হারলেন সাকিবরা

Slider খেলা

 88fa5ec668897b85feb4f0c6893e8f32-rajshahi-kings

চট্টগ্রাম; ১২ বলে ১২ রান দরকার। হাতে ৫ উইকেট। এ অবস্থায় একটি ফলই আপনার ভাবনায় উঁকি দেবে—ব্যাটিং দলের জয়। সেটাই হয়েছে, তবে এভাবে সে জয় আসবে, আশা করেনি রাজশাহী কিংস। পরের ৭ বলে ২ উইকেট হারিয়ে ৩ রান। আবারও শেষ ওভারে হাস্যকর হারের মুখে রাজশাহী! কিন্তু শেষ পর্যন্ত মেহেদী হাসান মিরাজ ও ফরহাদ রেজা দুটি শটে ৩ উইকেটে হারিয়ে দিলেন ঢাকা ডায়নামাইটসকে। ঘাম ঝরিয়েই সহজ ম্যাচটা কঠিন করে জিতল রাজশাহী। অবশ্য ম্যাচটাকে কঠিন থেকে সহজ বানানোর কৃতিত্বও তাদের।
ডিপ মিড উইকেটে নাসির হোসেনের ওই দুর্দান্ত ক্যাচটির পর ম্যাচ যে রাজশাহীর জন্য কঠিন থেকে কঠিনতম হয়ে গিয়েছিল।
মোহাম্মদ শহীদের ওই বলটি মারারই বল ছিল। সাব্বির রহমান মেরেও ছিলেন। কিন্তু অনেকটা দৌড়ে এসে ঝাঁপিয়ে নাসির যে বলটি ধরতে পারবেন, সেটা ভাবতে পারেননি রাজশাহী কিংসের মূল ব্যাটিং ভরসা, বিপিএলের সর্বোচ্চ ইনিংসের মালিক। ওই ক্যাচের পরই মনে হয়েছে ম্যাচটি হয়তো আর জেতা হচ্ছে না রাজশাহীর। ১৮৩ রানের এত বড় লক্ষ্য তাড়া করবেন কে? সাব্বিরই তো নেই!
সাব্বিরের ওই আউট দিয়ে শেষ হলো চতুর্থ ওভার। ব্যাটিংয়ে এলেন সামিত প্যাটেল। অন্যপ্রান্তে মুমিনুল হক। এই জুটি ভাঙল ১০.৩ ওভার পরে। এই ৬৩ বলে ১০০ রানের জুটিতে এই দুজনই ম্যাচটা নিয়ে এলেন রাজশাহীর কাছে। একপ্রান্তে সাবলীল, নিখুঁত সব শট খেললেন মুমিনুল। অন্যপ্রান্তে শক্তির ব্যবহার কীভাবে করতে হয় দেখালেন প্যাটেল।
এই দুজনের ব্যাটিংয়ের সামনে ঢাকার সব পরিকল্পনাই ভেস্তে গেল। গুনে গুনে ৮ জন বোলার ব্যবহার করেছেন ঢাকা অধিনায়ক সাকিব আল হাসান! কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। দুই ব্যাটসম্যানই ধীরে ধীরে বিশাল লক্ষ্যকে নিয়ে এসেছেন হাতের নাগালে। শহীদের বলে আউট হওয়ার আগে মুমিনুল ৪২ বলে করেছেন ৫৬ রান।
আর সাকিবের শেষ ওভারে তৃতীয় ছক্কা করতে গিয়ে আউট হলেন প্যাটেল। ৩৯ বলে ৭৫ রানের ওই ঝড়ে চারের (৫) চেয়ে ছক্কাই (৬) মেরেছেন বেশি। ততক্ষণে ম্যাচ রাজশাহীর পকেটেই। কিন্তু এরপরই শেষ দিকের ব্যাটসম্যানদের বোকামিতে রাজশাহীর সেই হারের শঙ্কায় পড়া। ভাগ্যিস, সঠিক সময়ে ব্যাটিং সামর্থ্যটা দেখালেন মিরাজ ও ফরহাদ।
এর আগে ঢাকা ১৮২ বড় লক্ষ্য দিয়েছে সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা রান পাচ্ছেন না বলে অস্বস্তি ছিল অধিনায়ক সাকিবের। আজ অস্বস্তিটা কিছুটা হলেও কেটেছে ঢাকার। দুই ওপেনার মিলেই ৭১ রান করে ফেললেন। মেহেদী মারুফ নবম ওভারে আউট হলেও অপর প্রান্তে রয়ে গেছেন কুমার সাঙ্গাকারা। গতবারের সর্বোচ্চ স্কোরারের এবারের বিপিএলটা ভালো যাচ্ছিল না। সপ্তম ম্যাচে এসে পেলেন এবারের প্রথম ফিফটি। দুর্দান্ত সব শটে ৩৮ বলে ফিফটি ছোঁয়া ইনিংসটি থেমেছে ৬৬ রানে। ৪৬ বলের ইনিংসে ছিল ৫টি চার ও ৩টি ছক্কা।
তবে এ ইনিংসেও দুবার ভাগ্যের ছোঁয়া পেয়েছেন সাঙ্গাকারা। ৩১ ও ৪৩ রানে দুবার তাঁর ক্যাচ ছেড়েছে সামিত প্যাটেল ও মুমিনুল হক। প্রথমবার দুর্ভাগা বোলারটি ছিলেন আবুল হাসান, দ্বিতীয়বার ড্যারেন স্যামি।
ভাগ্যের ছোঁয়া পেলেন গত ম্যাচে ছক্কার বৃষ্টি নামানো সেকুগে প্রসন্নও। ওই আবুল হাসানের বলেই স্কয়ার লেগে ক্যাচ তুলেছিলেন প্রসন্ন, কিন্তু মুমিনুল সেবারও হাতে জমাতে পারেননি বলে। এর আগে ৮ বলে ১০ রান করা প্রসন্ন শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ১৬ বলে ৩৪ রানে। শেষ ওভারে পর পর দুই বলে ছক্কা মেরে হাসানের জ্বলুনিটা বাড়িয়েছেন প্রসন্ন। অপর প্রান্তে ১২ বলে ১৮ রান করে দলকে ১৮২ রানের স্কোর এনে দিয়েছেন সাকিব।
কিন্তু সেটাই শেষ পর্যন্ত শেষ হলো টান টান উত্তেজনার এক ম্যাচে। এবার জয় রাজশাহীরই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
ঢাকা ডায়নামাইটস: ২০ ওভারে ১৮২/৪ (মারুফ ৩৫, সাঙ্গাকারা ৬৬, মোসাদ্দেক ১৩, প্রসন্ন ৩৪*, কোলস ৮, সাকিব ১৮*; সামি ১/২০, মিরাজ ০/৪৪, প্যাটেল ০/১৭, রেজা ২/২২, হাসান ১/৪৪, স্যামি ০/৩১)।
রাজশাহী কিংস: ১৯.৫ ওভারে ১৮৪/৭ (মুমিনুল ৫৬, জুনায়েদ ৪, সাব্বির ৭, প্যাটেল ৭৫, আকমল ১২, স্যামি ৯, হাসান ৫, মিরাজ ৬*, রেজা ৫*; ব্রাভো ৩/৩৫, শহীদ ২/২৯, সাকিব ১/৩৬, নাসির ০/১০, সানজামুল ০/৯, প্রসন্ন ০/১৭, সোহরাওয়ার্দী ০/১২, কোলস ১/৩৫)।
ফল: রাজশাহী কিংস ৩ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: সামিত প্যাটেল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *