত সিম বন্ধের সময়সীমা তারা ৪ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে এখন ২ ঘণ্টা নির্ধারণ করেছেন। কারণ প্রযুক্তি সুবিধা এতটাই সহজ যে, একটি অবৈধ ভিওআইপি কাজে ব্যবহৃত একটি সংযোগ বন্ধ করতে দুই মিনিটের বেশি সময় লাগে না।
জরিমানার পরেও থেমে নেই টেলিটকের অবৈধ ভিওআইপি কাজে ব্যবহৃত সংযোগের পরিমাণ। বিটিআরসি’র হয়ে, ইন্টারন্যাশনাল কল মনিটর করে থাকে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান থ্রিভিআই এবং মিউচি। প্রতিষ্ঠান দু’টির ১০ থেকে ২৩শে আগস্টে প্রদান করা এক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ওই ১৩ দিনে অবৈধ ভিওআইপি কলের ৯৮ শতাংশই টেলিটক নম্বর ব্যবহার করে জেনারেট হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *