জলবায়ু তহবিলের অর্থ বণ্টনে রোডম্যাপ চেয়েছে বাংলাদেশ

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি ফুলজান বিবির বাংলা

40767_f1

 

ঢাকা; স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জলবায়ু অভিযোজন কার্যক্রমের জন্য বাংলাদেশ শিল্পোন্নত দেশগুলোর কাছে ৬ হাজার ৯শ’ ৭৩ কোটি ডলার দেয়ার প্রস্তাব করেছে। এ অর্থ ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে প্রদান করতে হবে। এ তহবিলে কোন্‌ দেশ কি পরিমাণ অর্থ দেবে তা সুনির্দিষ্ট করতে বাংলাদেশ একটি নতুন রোডম্যাপ চেয়েছে। এই রোডম্যাপে পর্যাপ্ত অর্থ যোগান এবং তা সময়মতো প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করার কথা বলা হচ্ছে। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় বাংলাদেশের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে জলবায়ু উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানে বিশ্বনেতাদের সহায়তা কামনা করা হয়েছে। রাবাত সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। এ সময় জিসিএফ, লস অ্যান্ড ড্যামেজ তহবিল থেকে দ্রুত অর্থায়ন দাবি করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটির সভাপতি ড. হাছান মাহমুদ। এছাড়া, সংবাদ সম্মেলনে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. কামাল উদ্দিন, পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. আইনুন নিশাত প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করছে। বিশেষ করে ২০১৬ সাল বাংলাদেশের জন্য খুবই খারাপ বছর। দেশের প্রধান নদী ব্রহ্মপুত্র বেসিনে এ বছর বন্যা অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ধরলা বেসিনেও এবার বন্যার তীব্রতা লক্ষ্য করা গেছে। অন্যদিকে বর্ষার ভরা মৌসুমে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল খুবই কম। দেশের উত্তরাঞ্চলে খরা অবস্থা বিরাজ করে। ক্রমবর্ধমান লবণাক্ততায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলও বিপর্যস্ত হয়েছে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানোতে। এসব লক্ষণ প্রমাণ করে জলবায়ুর দুর্যোগক্রমেই বাড়ছে। বাংলাদেশ মনে করে, প্যারিস চুক্তির কার্যকর বাস্তবায়নই এই দুর্যোগ রুখতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ খুব স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্যারিস চুক্তি অনুমোদন করেছে। এই চুক্তি অনুমোদনে সদস্য দেশগুলোর স্বতঃস্ফূর্ততায় বাংলাদেশ খুবই খুশি। এ পর্যন্ত ১৯৭টি সদস্য দেশের মধ্যে ১৯১টি দেশ প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে এবং ১১০টি দেশ তা অনুমোদন করেছে। আমরা আশা করছি, খুব শিগগিরই সব দেশ এই চুক্তি অনুমোদন করবে। মন্ত্রী  বলেন, প্যারিস চুক্তিতে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। আমরা চাই-জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়নে প্যারিস রুল বুক তৈরির ব্যাপারে বাস্তব অগ্রগতি। এ ব্যাপারে সমঝোতাকারীদের মধ্যে তাগিদ থাকা প্রয়োজন। আমাদেরকে আগামী দুই বছরের মধ্যে অভিযোজনের রুল বুকও তৈরির কাজ শেষ করতে হবে। তাই এই রুল বুক তৈরির কাজ দ্রুত করা উচিত। এদিকে মারাকাস জলবাযু সম্মেলনের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে এক পর্যালোচনায় বাংলাদেশ বলছে, সবুজ জলবায়ু তহবিল থেকে অর্থ প্রাপ্তি স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য একটি জটিল প্রক্রিয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো এই তহবিল থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ পাচ্ছে না। বাংলাদেশ মনে করছে ভবিষ্যৎ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অর্থায়ন বাড়াতে হলে সবুজ জলবায়ু তহবিলকে আরো সমৃদ্ধ করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ২০২০ সালের মধ্যে তিন বিলিয়ন ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতিকে আইনি বাধ্যবাধকতায় নিয়ে আসারও আহ্বান জানানো হয়েছে। এদিকে মরক্কোর মারাকাসের বাব ইগলিতে অনুষ্ঠিত ২২তম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে অংশগ্রহণ শেষে  দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সকাল সোয়া ৮টার দিকে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ফ্লাইটটি রাজধানীর হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এর আগে বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত সোয়া ৯টার পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-১০২০ ভিভিআইপি ফ্লাইটে মারাকাসের মিনারা বিমানবন্দর ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা সভায় অংশ নেন।
জলবায়ু সম্মেলনে বিদায়ের সুর: বিদায়ের সুর বেজে উঠেছে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে। রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের হাই লেভেল সেগমেন্ট (উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা) শেষের পর এ সুর যেন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। গতকাল সম্মেলন কেন্দ্রের প্যাভেলিয়ন, মিটিং রুম, মিডিয়া রুমসহ সর্বত্র পরিদর্শন করে ভাঙা হাটের চিত্র চোখে পড়েছে। আগে প্রবেশ গেট দিয়ে আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে নিরাপত্তা তল্লাশি শেষ করার পর প্রবেশ করতে হতো। কিন্তু এখন পাঁচ থেকে দশ মিনিটের বেশি লাগছে না। বিভিন্ন দেশের প্যাভেলিয়নগুলো আগে জমজমাট থাকলেও এখন ওই সব প্যাভেলিয়ন দুয়েক জন ছাড়া কাউকে খুব বেশি চোখে পড়ছে না। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মরক্কো থেকে দেশে চলে গেছেন গত ১৬ই নভেম্বর। এরপর থেকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের মূল সদস্য ছাড়া সবাই আছেন পিকনিক মুডে। এদের মধ্যে অনেকেই সাহারা মরুভূমি বা আটলাস মাউন্টেন দেখতে ছুটে গেছেন।
বান কি-মুনের বিদায় সংবর্ধনা: জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল বান কি- মুনের বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করে সিভিল সোসাইটি। গতকাল স্থানীয় সময় সকাল নয়টায় (বাংলাদেশ সময় বেলা তিনটায়) এ সংবর্ধনা দেয়া হয়। এ বছরের শেষদিকে অবসরে যাওয়া জাতিসংঘ মহাসচিব জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার কারণেই তাকে এ সংবর্ধনা দেয়া হয়। এ সংবর্ধনায় পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন, ব্যবসায়ী, স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি ও ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বিদায় সংবর্ধনায় বান কি-মুন বলেন, বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনকে অর্থবহ করতে আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কতটুকু পেরেছি তা সংশ্লিষ্টরা বলতে পারবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *